করোনার জন্য বাংলাদেশকে কার সাথে তুলনা করতে হবে ?

করোনার জন্য বাংলাদেশকে কার সাথে তুলনা করতে হবে ?
অনেকেই করোনা ভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করতেই ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনের প্রসঙ্গ টেনে আসছেন।
বার বার বলছেন- “সেখানে যেমন হইছে, বাংলাদেশেও তেমন হবে।”
তাদের দেশেও অমুক দিনে ওত রোগী ছিলো, বাংলাদেশেও অমুক দিনে তত রোগী হবে।
আসলে এই ব্যাখ্যার মধ্যে একটা গোলোযোগ আছে। গোলোযোগটা হলো- তারা পুরো পৃথিবীকে এক ধরে ব্যাখ্যা করেছে, তাই তাদের হিসেব কখনই মিলবে না এবং তা বিজ্ঞানভিত্তিক নয় বরং আবেগ নির্ভর।
একটা উদহারণ দিলে বুঝতে পারবেন-
ক্লাস ১ থেকে ৫ পর্যন্ত হচ্ছে প্রাথমিক, আর ক্লাস ৬ থেকে ১০ পর্যন্ত বলা হচ্ছে মাধ্যমিক।
এই যে একটা ভাগ, এখানে শিক্ষার্থীদের ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগের মধ্যে তাদের যেমন আচরণে পরিবর্তন আছে, ঠিক তেমনি পড়ালেখার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আছে। দুই বিভাগকে মিলিয়ে কিন্তু একই ধাচের সিলেবাস দেয়া হচ্ছে না।
ঠিক তেমন করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এমন ভাগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা ভাইরাসটির দুটি অবস্থান ধরতে পারি-
১) পরিবেশে বা মানব শরীরের বাইরে।
২) মানব শরীরের ভেতরে।
প্রথমত-
গত সাড়ে ৪ মাসে ভাইরাসটির আচরণ বলে দিচ্ছে,
করোনা ভাইরাসের আক্রমনটা আসলে কিভাবে হয়েছে এবং হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরাই বলছে- করোনা ভাইরাসের আক্রমণটা আসলে ৩০ ডিগ্রি ল্যাটিচিউডের (অক্ষাংশের) উপরে। এবং ৩০-৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত হচ্ছে তার হটস্পট। আর ৩০ ডিগ্রির নিচের দেশগুলো কিন্তু তেমন ক্ষতিগ্রস্ত নয়। এবং এটা হচ্ছে পরিবেশের আবহাওয়াগত পার্থকের কারণেই। (https://bit.ly/2RaTR5x)
বিষয়টি আপনি নিজেই পরীক্ষা করতে পারেন। (https://bit.ly/349IqjH) এই ওয়েবসাইটে গিয়ে করোনা ভাইরাসের মৃতের সংখ্যার দেশগুলোর ল্যাটিচিউড দেখবেন। হিসেব করে দেখবেন এখন পর্যন্ত মোট মৃতের ৯৮% হচ্ছে ৩০ ডিগ্রির উপরে। তারমানে বোঝা যাচ্ছে- পরিবেশগত কারণেই ৩০ ডিগ্রির উপর আর নিচের হিসেব এক হচ্ছে না, বিরাট পার্থক্য হচ্ছে। তাহলে আপনি কিভাবে ৩০ ডিগ্রির উপরের ইতালি-আমেরিকার সাথে ২৩ ডিগ্রির বাংলাদেশকে মিলান ?
৩০ ডিগ্রির নিচের দেশগুলোর সাথে মিলাতে পারেন, কিন্তু উপরের দেশগুলো কোনভাবেই মিলতে পারে না।
দ্বিতীয় হলো- মানব শরীর।
মানব শরীরে ইতালিতে যেমন আচরণ করেছে, বাংলাদেশেও তেমন আচরণ করবে, এটা ভাবা আসলে বিজ্ঞানভিত্তিক কোন কথা না।
এ সম্পর্কে ভাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে
“শুধু ভাইরাস নয়, যিনি ভাইরাসটি বহন করছেন তার কথাও বিবেচনা করতে হবে। সেটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, "একটা ভাইরাস আছে সেটা আফ্রিকানদের যখন আক্রান্ত করে তখন তাদের এক ধরনের ক্যান্সার হয়, একটা লিম্ফোমা হয় । আর সেই ভাইরাসটিই যখন চীনাদের ইনফেক্ট করে - তখন তাদের নেজো-ফেরেঞ্জিয়াল কার্সিনোমা হয়। যারা ইনফেকটেড হয় তাদের জীনগত বিষয়টাও দেখতে হবে। একটা দেশের মানুষজনের জীনগত বৈশিষ্ট্যের উপরেও অনেক সময় রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্পর্ক থাকে।"
কোভিড-১৯ সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছের রাষ্ট্র ভারতের গবেষকদের দাবী হলো- ইতালিতে ভাইরাসটি যেমন আচরণ করছে, ভারতীয়দের শরীরে তেমন আচরণ করছে না, বরং ভিন্ন আচরণ করছে। এ সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ’র বক্তব্য হলো- “ইতালিতে এ ভাইরাসের আরএনএতে তিনটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হয়েছে। আর এর ফলে এটি মানুষের জন্য আরও মারাত্মক হয়ে পড়েছে। কিন্তু ভারতে ছড়িয়েছে, তখন এর জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়েছে। ভারতের ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানবশরীরের কোষে সংযুক্ত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে কম যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ, এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। (https://bit.ly/2UFRKsp)
তারমানে ইতালিতে ভাইরাসটি মানব শরীরের সংযুক্ত হওয়ার সময় যেমন আচরণ করছে, ভারত উপমহাদেশে তেমন আচরণ করছে না, দুর্বলতর আচরণ করছে। তাহলে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে আপনি ইতালির সাথে বাংলাদেশের তুলনা করতে পারেন ?
আপনি কি ভয় পাচ্ছেন ? করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে নাকি করোনায় মৃত্যুকে ??
একটি বিষয় আমাদের বুঝতে হবে, আমরা কোন কোনটা ভয় পাচ্ছি?
করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে নাকি করোনায় মৃত্যুকে ?
করোনা ভাইরাস নিয়ে এত আলোচনার মূল কারণ হলো তার মৃত্যু হার সাধারণ ফ্লু এর থেকে তুলনামূলক বেশি বলে। কিন্তু করোনার কারণে যে শারীরিক লক্ষণ গুলো হয় (জ্বর, সর্দি, কাশী বা গলাব্যাথ্যা), সেটা নিয়ে কিন্তু ভয় করা হচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে করোনায় আতঙ্কটা বেশি হয়ে গেছে। মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন ভয় পেয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসে মানুষ অনেক আক্রান্ত হয়েছে, এটা কোন সমস্যা না। সমস্যাটা হলো মানুষ কত মানুষ মারা গেছে সেটা। ৩০ ডিগ্রি ল্যাটিচিউডের নিচের দেশগুলোতে অনেক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে (তবুও তা ৩০ ডিগ্রির উপরের মত না), কিন্তু সেটা মহামারী আকার ধারণ করছে না, যেমনটা ৩০ ডিগ্রির উপরের করেছে।
মহামারী কাকে বলে ?
কোন নির্দ্দিষ্ট সময় ও নির্দ্দিষ্ট এলাকায় অনেক লোকের মৃত্যু হলে তাকে মহামারী বলে।
এখানে লক্ষণীয় জিনিস হলো সময় ও স্থান। ইউরোপ আমেরিকায় একটি এলাকাতে এক সাথে অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেক লোক মৃত্যুবরণ করছে। আমেরিকাতে অনেক এলাকায় লরির ভেতর লাশ বহন করার জন্য ক্রেন ব্যবহার করতে হচ্ছে। চীনে যখন মারা যাওয়া শুরু করলো তখন অনেক লাশ একসাথে পোড়ানোর কারণে স্যাটেলাইট থেকে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের আস্তরণ দেখা গেলো। কথা হচ্ছে- বাংলাদেশে তো আরো ঘন বসতি। বাংলাদেশে যদি সত্যিই মহামারী হতো, তবে আপনাকে গুগলে সার্চ দিয়ে খবর পড়তে হতো না, আপনার আশেপাশের বাসায় শত শত লোকের মৃত্যুর খবর পেতেন। এত মানুষ এক সাথে অসুস্থ হতো যে হাহাকার পড়ে যেতো। এখন যে ২-১টা বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর আসছে, এর দ্বারা প্রমাণ হয়, বাংলাদেশে রোগটি ওদের মত মহামারী হতে পারে নাই বা কোন কারণে হচ্ছে না। তাই ইতালি-আমেরিকাকে দেখে করোনা নিয়ে আসলেই অতি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।