বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস RNA-ভাইরাস নয়, MDA-ভাইরাস – ২

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস RNA-ভাইরাস নয়, MDA-ভাইরাস – ২
(প্রথম পর্বের পর)
একটা প্রশ্ন সবার মনে জাগতে পারে, বাংলাদেশে করোনার বিষয়টি যে মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত সেটা অনেক রাজনৈতিক নেতা বুঝতেই পারে, তবে প্রকাশ্যে বলে না কেন ?
আমি কাউকে কাউকে দেখেছি, বলতে চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের কথাগুলো মিডিয়াতে এমনভাবে প্রকাশ করা হয়, যেন তারা হাস্যরসে পরিণত হয়। পাবলিশ স্যোশাল মিডিয়াতে তাদের গালি দেয়। আবার তারাও ডাইরেক্ট ডেমোক্র্যাটিক মিডিয়াকে দোষারোপ করতে চায় না। কারণ মিডিয়া হইলো প্রচারের মাধ্যম। আবার মিডিয়া বৈদেশিক নিয়ন্ত্রিত বুদ্ধিতে হওয়ায় তাদের পলিসি দেশীয় রাজনৈতিক নেতাদের তুলনায় শক্তিশালী। তাই তাদের সাথে ডাইরেক্ট দ্বন্দ্বে গিয়ে দেশীয় ব্যক্তিরা পারবে না। তাছাড়া তারা তো রাজনীতি করে, প্রচার-প্রসার তাদের দরকার। মিডিয়া যদি শত্রু হয়ে যায়, তখন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।
করোনা ইস্যুতে একই রকম অবস্থা ছিলো বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতাদের। আমি ধর্মীয় নেতাদের অবজ্ঞা করার জন্য বলছি না, তারা রাজনৈতিক নেতাদের মত ডাইরেক্ট মিডিয়ার বিরুদ্ধে যেতে চায় না, কোন ইস্যু আসলেই ডেমোক্র্যাটিক ব্লক ইস্যুর সাথে মিলায় চলতে চায়। এতে সুফল হইলো- যেহেতু মর্ডান মুসলমানরা মিডিয়া দ্বারা পরিচালিত, তাই তাদের প্রচার-প্রসার বেশি হয়। অপরদিকে মিডিয়ার বিপক্ষে না যাওয়ায় মিডিয়াও তার শত্রু হয় না। আবার মিডিয়া বা সেক্যুলারদের রিসার্চ বেশি হওয়ায়, তাদের সাথে হঠাৎ কোন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়, ফলে অনেকেই তাদের সাথে দ্বন্দ্বে যেতে চায় না।
এই জন্য করোনার মত ইস্যুতে আমার কাছে মনে হয়েছে, অনেক ধর্মবেত্তা ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের পক্ষেই বরং ফতওয়া জোগার করে দিয়েছে। কিন্তু তিনি যেই ফতওয়া দিয়েছেন, সেটা ক্রিটিকাল সিচ্যুয়েশনের ফতওয়া। তিনি হয়ত এটা বুঝতে পারেননি, মুসলিম দেশগুলোতে সেই ক্রিটিকাল সিচ্যুয়েশনটা মিডিয়ার তৈরী, কিন্তু বাস্তবে সেই সিচ্যুয়েশনটা এখন হয় নাই। কিন্তু তিনি মিডিয়ার কৃত্তিম ক্রিটিকাল সিচ্যুয়েশন দেখেই আশ্বস্ত হয়ে সেই অনুসারে ফতওয়া দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মিডিয়ার কন্সপিরাসি ধরে প্রকৃত বাস্তবতার আলোকে ফতওয়া দেয়া দরকার ছিলো। ধর্মীয় বেত্তারা ডেমোক্র্যাটিক মিডিয়ার কন্সপিরাসি ধরতে পারেনি বিধায় সাধারণ জনগণও বিভ্রান্ত হয়েছে। তবে তাদের এতটুকু বুঝা দরকার ছিলো, মিডিয়া মুসলমানদের পক্ষে নয়। প্রথম দিকে কিন্তু এটা অনেকে বলেছে, “চীনে মসজিদ বন্ধ করছে দেখে আল্লাহ’র গজব নামছে”। আর শেষে দেখা গেলো, ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়া ধর্মবেত্তার কাধ চড়ে কৃত্তিম ভীতি তৈরী করে মুসলিম দেশে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাহলে কাজ দুই দেশে একই হয়ে গেলো না ?
এবার যদি ডাক্তারদের কথায় আসি, অনেকে বলেন- “ডাক্তাররা কি বলছেন, সেই অনুসারে রাষ্ট্রকে ডিসিশন নিতে হবে।”
এটা ভুল কথা। কারণ একজন ব্যক্তি যখন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যায়, তখন ডাক্তার তাকে অনেক পরামর্শ দেয়, ঐ ব্যক্তি কিন্তু ডাক্তারের সব পরামর্শ ফলো করতে পারে না। এমনকি ব্যক্তি ডাক্তারও নিজের চিকিৎসা বিদ্যার সব পলিসি ফলো করতে পারেন না। কারণ একটা মানুষ শুধু চিকিৎসা বিদ্যার উপর চলে না, তাকে আরো অনেক বিদ্যা বা পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে জীবনে চলাচল করতে। তাহলে একজন ব্যক্তি যদি ডাক্তারের পলিসি অনুসারে চলতে না পারে, তবে পুরো রাষ্ট্র কিভাবে চলবে ?
সন্ধ্যা বাতি - সন্ধ্যা বাতি updated their ...একজন ডাক্তার সাহেব অবশ্যই চিকিৎসা বিদ্যা ভালো জানেন,
কিন্তু তিনি হয়ত আন্তর্জাতিক রাজনীতি জানেন না,
তিনি হয়ত অর্থনীতি জানেন না,
তিনি হয়ত সমাজবিজ্ঞান জানেন না।
একজন ডাক্তার সাহেব হয়ত তার ডাক্তারি বিদ্যা অনুসারে সব কিছু লক ডাউন করে দিতে বলতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্র যখন সবকিছু লড ডাউন করবে, তখন তাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কলাকৌশল, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞানসহ ভুত-ভবিষ্যত চিন্তা করেই ডিসিশন নিতে হবে। এজন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে যখন মিডিয়া বা চিকিৎসকরা প্রেসার দিয়েছে সব কিছু বন্ধ করে দেয়ার জন্য, তখন তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন- “একদিকে আমি করোনা রোগী বাচাবো, অন্যদিকে বহু লোক দুর্ভিক্ষে মারা যাবে।” সমস্যা হলো- প্রত্যেকটা মানুষ তার ব্যক্তি কেন্দ্রীক চিন্তা করে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ডিসিশন যে সবার কথা চিন্তা করে দিতে হয়, সেটা কেউ বুঝতে চায় না। আমি মানুষকে সচেতন করার নামে ভীতি ছড়াইলাম, কিন্তু সেই ভীতিতে যদি চিকিৎসা সেক্টরই ভেঙ্গে পড়ে,তবে সেই সচেতনতার কি গুরুত্ব থাকতে পারে ??
আমি অনেক হাসপাতালে খবর নিয়ে দেখেছি, অনেক ডাক্তার ভয়ে ছুটি নিয়েছে, অনেক টেকনিশয়ান ছুটি নিয়ে চলে গেছে। সিজারের রুগি আসছে, কিন্তু ডাক্তার নাই। ডায়াগোসিস করাবে তার লোক নাই। এই যে সচেতনতা আপনারা তৈরী করলেন, এটা কেমন সচেতনতা ? যে ডাক্তারই পালায় গেছে ?? সর্দি, কাশী, করোনার রুগির কথা বাদ দিন, বাকি যে শত শত রোগের চিকিৎসা প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে হচ্ছে তার কি হবে ?? সেই রুগীদের কি হবে ???
আবার এই যে পুরো দেশকে ভীত করায় মানুষজনকে স্থবির করে দিছেন, যাদের জমানো টাকা আছে, তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম, বাংলাদেশে একটা বড় জনসংখ্যা আছে, যারা দিনে আনে দিনে খায়। রিকশা চালক বা দিন মজুর, পিতা দিনে যে ইনকাম করবে, সেটা দিয়ে পুরো পরিবার সারাদিন চলবে। কিন্তু দেশ স্থবির করে সেই দিনমজুরদের যে কঠিন অবস্থা করলেন, তাদের ঘরে যে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনলেন তার কি হবে ? আপনার মত তাদের তো মাস শেষে বেতন নাই, আপনার মত তারা তো সরকারি চাকুরী করে না, আপনার মত তারা ঘরে পিসি-ইন্টারনেটে বসে কাজ করতে পারে না, বাইরে গিয়ে গায়ের খাটুনি দিতে হয়। তাদের ব্যাংকে জমানো টাকা নাই, অনেকে ঋণ গ্রস্ত, অসুস্থ । তাদের কি হবে ? নিজেকেই প্রশ্ন করুন।
প্রথম পর্ব- https://bit.ly/2WqylND