‘সোশ্যাল ডিসটেন্স’ ও ‘লক ডাউন’ আসলে কাদের জন্য কার্যকর ?
অনেকে বলেছে, “আপনি যদি ‘সোশ্যাল ডিসটেন্স’ ও লক ডাউনের বিরুদ্ধে বলেন, তবে এগুলোর বিকল্প কি ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, “যারা অসুস্থ শুধু তারা মুখে মাস্ক পড়বেন, সবার পরার দরকার নাই।”
আবার অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভুল মাস্ক পরার কারণে অনেকের ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
লক্ষণীয় হলো, সতর্কতা ভালো, কিন্তু অনেক সতর্কতা ভালোর পরিবর্তে উল্টো খারাপ ডেকে আনতে পারে।
ঠিক, মুখে মাস্ক এর মতই বলতে, আসলে ‘সোশ্যাল ডিসটেন্স’টা কাদের জন্য দরকার ?
সোশ্যাল ডিসটেন্সটা তাদের জন্যই দরকার, যাদের কোভিড-১৯ আক্রমণে মৃত্যুঝুকি বেশি।
এক্ষেত্রে ইতালি বা অন্য দেশগুলোর ডাটা বলছে, মৃত্যুঝুকি বেশি যারা বৃদ্ধ এবং অন্য ক্রোনিক রোগে ভালোভাবে আক্রান্ত।
যারা অতি বৃদ্ধি আছে বা অন্য ক্রোনিক অধিক আক্রান্ত, এই লোকগুলোকে ঘরে আলাদা করে রাখুন। তাদেরকে সোশ্যাল ডিসটেন্স পালন করার জন্য চাপ দিন, সচেতনতা বাড়ান। কিন্তু তাদের না দিয়ে সব লোককে তো ঘরে আটকা রাখা, লক ডাউন তো ভুল সিস্টেম।
ভুল সিস্টেম বলছি, কারণ-
১) যাদের বয়স কম, তাদের ইমিউনি সিস্টেম ভালো। তারা যদি আক্রান্ত হয়, তবে সেটা খারাপ নয়,বরং ভালো। কারণ তাদের যে ইমিউনি সিস্টেম ডেভেলপ করবে, সেটা উল্টো করোনা ভাইরাস কিল করবে। এটা দরকার।
২) যদি খুব দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন বা এন্টি ভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কারও হয় (যদিও তার সম্ভবনা নেই), তবে সেটা বৃদ্ধ বা অসুস্থরা গ্রহণ করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ ভ্যাকসিন অধিকাংশ সময় বৃদ্ধদের উপর কাজ করে না, এবং অসুস্থ( কিডনী/লিভার/হার্টের রুগী) অনেক ওষুধ নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে কম বয়স্কদের ভ্যাকসিন দিয়ে তাদের হার্ড ইমিউনিটি এচিভ করে, সেটা দিয়েই ভাইরাস দূর করে বৃদ্ধদের বাচাতে হয়। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে হার্ড ইমিউনিটির দিকেই যেতে হবে।
৩) ইউরোপ-আমেরিকা কিন্তু লক ডাউন দিয়েছে, সোশ্যাল ডিসটেন্স পালন করেছে, কিন্তু তারা কিন্তু মহামারী থেকে বাচতে পারেনি। আবার অনেক দেশে লক ডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্স ঠিক মত পালন না করেও এখন মহামারী হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, লক ডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্স পালন করলেই যে করোনা হবে না, বিষয়টি কিন্তু মোটেও প্রমাণিত নয়।
৪) বাংলাদেশে যেটা হইছে, এটা আসলে লক ডাউন না, শ্যাট ডাউন। সব বন্ধ হইছে, কিন্তু পুরো দেশের জনসংখ্যার মধ্যে নাড়াচাড়া লাগছে। লকডাউনের মূল থিউরী হইলো- কোন যায়গায় ভাইরাস পাইলে সে স্থানটা বন্ধ করে দেয়া, যেন বাইরে থেকে কেউ না আসে এবং ভেতর থেকে কেউ বাইরে না যায়। থিউরীটা হইলো- ভেতরে সবাই ভাইরাস আক্রান্ত হউক। যে সব বাসা বা এলাকায় করোনা রুগি পাওয়া গেছে ঐ বাসাটা লক ডাউন দিছে, প্রশাসন। কেউ ঢুকতেও পারছে না, আবার বের হতেও পারছে না। এটা হইছে প্রকৃত লক ডাউন। কিন্তু ঘটনা হইলো- যে বাড়ি বা এলাকাগুলোতে লক ডাউন দিয়ে, সেখানে তো প্রচুর মানুষ অসুস্থ হওয়ার কথা এবং মারা যাওয়ার কথা। ঘটনা কি তেমন ঘটছে। যদি নাই ঘটে, তবে পাইলট প্রকল্পেই তো লক ডাউনের কার্যকর দেখা যাচ্ছে না, তাহলে বৃহৎ লক ডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্সের কি গুরুত্ব থাকতে পারে ?
আসলে করোনা নিয়ে ভুল-ভাল আতঙ্কিত হওয়া যাবে, কিন্তু আপনাকে আসতে হবে সিস্টেম মতই।
আপনি ঘরের কোনে লুকিয়ে থাকতে পারেন, সেটা ১ মাস, ২ মাস, ৩ মাস। কিন্তু একটা সময় তো বের হবেনই। কিংবা আপনি যাদের সাথে বসবাস করেন, তারও হয়ত বের হবে। তখন আপনাকে ভাইরাস তো ধরবেই। তখন কি করবেন ??
আবার ভাইরাসকে যতই ভয় পান, ভাইরাস মারবে কিন্তু আপনার ইমিউন সিস্টেমই। আপনি হাজার চেষ্টা করেও তাকে মারতে পারবেন না।
তাই ভুল পলিসিতে না এগিয়ে সঠিক পলিসিতে এগোন। বৃদ্ধ বা অসুস্থ (কিডনী, লিভার, হার্টের রোগী)-দের পৃথক রাখুন, তাদের কোয়ারেন্টাইন করুন। আর বাকিদের দিয়ে হার্ড ইমিউনিটি এচিভ করুন। এবং সেটা শীত আসার আগেই করুন। যা আসতে আর মাত্র ৫-৬ মাস আছে। কারণ তখন করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের কম তাপমাত্রার ফ্যাক্টরটা কাজে লাগাতে পারে।