t
2lgo2dSh poAnspgorfriesldo ·
প্রসঙ্গ: আব্দুর নূর তুষারের স্ট্যাটাস,
কথার চাতুরতা দিয়ে টিভিতে উপস্থাপনা করা যায়, কিন্তু ডাক্তারি করা যায় কি ?
যারা কথার চাতুরতা দিয়ে মানুষ ভুলাতে পারেন, তাদের নাকি বিভিন্ন টিভি শোতে উপস্থাপক হিসেবে বাছাই করা হয়। ছোটবেলায় শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে আমার আব্দুর নূর তুষারকে দেখে এমনই মনে হতো। কিন্তু তিনি সেই কথার চাতুরতা দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানকেও ঘুড়ানোর চেষ্টা করবেন, সেটা আমি ভাবতে পারিনি।
গতকাল তিনি এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন (https://bit.ly/3amumot, http://archive.is/crkAq), যার শিরোনাম-
“আসুন মহামারিকালে একটু পড়াশোনা করি।”
আমার মনে হয়, উনারও স্ট্যাটাসটি লেখার আগে একটু পড়াশোনা করে আসা উচিত ছিলো।
কারণ তিনি হিসেব করেছেন, করোনার হার্ড ইম্যুনিটির জন্য ৮০% লোককে ইম্যুনাইজড হতে হবে।
অথচ gavi বলছে করোনার সংক্রমনের রেট অন্য রোগের তুলনায় কম হওয়ায় তার জন্য ৬০% লোককে ইম্যুনাইজড হতে হবে।
অতিরিক্ত ২০% একটি বিরাট ফ্যাক্টর, ডাক্তার হিসেবে আব্দুর নূর তুষারের এত বড় ভুল করা উচিত হয় নাই।
এরপর আব্দুর নূর তুষার বলেছেন, কোভিড-১৯ এ ১% লোক যদি মারা যায়, ইতালিতে ৩%, সারা দুনিয়াতে ৭%।
আসলে ডাক্তার হিসেবে আব্দুর নূর তুষারের কাছে এ ধরনের লেখা মানানসই নয়।
কারণ তিনি এই ১%, ৩%, ৭% দিয়ে কি বুঝাচ্ছেন ?
কেইস ফ্যাটালিটি রেট বুঝাচ্ছেন ? (সনাক্তদের মৃত্যুহার)
নাকি ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট বুঝাচ্ছেন ? (আক্রান্তদের মৃত্যুহার)
যে কোন প্যানডেমিক এর ক্ষেত্রে কেইস ফ্যাটালিটি রেট (তিনি যেটা ব্যবহার করেছেন) দিয়ে কখনই ঐ রোগের ভয়াবহতা প্রমাণ করা যায় না।
যেমন গতকালকে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টিতে এন্টিবডি স্টেস্ট করে দেখা গেছে, সনাক্তের তুলনায় আক্রান্তের হার ৫৫ গুন বেশি, কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়া বা মৃদু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় তা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। (https://cnb.cx/2yzlRsY)
এই অবস্থায় তিনি কেইস ফ্যাটালিটি রেট দিয়ে কিভাবে মৃত্যুর মোট হিসেবে উপর ঐকিক নিয়ম করে ভবিষ্যতবাণী করলেন ১৩ লক্ষ ২০ হাজার লোক মারা যাবে। এটা তো তিনি জ্যোতিষিদের মত কাজ করলেন, ডাক্তার হিসেবে তার উচিত ছিলো ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেটের উপর কথা বলা।
আব্দুর নূর তুষার আরো বললেন-
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আক্রান্তরা সুস্থ হলে তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরী হবার কোন প্রমাণ তারা পান নাই। ফলে সবাইকে আক্রান্ত করে দিলে হার্ড ইম্যুনিটি হবে তার কোন ভিত্তি নাই।”
আব্দুর নূর তুষার এই অংশটুকু পড়ে আমি অবাক হলাম, মানুষ কত বড় চিটার আর মিথ্যাবাদী হতে পারে। তিনি হু’র যে কনফারেন্সের যে নিউজ লিঙ্ক শেয়ার করেছে, তার বিবৃতির পুরোটা সিএনবিসিতে দেখলাম (https://cnb.cx/3eKi7FC https://youtu.be/oZOMt-KESq8), সেখানে এ ধরনের কিছু বলা হয়নি যে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে মানব শরীরে ইম্যুনিটি ডেভেলপ করতেছে না কিংবা এন্টিবডি তৈরী হচ্ছে না। বরং এটা বলা হয়েছে, এন্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে (এন্টিবডির উপস্থিতি/পরিমাণ দেখে) এটা বুঝা যায় না, একটা লোক ইম্যুনাইজড হয়েছে কি না বরং এটা বুঝা যায় সে ১-২ সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছিলো কি না।
আসলে পশ্চিমা দেশগুলোতে এন্টিবডি টেস্ট করে ইম্যুনিটি পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট দেয়ার একটা আলোচনা উঠায়, তার বিরুদ্ধচারণ করে হু এ ধরনের বিবৃতি দেয়। কিন্তু এর সাথে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে শরীরে ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাচ্ছে না’ কিংবা ‘হার্ড ইম্যুনিটি এচিভ সম্ভব হবে না’, এধরনের কোন বক্তব্যই সেখানে নেই। কিন্তু আব্দুর নূর তুষার এন্টিবডির টেস্টের সীমাবদ্ধতাকে গায়ের জোরে করোনার বিরুদ্ধে ইম্যুনিটি ডেভেলপ ও একধাপ এগিয়ে এন্টিবডি তৈরী হওয়ার বিরুদ্ধে বানিয়ে বিরাট আজগুবি গল্প ফাঁদলেন, যা সত্যিই লজ্জাজনক।
আব্দুর নূর তুষার তার লেখার শেষে গিয়ে ভ্যাকসিন কোম্পানির বিজ্ঞাপন করে লিখেছেন-
“টিকা না আসলে আর কোন উপায় নাই।”
আব্দুর নূর তুষারের কথা অনুসারে, ন্যাচারাল ইনফেকশনেই যদি দীর্ঘমেয়াদী রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরী না হয়, তবে ভ্যাকসিন দিয়ে হবে কিভাবে?
তাহলে তো টিকা আসলেও কোন উপায় নেই।
তার স্ট্যাটাসের মধ্যেই তো তিনি দ্বিচারি অজ্ঞতাসূচক কথা দিয়ে রেখেছেন।
এরপর আব্দুর নূর তুষার বলেছেন,
“কিছু কিছু দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞ বলার চেষ্টা করছেন সবাই আক্রান্ত হলে হার্ড ইম্যুনিটি হবে। এটাও কেবল ধারণাপ্রসূত ডিম্ব প্রসব। এর কোন গবেষণামূলক তথ্যভিত্তিক প্রমাণ নাই।”
আমি জানি না, আব্দুর নূর তুষার কত বড় মাপের ডাক্তার।
এবং কাদেরকে তিনি ডিম্ব প্রসবকারী ডাক্তার বলে হেয় করছেন ?
১) পৃথিবীর অন্যতম সিনিয়র এপিডেমিওলজিস্ট, সুইডিশ সরকারের উপদেষ্টা, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিস প্রিভেনশন এবং কন্ট্রোল এর প্রথম প্রধান বিজ্ঞানী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেলের উপদেষ্টা অধ্যাপক জোহান জিসেককে, যে করোনার ক্ষেত্রে হার্ড ইম্যুনিটির ক্ষেত্রে আশাবাদি, তাকে কি তিনি ডিম্ব প্রসবকারী বিশেষজ্ঞ বলতে চাইছেন ? (https://bit.ly/3atSINr)
২) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব পরিসংখ্যান, মহামারিতত্ত্ব এবং গবেষণা ডিজাইন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. নুট উইটকাওস্কি, যিনি হার্ড ইম্যুনিটির একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছেন, তাকেও কি ডিম্ব পাড়া ডাক্তার মনে করছেন ? (https://bit.ly/2VoPd6v)
৩) আমেরিকার কানেকটিকাটের Yale-Griffin Prevention Research Center এর ফাউন্ডিং ডিরেক্টর Dr. David Katz যে করোনার ভাইরাসের সমাধান হার্ড ইম্যুনিটি বলতেছে, তাকেও কি তার কাছে ডিম্ব টাইপের ডাক্তার মনে করছেন ? (https://fxn.ws/3auVNwu)
এরপর তিনি বলেছেন-
“যদি পৃথিবীর সকলে দুই মাস একসাথে সম্পুর্ণ সামাজিক দূরত্ব রাখতে পারতো তবে এই ভাইরাস যাদের শরীরে আছে তাহলে তাদের শরীর থেকে আর অন্য কারো শরীরে যেতো না। যারা মরতো তারা মরতো, যারা বাঁচতো তারা বাঁচতো। ভাইরাস আর নতুন হোস্ট বডি না পেলে নিজে থেকে মানব শরীর হতে বিদায় নিতো। ”
ভাইরাস দূর করার এমন আজগুবি থিউরী এর আগে কোন বিজ্ঞানী প্রতিষ্ঠা করে নোবেল পেয়েছিলো কি না, তা আমার জানা নাই।
কারণ আপনি ২ মাস পৃথিবীর সব লোককে বন্দি করলেন, কিন্তু আপনার ঘরের ৫ সদস্যের মধ্যে ভাইরাস ঘুরতে ২ মাস ৫ দিন লাগলো (জন প্রতি ১৩ দিন ধরলে)। ফলে ২ মাস পর যখন লকডাউন খোলা হলো, তখন ভাইরাস ঠিকই তার গতিতে কাজ শুরু করলো, অর্থাৎ ২ মাস পৃথিবীর সব লোককে বসিয়ে রাখলেন ফাউ।
তবে আব্দুর নূর তুষার তার স্ট্যাটাসের শেষে “অর্থনীতিকে বায়বীয়” বলায় আমি আসলে কষ্টই পেয়েছি। কারণ এই লকডাউনের কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে, তাতে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট করছে, অনেকে না খেতে পেয়ে আত্মহত্যা করছে, মানুষ রাস্তায় কান্নাকাটি করছে,তিনি সেটাকে হেয় করেছেন, ‘বায়বীয়’ বলে হাস্যরসের উপাদান বানিয়েছেন, বাড়িতে খাদ্য/টাকা মজুদ করে যারা গরীবের কষ্ট নিয়ে হেয় করে, তাদের কথা শুনলে সত্যিই কষ্ট লাগে।