আজকে নাকি জাহানারা ইমামের জন্মবাষির্কী, এ উপলক্ষে কয়েকটা কথা না বললেই না।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধটা ছিলো বেসিক্যালী পূর্ব পাকিস্তানী বাঙালী সেনাদের সামরিক অভ্যূথান। এবং সেটাতে ফোর্স দিতো সোভিয়েত ব্লক। অপরদিকে রিপাবলিকান ব্লক ছিলো পাকিস্তানের পক্ষে এবং ডেমোক্র্যাটিক ব্লক ছিলো (দৃশ্যত্ব) বাংলাদেশের পক্ষে। তবে ডেমোক্র্যাটিক ব্লক মুক্তিযুদ্ধের কৃতত্বটা সোভিয়েতদের ঘর থেকে নিয়ে নিজের ঘরে দেখাতে চায়। এজন্য তারা মুক্তিযুদ্ধতে সেনাবাহিনীর কৃতিত্বটা আড়াল করে সিভিলিয়ানদের কৃতত্বটা বেশি হাইলাইট করে। সেই হাইলাইট করতে ব্যবহৃত একটি চরিত্রের নাম হলো রুমি। এবং সেই রুমির মা হলো জাহানারা ইমাম।
আজকে বাংলাদেশে যে ‘স্বাধীনতা চেতনা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ কথা আমরা শুনি তার বাস্তবতা কতটুকু মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলো সেটা ঐতিহাসিকভাবে পর্যালোচনার বিষয়। আমি সে তর্কে যাবো না। তবে প্রকৃত সত্য হলো এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রথম শুরু করেছিলো কিন্তু এই জাহানারা ইমাম। ১৯৯২ সালে গণআদালত প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাদের বিচার দাবী তার সেই শুরুটা হয়। ১৯৯৪ তে তার মৃত্যুর পর, তার বানানো সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নাটক, সিনেমা আর গল্পের মাধ্যমে চাষবাস করে বড় করে ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের লেখক হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালরা। তার সেই চেতনার উপর ভিত্তি করে ২০১৩ সালে ডেমোক্র্যাটিক ব্লক সদস্যরা শাহবাগে তৈরী করে গণজাগরণ মঞ্চ।
এ পর্যন্ত ইতিহাসে আমার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হলো ২০১৩ সালেই সেই গণজাগরণ মঞ্চ করে ডেমোক্র্যাটিক ব্লকরা যখন বিরাট একটা চেতনা তৈরী করে, ঠিক তখন সেটাকে হ্যাইজ্যাক করে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ ডেমোক্র্যাটিকদের বানানো এতদিনের চেতনার চালকের আসনে বসে সেখান থেকে ফায়দা নেয়া শুরু করে এবং ঐ মঞ্চ থেকেই ডেমোক্র্যাটিকদের ঘাড় ধরে ভাগিয়ে দেয়। ঐ সময় এত কষ্টের জিনিস হারিয়ে রাগে দুঃখে কান্নাকাটি করে অনেক ডেমোক্র্যাটিক ব্লক সদস্য। পরবর্তীতে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অতিরিক্ত চেপে বারোটা বাজিয়ে দেয় আওয়ামীলীগ। ফলে এখন পাবলিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলেই গালাগালি করে।
যাই হোক, এত আলোচনা-সমালোচনা করলাম, কারণ-
সম্প্রতি করোনা নিয়ে একই ইতিহাসের পুরনাবৃত্তি দেখলাম। বাংলাদেশে করোনা ভীতি প্রাথমিক সূচনা কিন্তু করেছিলো ডেমোক্র্যাটিক ব্লক সদস্যরা, মিডিয়া ও ফেসবুকে। কিন্তু পরবর্তীতে সেটাকে হাইজ্যাক করে আওয়ামীলীগ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা শুরু করে। ১ মাস আগে আমি এক পোস্টে বলেছিলাম- “কারা বাড়া ভাত কে খায় ?”। ঘটনাক্রমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মত করোনাকেও এমনভাবে চাপাচাপি করতেছে, ঠিক যেভাব লেবুকে বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়। কয়েকদিন পর দেখবেন, করোনার চেতনারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মত হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে যেমন পাবলিক গালাগালি করে, ঠিক তেমনি করোনা/লকডাউন এগুলো শুনলেও পাবলিক গালাগালি করে মারতে আসবে।