কেউ কেউ বলছে, “ইসকন একটি ধর্মীয় সংগঠন। এটা নিরীহ, এর কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।

কেউ কেউ বলছে, “ইসকন একটি ধর্মীয় সংগঠন। এটা নিরীহ, এর কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।
ইসকনের বিরুদ্ধে বলা মানে সাম্প্রদায়িকতা তৈরী করা। ”
যারা এ ধরনের কথা বলছেন, আসলে তারা ইসকন সম্পর্কে কিছু জানেনই না।
জানেন না তাদের কার্যপদ্ধতি ও পলিসির কথা।
নয়ত, ইসকনের বিরুদ্ধে বলাকে-
সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি নয়, বরং সাম্প্রদায়িকতা হ্রাস হিসেবে গণ্য করতেন।
ইসকন আসলে একটি সংগঠন। এর সৃষ্টি মাত্র ৬০ বছর আগে।
সংগঠনটি মূলতঃ চৈতন্য নামক এক লোকের থিউরীকে তাদের মূল আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে।
চৈতন্যের জন্ম ১৫শ’ শতকে। ঐ সময় এ অঞ্চলে আরব ও তুর্কি থেকে আগত মুসলমানদের প্রভাবে অনেক হিন্দু ধর্মান্তরিত হচ্ছিলো। যেহেতু উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরা নিচু শ্রেণীর হিন্দুদের নির্যাতন করতো, অধিকার হরণ করতো, সেহেতু ধর্মান্তরিত হওয়াটা বেশি ছিলো নিচু শ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে। চৈতন্য এই ধর্মান্তরণটা আটকাতে চাইলো। এজন্য সে হিন্দুদের মধ্যে জাতপাত প্রথার বিরুদ্ধে বলা শুরু করলো। তার অন্যতম থিউরীর হলো- জাতপাত ভুলে হিন্দুদের একতাবদ্ধ হতে হবে।
লক্ষ্য করবেন- ইসকন মন্দিরগুলোতে, তাদের ধর্মগুরুদের নামের শুরুতে ‘প্রভু’ শব্দটা উল্লেখ করে। অথচ এই ধর্মগুরুদের অধিকাংশ নমশূদ্র। এ কারণে ব্রাহ্মণদের এটা নিয়ে বেশ এলার্জি আছে। ব্রাহ্মণদের কথা হলো- “যে নমশূদ্রের সৃষ্টি ব্রহ্মার পা, আর আমার (ব্রাহ্মণের) সৃষ্টি ব্রহ্মার মস্তক থেকে, সেই আমি ব্রাহ্মণ কিভাবে একজন নমশূদ্রকে প্রভু ডাকতে পারি ?
চৈতন্যের আরেকটি কাজ ছিলো, হিন্দুদের মধ্যে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর ঠেকানো।
এই কাজটা করার জন্য তাদের প্রচুর পরিমাণে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ তৈরী করতে হয়,
ঘৃণার চাষ করতে হয়, যেন একজন হিন্দু কখনই ইসলাম দ্বারা আকৃষ্ট না হয়।
আপনারা যদি ইসকন ও তার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হিন্দু পেইজে যান, তবে নিশ্চিত এর সত্যতা পাবেন।
চৈতন্য তথা বৈষ্ণব বা গৌড়ীয় হিন্দুরা এজন্য মুসলমানদের যবন, ম্লেচ্ছ্য ও অস্পৃশ্য বলে গালি দেয়।
চৈতন্যের একজন ভক্ত ছিলো, নাম হরিদাস। সে আগে মুসলমান ছিলো।
মুসলমান থেকে এসেছিলো বলে তার নামকরণ করা হয় যবন হরিদাস নামে।
চৈতন্যের একটি বড় থিউরী হলো “নির্যবন করো আজি সকল ভুবন”।
(বাংলা দেশের ইতিহাস(মধ্য যুগ),পঞ্চম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৬২)
অর্থাৎ ভুবনকে ইসলাম ও মুসলিমমুক্ত করাই ইসকন তথা বৈষ্ণব বা গৌড়িয়দের অন্যতম থিউরী।
ইসকন কেন বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর ও সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধির কারণ ?
চৈতন্য’র একটি থিউরী হলো- তারা কীর্তন করবে, কিন্তু কখন কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না বা বন্ধ করতে পারবে না।
এক্ষেত্রে কেউ যদি তাদের কীর্তনে বাধা দেয়, তবে তার সাথে মারামারি করতে হবে।
ইতিহাসে দেখা যায়, চৈতন্যের এলাকার মুসলিম কাজীর সাথে যখন সাথে তাদের কীর্তন নিয়ে বিরোধ হলো,
তখন সকল সমর্থক নিয়ে চৈতন্য মুসলিম কাজীর বাড়িঘর ভাংচুর ও আগুন দিতে গেলো।
অর্থাৎ মুসলমানদের সাথে দাঙ্গা করলো।
চৈতন্যের ভাষায়-
ভাঙ্গিব কাজীর ঘর কাজীর দুয়ারে।
কীর্তন করিব দেখি কোন কর্ম করে।।
তিলার্ধেকও ভয় কেহ না করিও মনে।”
এইখানে কিন্তু একটা তত্ত্ব লুকায় আছে, আপনারা খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন।
বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি অবস্থান করছে বহু সময় ধরে। এই পাশাপাশি সহ অবস্থানের একটা লুক্বায়িত তত্ত্ব আছে। সেটা হলো- মুসলমানদের নামাজ বা আজানের সময় এবং মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হিন্দুরা তাদের কীর্তন ও ঢোল তবলা বন্ধ রাখবে।
এই টুকু তত্ত্ব যদি ঠিক রাখা যায়, তবে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি সহ-অবস্থান করতে পারবে, কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এইটুকু তত্ত্ব যদি উঠিয়ে দেয়া হয়, তবে বাংলাদেশে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা অবধারিত।
চৈতন্যের থিউরী হলো- নামাজ হোক, আজান হোক আর মসজিদ হোক ঢোল তবলা বাজাতে হবে, বন্ধ করা যাবে না, যদি কেউ বাধা দেয়, তবে তাদের সাথে মারামারি বা দাঙ্গা করতে হবে।
আপনার লক্ষ্য করবেন, ২০১৪ সালে স্বামীবাগ মন্দিরের পাশে মসজিদে তারাবীর নামাজ নিয়ে যখন মারামারি হলো, তখন তার মূল কারণ ছিলো, মসজিদের তারাবী বা অন্য ওয়াক্তের নামাজ বা আজানের সময় মন্দিরের ঢাল-তবলা বা কীর্তন বন্ধ না করা।
আবার ২০১৬ সালে সিলেট ইসকন মন্দির ও পাশ্ববর্তী মসজিদের মুসল্লীদের মধ্যে মারামারি হলো, তখনও ঘটনা ছিলো এক । মানে জুম্মার নামাজের সময় ইসকন মন্দিরে কীর্তন বা ঢোল তবলা বন্ধ না করা।
সমস্যা হলো, ইসকনের মতবাদে দিক্ষীত হয়ে বিভিন্ন হিন্দুরা এই তত্ত্ব এখন হিন্দুদের বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে ঢুকে ছড়িয়ে দেয়া শুরু করেছে। এ কারণে “নামাজ হোক, আজান হোক আর মসজিদের পাশে হোক ঢোল তবলা বাজাতে হবে, বন্ধ করা যাবে না”- এই তত্ত্বটা কিন্তু শুধু ইসকন, বৈষ্ণব বা গৌড়িয় নয়, সমস্ত হিন্দু জনগোষ্ঠী গুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, যার খারাপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে, তৈরী হচ্ছে পরষ্পর বিদ্বেষ বা সাম্প্রদায়িকতা। যা মাঝে মাঝেই দাঙ্গার সৃষ্টি করছে এবং করবে, তা বলা যায় নিশ্চিত।
আসলে ইসকন বাংলাদেশে ভারতের আরএসএস’র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। আরএসএস যেমন অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করলেও আসলে হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতার মূল থিউরীদাতা। ঠিক তেমনি ইসকনও একটি অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। এদের মূল কাজ ধর্মীয় চর্চার আড়ালে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব উস্কে দেয়া এবং তার থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া।
আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করবেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি। এর কারণ শেখ হাসিনার টানা ১০ বছরের শাসনামলে ইসকন মন্দিরের সংখ্যা বেড়ে ৩ গুন হয়েছে, তাদের ব্যাপক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে সাম্প্রদায়ক উস্কানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাদের উস্কানি দেখে মুসলমানরা উত্তেজিত হয়েছে, প্রতিবাদ করেছে। যদিও “এক হাতে তালি বাজে না” কিন্তু আমাদের মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহল সব সময় এক পাক্ষীক মুসলমানদের প্রতিবাদটাকে হাইলাইট করেছে, মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু হিন্দুদের বিদ্বেষের চর্চা বা উস্কানিকে এড়িয়ে গেছে, কখনও বা ‘হ্যাকিং বলে লুকিয়ে ফেলেছে। অথচ, মুসলমানরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ট, মুসলমানরা যদি এক পাক্ষীক সাম্প্রদায়িক হতো, তবে বাংলাদেশে ১টা হিন্দু থাকার কথা ছিলো না। অথচ বাংলাদশে হিন্দুরা বেশ প্রভাব-প্রতিপত্তির সাথে থাকছে। কিন্তু এই যে বর্তমানে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ছে, কেন বাড়ছে ? নিশ্চয়ই হিন্দুরা কোন উস্কানি দিচ্ছে, নয়ত এমন হওয়ার কথা নয়। অনেকে সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়ে মুসলমানদের ঠাণ্ডা থাকতে বলে। এটা ভুল। মূল যে যায়গাটায় সমস্যা বা ‘উস্কানি’ সেটা চিহ্নিত করুন। সেই সমস্যাটা আগে দমন করুন, প্রয়োজনে ইসকন টাইপের সংগঠনগুলোকে দেশে নিষিদ্ধ করুন, নয়ত দেশ যে একটি খারাপ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত বলা যায়।