অনেকের ধারণা লকডাউন-সোশ্যাল ডিসটেন্স করোনা দমন করতে পারে

 

1omuatS4 pohApnriismorelSdde
 
অনেকের ধারণা লকডাউন-সোশ্যাল ডিসটেন্স করোনা দমন করতে পারে, ভাইরাস মারতে পারে। আসলে এগুলো সঠিক নয়। লকডাউন বা স্যোশাল ডিসটেন্স করোনা মারতে পারে, এমন কথা এখন পর্যন্ত কোন সাইন্টিফিক রিসার্চে প্রমাণিত নয় ।
লকডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্স কিভাবে কাজ করে, সেটা আগে সবার জানার দরকার। ছবিতে দেখুন- লাল যে অশটুকু, যখন সোশ্যাল ডিসটেন্স বা লক ডাউন হবে না, তখন আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে এবং দ্রুত নেমে যাবে।
অপরদিকে যদি আপনি সোশ্যাল ডিসটেন্স বা লকডাউন করে সবাইকে বন্দি করে রাখেন, তবে (নীল অংশ) সেটা একটা নির্দ্দিষ্ট মাত্রায় উঠবে, কিন্তু অনেক দূর ছড়িয়ে যাবে।
অর্থাৎ আক্রান্ত যারা হওয়ার তারা হবেই, কিন্তু লকডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্স দিয়ে সেটার গতি হ্রাস করে দীর্ঘায়িত যাবে, কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু হবে না।
এবার আসি, লকডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্স করে গ্রাফের কার্ভ খাটো করে দীর্ঘায়িত করা আমাদের জন্য ভালো হচ্ছে না খাবার হচ্ছে, এ কথায়। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব পরিসংখ্যান, মহামারিতত্ত্ব এবং গবেষণা ডিজাইন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নুট ভিটকস্কির বক্তব্য নিয়ে। সম্প্রতি এক প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন-
“যদি আমরা জনগণকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দিতাম এবং বিপদ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত সবচেয়ে অসুস্থদের সহায়তা দিয়ে যেতাম তাহলেই বরং করোনাভাইরাসকে নির্মুল করা যেত।
তিনি বলেন, 'লোকে যা করছে তা হলো বক্ররেখাটিকে (ছবিতে) সমতল করার চেষ্টা। আমি ঠিক জানিনা কেন এমনটা করা হচ্ছে। কিন্তু যখন আপনি বক্ররেখাকে সমতল করেন তখন আসলে আপনি একে প্রশস্ত করার জন্য দীর্ঘায়িতও করেন। আর একটা শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগকে বিনা কারণে জণগনের মধ্যে দীর্ঘায়িত করার কোনো মানে হয় না।'
এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, 'শ্বাসযন্ত্রজনিত সব রোগের ক্ষেত্রে একটা কথা সত্য যে এই রোগকে থামানোর একমাত্র উপায় হলো হার্ড ইমুউনিটি সৃষ্টি করা। জনগণের ৮০ শতাংশ মানুষকেই এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে দেওয়া উচিত, যাতে করে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষেরই কিছু হয় না। বিশেষ করে শিশুদের এই ভাইরাসে কিছুই হয় না। সুতরাং স্কুলগুলো খুলে দেওয়া উচিত এবং বাচ্চাদের সামাজিক মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া উচিত, যাতে এই ভাইরাস সবার মধ্যে ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং দ্রুত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমুউনিটি গড়ে উঠতে পারে। তবে এই সময়টাতে বয়স্কদেরকে বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। এভাবে অন্তত চার সপ্তাহ বয়স্কদের আলাদা করে রাখতে হবে। চার সপ্তাহ পর বয়স্করা বাচ্চাদের কাছে আসতে পারবে। ততদিনে বাচ্চাদের দেহের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমুউনিটি ক্ষমতা গড়ে উঠবে এবং ভাইরাসটি নির্মুল হয়ে যাবে।'
নুট ভিটকৌস্কি আরো বলেন, 'শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের মহামারির ক্ষেত্রে সময় লাগে মাত্র দুই সপ্তাহ। দুই সপ্তাহেই তা শীর্ষে ওঠে এবং এরপরই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তাকে যদি আটকে রাখা হয় তখন তা আরো দীর্ঘায়িত হয়। যতই সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হোক না কেন, আপনি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারবেন না। এমনকি পাড়া প্রতিবেশি, যারা মালামাল ডেলিভারি দেয়, যারা চিকিৎসক- এদের মধ্যেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বেই। তিনি বলেন, মানুষ মূলত সামাজিক জীব। সামাজিক দূরত্ব এবং লকডাউনের সময়ও তাদের অন্যের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। যা থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিন্তু এভাবে ভাইরাসটি নির্মূল হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কেননা এভাবে এর বিরুদ্ধে গণ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতেও অনেক সময় লাগবে। আমরা ভাইরাসটিকে লকডাউন দিয়ে যতদিন আটকে রাখব ততদিনই সেটি আমাদের মাঝে আটকে থাকবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি ভাইরাসটিকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যেতে দেব তত তাড়াতাড়িই এর বিরুদ্ধে হার্ড ইমুউনিটি ক্ষমতা তৈরি হবে এবং ভাইরাসটি ধংস হবে।' (https://bit.ly/2V5ZsMT)
মূল সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে ১২.৫০ সময়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন চায়না এবং সাউথ কোরিয়া করোনা মহামারীকে দমন করতে পেরেছে। তিনি দলিল দিয়ে দেখিয়েছেন, চায়না বা সাউথ কোরিয়াতে যখন ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছিলো, তখন তারা স্কুলগুলো খোলা রেখেছিলো, সোশ্যাল ডিসটেন্স চালু করেনি এবং বাচ্চাদের আক্রান্ত হতে দিচ্ছিলো। যখন বাচ্চারা ভাইরাসের মুখোমুখী হলো, তারপর তারা সোশ্যাল ডিসটেনসিং চালু করলো। এতে কম বয়স্কদের মধ্যে যে হার্ড ইম্যুনিটি তৈরী হলো, তার মাধ্যমে তারা মহামারী দমন করতে পারলো।
Image may contain: text