শীতপ্রধান দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বেশি ঝুঁকিতে, আমরা গরমের দেশ বলে ঝুঁকি কম

 

আজকে দৈনিক প্রথম আলোতে রুমি আহমেদ খান নামক এক বাংলাদেশী ডাক্তারের সাক্ষাতকার ছাপা হয়েছে, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত আছে। প্রথম আলোর প্রশ্ন ও তার উত্তর ছিলো-
প্রথম আলো: শীতপ্রধান দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বেশি ঝুঁকিতে, আমরা গরমের দেশ বলে ঝুঁকি কম? আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বলেছেন।
রুমি আহমেদ খান: শীতের সঙ্গে সম্পর্ক একটা আছে। বেশি শীতে এটা বেশি ছড়ায়। এবং গরম আবহাওয়ায় এটা হয়তো শীতের মতো বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু এটা অত্যন্ত সংক্রামক। তাই অল্প সময়ে বেঁচে থাকার সামান্য সুযোগ পেলেই এরা মানবদেহকে সংক্রমিত করে ফেলে। মানবদেহে ঢোকার পরে তারা একই তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে। কারণ, সব আবহাওয়ায় মানবদেহের তাপমাত্রা সমান। তাই গরম বলেই এটা বাড়বে না, তা বলা যাবে না। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গরম মিয়ামিতে। প্রায় একই রকম লুইজিয়ানায়। এই এলাকা দুটি যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ানকভাবে আক্রান্ত এলাকাগুলোর অন্যতম। সিঙ্গাপুরও ঠান্ডার দেশ নয়। মিয়ামিতে আজই (সোমবার) ১ হাজার ব্যক্তির পজিটিভ ফল এসেছে।”
আমি জানি না, ফ্লোরিডা প্রবাসী ঐ ডাক্তার বাংলাদেশের তাপমাত্রা সম্পর্কে কতটুকু জানেন।
তারপরও তার কথা মিলিয়ে নিচ্ছি।
গুগল বলছে-
আজকে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অপরদিকে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে আজকের তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে পুরো মার্চে তাদের তাপমাত্রা ১৯-২৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘুড়াঘুরি করেছে।
অপরদিকে লুইজিয়ানার (যেখানে অনেক লোক করোনায় মারা গেছে) নিউওরলিন্সের আজকের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মার্চ জুড়ে তাদের তাপমাত্রা ১০ থেকে ২৩ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করেছে।
আবার সে সিঙ্গাপুরের কথা টেনেছে। সিঙ্গাপুরের সাথে চীনের ব্যবসায়ীক আনাগোনা বেশি থাকায়, শুরু থেকেই সিঙ্গাপুরে ভাইরাসটি প্রবেশ করেছে। আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিন্তু সিঙ্গাপুরে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩ জন। অর্থাৎ “গরমের দেশ হলেও সে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত” সেই হিসেবটাও কিন্তু মিলছে না।
“তাপামাত্রা বেশি হওয়ায় শীতের দেশের মত ক্ষতি হবে না”- রুমি আহমেদ খান যে তিনটি এলাকার উদাহরণ (মিয়ামি, লুইজিয়ানা এবং সিঙ্গাপুর) টেনে বিষয়টি খণ্ডানোর চেষ্টা করলেন, তার একটির হিসেবও কিন্তু ঠিকমত মিললো না। তিনি এই ভুল উদাহরণগুলো কি জেনে করলেন, না না জেনে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য করলেন, তা বোঝা গেলো না।
উল্লেখ্যে এর আগেও দৈনিক প্রথম আলো একই বিষয় খণ্ডানোর চেষ্টা করেছে চীনের গুয়াংজি প্রদেশ এবং সিঙ্গাপুরের ভুয়া উদাহরণ টেনে। যা আগেই আমি স্ট্যাটাস দিয়ে খণ্ডানোর চেষ্টা করেছি (https://bit.ly/3bM3iQR)।
আরো উল্লেখ্য, আজকে আরেকটি খবরে এসেছে-
ইতালির ইউনিউভার্সিটি অব বলোনিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিকেল সায়েন্সের প্রফেসর ড. মারিনা টাডোলিনি বলেছে, গ্রীষ্মকালীন দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থা হয়তো ইতালি বা ইউরোপের মতো ভয়াবহ হবে না। বাংলাদেশে গরমের কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই কম হবে বলে মনে করেন তিনি। ১০-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ ভাইরাস তুলনামূলক বেশি ছড়ায় বলে মনে করেন ড. মারিনা। (https://bit.ly/2yqqCVT)