ভারতে দেওবন্দ প্রতিষ্ঠাকালে অলঙ্ঘনীয় যে ‘উসূলে হাশতেগানা’ তথা আট মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়, তার অন্যতম একটি হলো ‘যে কোন পরিস্থিতিতে সরকারী অনুদান গ্রহণ করা যাবে না”।
কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে আমি কথা বলে জেনেছি, তারা আলিয়া মাদ্রাসাকে খারাপ চোখে দেখে,
কারণ তাদের ভাষায়, আলিয়া মাদ্রাসাগুলো নাকি সরকারি সাহায্য গ্রহণ করতে করতে ‘দরবারী আলেম’ হয়ে যায়, আর দরকারী আলেম আর থাকতে পারে না।
খবরে দেখলাম-
প্রায় ৭ হাজার কওমী মাদ্রাসাকে সোয়া ৮ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী।
গড় হিসেব করলে হয়ত প্রতি মাদ্রাসায় মাত্র ১১ হাজার টাকা করে হবে।
কিন্তু এই হিসেব করে লাভ নেই।
বরং কওমী মাদ্রাসায় কতগুলো মাথা বা নেতা আছে,
(যাদের ঠাণ্ডা রাখলে গোয়েন্দা তথ্য মোতাবেক হয়ত পুরো কওমী মাদ্রাসাকেই ঠাণ্ডা রাখা সম্ভব)
তাদের হিসেব করে দিলে হয়ত টাকার পরিমাণ জনপ্রতি ১০-২০ লাখও হতে পারে।
একটি কথা না বললেই নয়-
বর্তমান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী কিছু কওমী আলেমদের প্রায়ই সরকারী কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে,
মাঝেমাঝেই সরকারী নির্দেশনার পক্ষে বিভিন্ন ফতওয়া জোগার করে নিচ্ছেন,
এটা নিয়ে কিনতু অনেক সমালোচনা হয়।
এমনকি কওমী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দানের পর থেকে কওমী মাদ্রাসাগুলো আগের মত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না, এমন কথাও শোনা যায়।
এটা যে বাইরের লোকের কথা, তা নয়।
খোদ কওমী মাদ্রাসার অনেক সিনিয়রের (যারা সরকারী অনুষ্ঠানে যাতায়াত করেন না), তাদের রেফারেন্সেই এসব কথা শুনেছি।
এরমধ্যে নতুন করে অনুদানের বিষয়টি সমালোচনাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
একজন মনিষী বলেছিলেন-
“শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই কথা বলতে পারে,
যে নিজের মাথার ভয় না করে, আর টাকার লোভ না করে।”
শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কওমী মাদ্রাসাগুলোর পুরাতন ঐতিহ্য ও সততা,এটা মানতেই হবে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কওমী মাদ্রাসার নেতৃবৃন্দ নিজেদের পূর্বেকার সততা ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। দেশের জনগণ সেটাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করছে।