করোনা দমনে ইউরোপ-আমেরিকার অন্ধ অনুকরণ কি আমাদের ক্ষতি ডেকে আনছে না লাভ ডেকে আনছে ??


t2u AoSpousponsorrmrieldn
 
করোনা দমনে ইউরোপ-আমেরিকার অন্ধ অনুকরণ কি আমাদের ক্ষতি ডেকে আনছে না লাভ ডেকে আনছে ??
করোনা ভাইরাস বর্তমানে কেন বাংলাদেশে দুর্বল অবস্থানে আছে, এর পেছনে ৪টি ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে-
১) তাপমাত্রা। ভাইরাসটি প্রথমেই বাংলাদেশের অধিক তাপমাত্রা খানিকরটা দুর্বল হয়ে যায়।
২) বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম। আমি প্রথম দিকেই বলেছিলাম, করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ক্ষতি করবে না, এর কারণ হিসেবে বলেছিলাম- বাংলাদেশের মানুষ হলো দেশী মুরগী, আর ইউরোপ-আমেরিকানরা হলো ফার্মের মুরগী। এটা দ্বারা আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম, বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম অনেকের তুলনায় ডেভেলপড। বিষয়টির সত্যতা আমরা দেখি গ্রামের বাচ্চা আর শহরের বাচ্চাদের মধ্যে। গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারা ল্যাংটা-খালি গায়ে হয়ে সারাদিন কাদা মাটির মধ্যে বসে থাকে, রোদে পোড়ে। অপরদিকে শহরের বাচ্চাদের কত প্যাকেট করে রাখে, সারা দিন স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে রাখে। যদি একটু ঠাণ্ডা মেঝেতে হাটে পরের দিন কাশী-সর্দি শুরু হয়ে যায়। মাসে দুইবার ডাক্তার দেখায়। দেখা যায়, গ্রামের বাচ্চাগুলো যখন বড় হয়, তখন তাদের ওসুখ বিসুখও কম হয় আবার অনেকের কোন রোগ হইলে ওষুধ ছাড়াই রোগ সেরে যায়। অপরদিকে শহরের বাচ্চাগুলো বড় হইলেও মুড়ির মত ওষুধ খাওয়া বাড়তে থাকে। এর কারণ হইলো- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম। গ্রামের বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম ভালো, সেটাই রোগ দমন করে, আর শহরের বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, ফলে তারা ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়ে। আমার মনে হয়, এ অঞ্চলের মানুষগুলো ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় জীবনমাত্রার মানের কারণেই বেশি প্রাকৃতিক বা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম সবল। ফলে তাপমাত্রায় দুর্বল হওয়া ভাইরাসটিকে এবার সহ্য করতে হয় অধিক শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম, ফলে সে দ্বিতীয়ধাপে বাধাগ্রস্ত হয় বা প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
৩) তরুণ প্রজন্মের অত্যাধিকতা। বাংলাদেশে শিশু ও তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। জেনারেশন-জেড এর অত্যাধিকতার জন্য বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের নজরে আছে। এই যে তরুণ প্রজন্মে অত্যাধিকতা, এটা কিন্তু একটা বড় ফ্যাক্টর। কারণ তরুণ প্রজন্মের উপর যখন ভাইরাসটি এ্যাটাক করবে, তখন তাদের শরীরের ক্ষতির বদলে উল্টো দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাচ্ছে এবং সবার মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি দিয়ে উল্টো ভাইরাসটি ধ্বংষ হচ্ছে। এই তৃতীয় ফ্যাক্টরটির কারণে ভাইরাসটি আরেক ধাপ বাধার সম্মুক্ষীন হচ্ছে।
৪) বাংলাদেশে বয়স্ক মানুষের (৬৫+) সংখ্যা কম, মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬%, যা ইতালিতে ২৬% বা আমেরিকায় ১৩%, ব্রিটেনে ১৮% এর মত। অর্থাৎ ভাইরাসটি যাদের জন্য ক্ষতিকর তাদের সংখ্যাই কম। ফলে তিনটি ধাপ পার হয়ে দুর্বল হওয়া ভাইরাসটিকে এবার ৪র্থ ফ্যাক্টরের সম্মুক্ষিণ হতে হয়, ফলে স্বভাবতই ক্ষতি কম হয়।
এই চারটি ধাপে বাধার সম্মুক্ষিন হয়ে ভাইরাসটি ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশে অত ক্ষতি করতে সম্মুক্ষিণ হয় না।
এখানে আমার মনে হয়, আরো কিছু কথা বলা জরুরী-
ক) অনেকে হার্ড ইমিউনিটি সিস্টেমের কথা শুনলেই অনেকে হাসি ঠাট্টা করে। বলে নিয়তির উপর ছেড়ে দিলেন? আবার বলে- “ব্রিটেন পারে নি, বাংলাদেশ কিভাবে পারবে ?”
আসলে যারা এগুলো বলে, আমার মনে হয় তারা ভ্যাকসিন বা ওষুধের উপর ভরসা রাখলেও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমের উপর ভরসা রাখতে পারে না, যদিও সৃষ্টির শুরু থেকেই এভাবে করেই কোটি কোটি রোগ দমন করে যাচ্ছে আমাদের শরীর।
ভ্যাকসিন জিনিসটা কি ?
যদি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন হয়, তবে সেই ভ্যাকসিনটা হলো আসলে নিজেই একটা করোনা ভাইরাস। কিন্তু সেটা মিউট করা বা ক্ষতি করতে পারবে না। সেই ভাইরাসটি শরীরের মধ্যে ঢুকে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে জাগ্রত করবে। যখন জাগ্রত হয়ে যাবে, তখন যদি সত্যিই বাইরে থেকে করোনা ভাইরাস বাইরে থেকে আসে, তখন সেটা শরীরই তা প্রতিরোধ করবে। তবে এই ভ্যাকসিন তৈরী সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, করোনা ভাইরাসের আগের যে স্ট্রেইনগুলোর আছে, যুগ পার হয়ে গেলেও সেগুলোরই এখনও ভ্যাকসিন তৈরী হয়নি, ফলে কোভিড-১৯ এর খুব শিঘ্রই ভ্যাকসিন তৈরী হয়ে যাবে, এটা আজগুবি চিন্তা।
ওষুধ কি?
কিছু ওষুধ দিয়ে রোগের লক্ষণ চেপে রাখা যায়, কিন্তু রোগ দমন করা যায় না, রোগ দমন করতে হয় রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম দিয়েই। আবার এন্টি ভাইরাল ড্রাগও এখনও নিশ্চিত কিছু হয়নি, ট্রায়ালে আছে। তবে কোনটাই শিওর না। হলে সেগুলো সময় সাপেক্ষ বা বছরের ব্যাপার। যা খুব শিগ্রই আসছে না। একটা খবরে দেখলাম- অনেকগুলো ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে, কিন্তু করোনা যাদের ক্ষতি করে বেশি, মানে বৃদ্ধ ও অন্য রোগে আক্রান্ত, তাদের শরীরেই তা ঠিক মত কাজ করে না।
মানে আপনাকে ভরসা করতে হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমের উপরই। তার মর্জি অনুসারেই সে দমন করবে, ভ্যাকসিন বা ওষুধ কিন্তু তা দমন করতে পারবে না বা পারছে না।
কথা হচ্ছে, ব্রিটেন হার্ড ইমিউনিটি সিস্টেম চেয়েও পরে কেন ফিরে আসলো বা ক্ষতির সম্মুক্ষিন হলো, এর উত্তর হতে পারে উপরের ৪টি ফ্যাক্টর। আমাদের যে ফ্যাক্টরগুলো আছে ব্রিটেনের সেগুলো নেই। ফলে তারা সেসব ফ্যাক্টরের সুবিধা পায়নি, এতে তারা হার্ড ইমিউনিটির কথা বলেও সেখান থেকে সুবিধাও নিতে পারেনি। তাই ব্রিটেন পারেনি, বলে আমরা পারবো না, এটা ভুল কথা।
সোশ্যাল ডিসটেন্স কতটুকু কার্যকর ?
সোশ্যাল ডিসটেন্স ৩টি ফ্যাক্টরের সাথে সম্পৃক্ত-
এক, কম মেশামেশি করা,
দুই, রোগী চিহ্নিত করতে সুবিধা হওয়ার কথা বলা,
তিন, চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া/দেয়া।
এই তিনটি বিষয়ের কথা যদি চিন্তা করেন, মানে কম মেশামেশি করা- ইউরোপ-আমিরকানদের জনসংখ্যা আমাদের তুলনায় অনেক নগন্য, ঘনত্ব কম, আমাদের মত এক বিছানায় হয়ত ৫-৬ ভাইবোনের ঘুমানোর অভিজ্ঞতাও তাদের কম। তাদের মেশামেশি অনেক কম। এরপরও এই ৩-৬ ফুট দূরত্বের সিস্টেমগুলো আগেই চালু হইছে (ঘনত্ব কমের কারণে এমনিতেই সবাই ১০-২০ ফুট দূরে থাকে), কিন্তু এটা দিয়ে কিন্তু তারা করোনা দমন করতে পারে নাই। বরং বৃদ্ধি পেতেই আছে।
এরপর তাদের চিহ্নিত করার পলিসি ভালো ও অধিক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের তুলনায় নিঃসন্দেহে ভালো। তারপরও তারা কিন্তু ক্ষতির হার কমাতে পারছে না। ব্রিটেনের রানী থেকে শুরু করে সব ভিআইপি পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। তারমানে দেখা যাচ্ছে, যে ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে আমরা সোশ্যাল ডিসটেন্সের উপর জোর দিচ্ছি, আসলে এটা তাদের এলাকাইতে মোটেও কার্যকর হয়নি। কম মেশামেশি করা, চিহ্নিত করার সুযোগ এবং চিকিৎসা দেয়া এই তিনটি দিয়ে তারা সফল হতে পারেনি, ফলে সোশ্যাল ডিসটেন্সের বিষয়টি তাদের দেশেই প্রশ্নবিদ্ধ।
আর তাছাড়া আপনি ২১ দিন বন্ধ রাখলেন, তারপর ছাড়লেন, তখন তো অনেকেই ভাইরাসবাহী থাকতে পারে, তখন তো সে ঠিকই ছড়াবে, তখন কি করবেন ? আবার সব বন্ধ করবেন ? তাহলে ২১ দিন বন্ধ রাখা কিভাবে সমাধান হয় ?
তবে আমার সর্বশেষ কথা হচ্ছে, আমরা ৪টা ফ্যাক্টরের সুবিধা নিবো না কেন ?
আমরা কেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগ্রত করে দুর্বলতর ভাইরাসটিকে দমন করবো না ??
মানে এখন আমাদের এলাকায় তাপমাত্রা বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবে ভাইরাসটি এক ধাপে বাধার সম্মুক্ষিণ। তার এই বাধাগ্রস্ত অবস্থার সময়ই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম ডেভেলপ করে তা দমন করে ফেলাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। সেটা না করে আমরা যদি ইউরোপ-আমেরিকাকে অন্ধ অনুকরণ করে সব বন্ধ করে রাখি, তবে বিষয়টি কেমন হচ্ছে ? কারণ আজ থেকে ৫ মাস পর কিন্তু বাংলাদেশে শীত শুরু হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশে অনেক এলাকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যাবে। এই ৫ মাসের আগেই যদি আমরা হার্ড ইমিউন ডেভেলপ করে ভাইরাস নিমূর্ল করতে পারি, সেটাই তো ভালো। কিন্তু সেটাতে যদি আমরা বাধা দেই, সময় ক্ষেপন করি, তখন কিন্তু ভাইরাসটি শীত পেয়ে যাবে, ফলে কম তাপমাত্রায় শক্তিশালী হয়ে যেতে পারে, তখন কিন্তু ক্ষতি আরো বেশি হওয়ার সম্ভবনা বেশি। আর তাছাড়া সব কিছু বন্ধ করার ফলে বাংলাদেশে দরিদ্রতা দেখা দিয়েছে, এতে মানুষ সুষম খাদ্য তো দূরের কথা, ঠিকমত খাবারই পচ্ছে না, এতে পুষ্টিহীনতা স্বাভাবিক। আর পুষ্টিহীনতা মানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়া। ফলে আমাদের শরীরের মধ্যে যে সিস্টেমটা প্রকৃতপক্ষেই ভাইরাসের বিপক্ষে ফাইট করবে, আমরা সব কিছু বন্ধ করে সেটাকেই দুর্বূল করে দিচ্ছি। করোনায় বৃদ্ধদের মৃত্যুর মূল কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে, আমরা তো না খেতে দিয়ে শিশু-যুবকদেরই দুর্বল করে দিচ্ছি। ফলে ভাইরাস যদি অ্যাটাক শুরু করে, তখন তো ক্ষতি আরো বেশি হবে। তাই্ ইউরোপ-আমেরিকাকে অন্ধের মত অনুসরণ করে আমরা নিজেদের ক্ষতি করছি, না লাভ করছি, সেটা আগে চিন্তা করা দরকার।