কোন ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর, এটা নির্ভর করে তার মৃত্যুহারের উপরে।
করোনা ভাইরাসের মৃত্যুহার নিয়ে নানান কলাবিজ্ঞানী সূত্র পাওয়া যায়।
তবে প্রকৃত হিসেবেতারা কেউ যেতে চায় না।
তবে ভাইরাসটি আসলে মহামারী জাতীয় কিছু, নাকি প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার অংশবিশেষ, যা হঠাৎ করে মিডিয়া প্রজেক্টরে বড় করে দেখানোয় আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি কি না, সেটা যাচাই করা দরকার।
কিন্তু সমস্যা হলো- কোন ফিক্সড স্থানে বা ফিক্সড জনসংখ্যায় ভাইরাসটি একবারে আক্রমণ করার খবর বিস্তারিত আসে না, ফলে ভাইরাসটি আসলেই মহামারী না অন্য কিছু সেটা আমরা যাচাই করতে পারি না।
তবে আমি বিষয়টি বিস্তারিত বোঝার জন্য কতগুলো ফিক্সড এলাকা বেছে নিচ্ছি।
(১) ডায়মন্ড প্রিন্সেস : যে জাহাজটিতে করোনা বিস্তারলাভের যথেষ্ট সময় পেয়েছে। ডায়মন্ড প্রিন্সেস এর যাত্রী ও নাবিক-কর্মচারি সংখ্যা টোটাল ছিলো ৩৭০০ এর মত। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৭১২ জন, মারা গেছে ১৩ জন। আক্রান্ত হার ২০% এবং এর মধ্যে মৃত্যুহার ১.৮%। যদিও ডায়মন্ড প্রিন্সেসে মৃতদের গড় বয়স ৭০ বছরের উর্দ্ধে। তাই সেই হিসেব করে বাংলাদেশের মত দেশে দেশে আসলে করোনার মৃত্যু গণনা করা কঠিন। কারণ বাংলাদেশে ৬৫+ বয়সের জনসংখ্যা মাত্র ৬%। তবে সময় পেলেও আসলে করোনা আসলে কতটুকু বিস্তার লাভ করতে পারে (৫ ভাগের ১ ভাগকে আক্রান্ত করেছে) , সেটা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজ থেকে বোঝা সম্ভব।
(২) বাংলাদেশে পুলিশ:
সম্প্রতি আমরা শুনছি করোনায় নাকি বাংলাদেশ পুলিশের ৫ জন মারা গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে পুলিশের জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ।
বাংলাদেশে মৃত্যুহার বছরে হাজারে ৫.৫।
তাই ২ লক্ষ জনসংখ্যার মৃত্যুহার দাড়ায় বছরে ১১০০ জন।
এবং ২ মাসে ২ লক্ষ জনসংখ্যার স্বাভাবিক মৃত্যু দাড়ায় ১৮৩ জন।
যেহেতু পুলিশে চলমান চাকুরীরতদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ নেই, তাই স্বাভাবিক মৃত্যুকে ৩ ভাগের ১ ভাগ করি, তবে ২ লক্ষ পুলিশে ২ মাসে স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার কথা ৬১ জন। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১ জন পুলিশের মৃত্যু হয়।
এখন কথা হচ্ছে, হঠাৎ করে করোনায় মৃত্যুতে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান ঘোষণার সাথে ৫ জনের মৃত্যুর খবরের কোন যোজসাজস থাকতে পারে, অথবা ঐ পুলিশরা কোন রোগেই এমনিতেই মারা যেতো, কিন্তু মৃত্যুর আগে যেহেতু মানুষের ইম্যুউনি সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ে, তাই ঐ সময়ও তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারে, যখন এমনিতেই সাধারণ ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
(৩) ভারতের ধারাবি বস্তি:
ভারতের ধারাবি বস্তিতে করোনার খবর খুব প্রচার হচ্ছে। ধারাবি বস্তিতে এই পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। ধারাবি বস্তির জনসংখ্যা ১০ লক্ষের মত। ভারতের মৃত্যুহার বছরে হাজারে ৭ জন্। তাহলে ১০ লক্ষ লোকের ২ মাসে স্বাভাবিক মৃত্যু হবে ১১৬৬ জনের। যেহেতু এরকম জনবসতি পূর্ণযায়গা গুলোতে কথিত সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এবং আইসোলেশন, কোয়ারাইন্টোইন কিছুই করা সম্ভব না। তাই আতঙ্কবাদীদের দৃষ্টিতেই করোনা সেখানে বিস্তারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। তাই এ ধরনের বদ্ধ এলাকায় স্বাভাবিক মৃত্যুর হিসেবে করোনায় মৃত্যুর দুর্বল (মাত্র ১৪ জন) হিসেব প্রশ্ন তুলে, আসলেই কি করোনা কোন মহামারী ? আর যে ১৪ জনের মৃত্যু হলো, এরা কি আদৌ করোনায় মারা গেছে, নাকি স্বাভাবিক ১১৬৬ জনের যে মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যুর আগে করোনায় ধরেছে ?
(৪) জেনেভা ক্যাম্প:
রাজধানী ঢাকার জেনেভা ক্যাম্প গত ৩ সপ্তাহে ১৩ জনের মৃত্যু নিয়ে আজকে দেখলাম বিডিনিউজ ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। জেনেভা ক্যাম্পের অফিসিয়াল জনসংখ্যা বলা হয় ৫০ হাজারের মত। বাংলাদেশে মৃত্যুহার ৫.৫ ধরে জেনেভা ক্যাম্পে ৩ সপ্তাহে স্বাভাবিক মৃত্যু হবে ১৭ জনের। সেখানে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিডিনিউজের আতঙ্কবাদীরা যেভাবে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব শুরু করেছে, তা সত্যিই আশ্চর্যজনক বিষয়। উল্লেখ্য, খবরে দেয়া তথ্য মোতাবেক জেনেভা ক্যাম্পে ২ জন সনাক্ত এবং ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। (https://bit.ly/2Wix8Gy)
আসলে আবদ্ধ বা ফিক্সড জনসংখ্যার কথাগুলো এ কারণে আনলাম, যেহেতু তাদের দৃষ্টিতেই করোনা ভাইরাস তখন বিস্তার লাভের অবাধ সুযোগ পায়। এবং সেই সুযোগে আসলে করোনা ভাইরাস কতটুকু মৃত্যু ঘটাতে পারে বা কতোটা বিস্তার লাভ করতে পারে, সেটা সহজে বোঝা সম্ভব। এবং সেটা তুলনা করেই বলা সম্ভব, আসলেই কি করোনা মহামারী গোছের কিছু, নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু প্রক্রিয়ার অংশবিশেষ, বিষয়টি মিডিয়ায় আতঙ্ক ছাড়া কিছু নয়।