কিছু কথা ও তার জবাব -
১) কথা- “মোদিকে দাওয়াত দেয়া হয় নাই, দাওয়াত দেয়া হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে।”
জবাব- অর্থাৎ আপনি বলতে চাচ্ছেন, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো- জনগণ ও সরকার। বাংলাদেশের প্রায় সব জনগণ ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তথা মোদির আসার বিরুদ্ধে, আর সরকারও যে ব্যক্তি মোদিকে পছন্দ করে না, তা উপরক্ত ‘কথা’ থেকেও বোঝা যায়। যেহেতু ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল দুটি উপাদান অর্থাৎ জনগণ ও সরকার উভয়ই পছন্দ করে না, সেহেতু মোদির দাওয়াত রাষ্ট্রীয়ভাবে হয় কিভাবে ? মোদি দাওয়াত তো তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে হয় নাই, হয়েছে কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিগতভাবে, কিন্ত সেটা মিথ্যা বলে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে পুরো রাষ্ট্রের উপর। যেহেতু দাওয়াত ব্যক্তি বা দলীয় পর্যায় থেকে হয়েছে, তাই রাষ্ট্রীয় আপত্তির দোহাই দিয়ে দাওয়াত ক্যান্সেল করতেও কোন সমস্যা হওয়ার কারণ দেখি না।
২) কথা- “মোদিকে দাওয়াত দেয়া হয়ে গেছে। একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে দাওয়াত দিয়ে সেটা ফিরিয়ে নেয়া কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিরুদ্ধ”।
জবাব-
প্রথম উত্তর হচ্ছে- ধরুন আপনি হিটলারকে দাওয়াত দিলেন, কিন্তু হিটলার তখনও গণহত্যা শুরু করে নাই। গণহত্যার পর সে আপনার বাসায় আসবে। তখনও কি দাওয়াত অব্যাহত রাখবেন ? নাকি দাওয়াত ফিরিয়ে নিবেন??
এর দ্বিতীয় উত্তর হচ্ছে- ২০১৮ এর শুরুর দিকে ট্রাম্প নাগরিকত্ব আইন পাশ করে। সেটা নিয়ে ব্রিটেনে তুমুল বির্তক হয়। ঐ সময় ব্রিটেনে ট্রাম্পের দাওয়াতে আসার কথা। কিন্তু ঐ সময় ব্রিটেনের জনগণের তীব্র প্রতিবাদের কারণে ট্রাম্প তার সফর পেছাতে বাধ্য হয় এবং প্রায় দেড় বছর লেট করে। সে ব্রিটেনে আসে ২০১৯ এর মাঝামাঝি। শুধু নাগরিকত্ব আইন পাশ করার কারণে ট্রাম্পকে ব্রিটেন সফর দেড় বছর পেছাতে হলো, আর মোদি নাগরিকত্ব আইন পাশ করে, আবার গণহত্যা চালায় মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে চায়, এর থেকে নিলর্জ্জ অবস্থান আর কি হতে পারে??
এর তৃতীয় উত্তর হচ্ছে-
-মোদি গণহত্যা করতে লজ্জা পায় না, আর আপনি দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জা পান !
-মোদি নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশের নাম দিতে লজ্জা পায় না, আর আপনি মোদির দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জ পান !!
- মোদি বাংলাদেশকে মিথ্যা সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করতে লজ্জা পায় না, আর আপনি মোদির দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জা পান !!!
- মোদির দলের লোক সকাল-বিকাল বাংলাদেশ দখলের হুমকি দিতে লজ্জা পায় না, আর আপনারা মোদি দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জা পান !!!!
এত লজ্জা নিয়ে আপনারা থাকেন কিভাবে ?
-মোদি গণহত্যা করতে লজ্জা পায় না, আর আপনি দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জা পান !
-মোদি নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশের নাম দিতে লজ্জা পায় না, আর আপনি মোদির দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জ পান !!
- মোদি বাংলাদেশকে মিথ্যা সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করতে লজ্জা পায় না, আর আপনি মোদির দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জা পান !!!
- মোদির দলের লোক সকাল-বিকাল বাংলাদেশ দখলের হুমকি দিতে লজ্জা পায় না, আর আপনারা মোদি দাওয়াত ক্যান্সেল করতে লজ্জা পান !!!!
এত লজ্জা নিয়ে আপনারা থাকেন কিভাবে ?
৩) কথা- “সিরিয়াতে মুসলমান মরছে, সেটার দিকে না তাকিয়ে ভারতের দিকে কেন তাকানো হয় ?”
জবাব- আসলে সিরিয়াতে যে সংঘর্ষ হয়, সেগুলো হলো স্বার্থগত বিষয়। সেখানে ধর্মীয় কোন ইস্যুতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে না। কিন্তু ভারতে যে ঘটনা ঘটছে সেটা শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে গণহত্যার শিকার হওয়া। এমনকি সংখ্যালঘুও এক্ষেত্রে বলা যায় না, কারণ শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা জৈন এর মত অন্য সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা আক্রমণের শিকার হচ্ছে না। হচ্ছে শুধু মুসলমানরা। অর্থাৎ পুরো বিষয়টি ইসলামবিদ্বেষ বা ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা। শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এই গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে সারা বিশ্বের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা এর প্রতিবাদ করেছে, তাই অন্য কোন ঘটনার সাথে তুলনা করে বিষয়বস্তু ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা মোটেও যুক্তিযুক্ত হবে না।
৪) কথা- বঙ্গবন্ধুকে ভারত বিরাট সংবর্ধণা দিয়েছিলো, মোদিকে দিতে সমস্যা কোথায় ?
জবাব- আসলে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দিয়েছিলো কংগ্রেস, যারা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সোভিয়েত ব্লকের ছিলো। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী সেটা সবার জানা। তাই সংবর্ধনা দেয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু ঐ সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো রিপাবলিকান ব্লকরা এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জড়িত ছিলো রিপাবলিকান ব্লক। এবং মোদি হচ্ছে সেই রিপাবলিকান ব্লকের সদস্য। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ব্লকের সদস্য আনা হচ্ছে, যা খুবই বোকার মত একটি বিষয়।