আমি মানুষকে অনেকদিন ‘কর্পোরেটোক্রেসি’ নামক শব্দটা বুঝিয়েছি,

কেরোসিন বাতি জ্বলন্ত কার্টুন ...আমি মানুষকে অনেকদিন ‘কর্পোরেটোক্রেসি’ নামক শব্দটা বুঝিয়েছি,
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে- অনেকেই এটা বুঝে নাই।
কর্পোরেটোক্রেসি’র সহজ অর্থ হইলো সরকারের উপর ভর করে বিদেশী ব্যবসায়ীদের আগমন আর দেশী ব্যবসায়ীদের পতন।
কিন্তু আমাদের জনগনের সমস্যা হইলো- তারা দেশী ব্যবসায়ীদের দেখতে পারে না, ঘৃণা করে।
‘ব্যবসা’ বা ‘ব্যবসায়ী’ তাদের কাছে একটা গালিময় শব্দ।
দেশের লোক ব্যবসা করলে তাদের খারাপ লাগে।
পাবলিক গণতন্ত্র বলে গলা ফাটাইলেও আসলে পাবলিকের চিন্তাধারা অনেকটা রাজতন্ত্রের মধ্যে ঘুরপাক খায়। তারা সরকারকে রাজা ভাবে, আর নিজেদের প্রজা ভাবে।
তাদের কথা হইলো সরকার রাজা সব কিছু করবে।
দেশী ব্যবসায়ীরা কেন করবে ?
কিন্তু দেশের ৯৯% উৎপাদনশীল খাত যে বেসরকারীভাবে চলে, এটা তাদের জানা নাই।
তাই সরকারের কাছে থাকা কোন দায়িত্ব বেসরকারীকরণ নিয়ে কথা উঠলেই তারা ভাবে দেশের বোধ হয় ক্ষতি হয়ে গেলো।
তাদের কথা হইলো- সরকার সব কিছু ভর্তুকি দিয়ে চালাবে।
কিন্তু সরকারের ভর্তুকিটা কোথা থেকে আসবে, এটা তারা বুঝতে চায় না।
ঐ টাকা যে তাদের চাল-ডাল আর বাড়িভাড়া থেকে নিয়মিত কেটে রাখা হচ্ছে, এটা তারা বুঝতেছে না।
আর সরকারও সে সুযোগ নেয়, সরকার ৫ লক্ষ কোটি টাকা বাজেট বানাইয়া পাবলিককে চিপতে থাকে,
অথচ সেই টাকার ৫০ হাজার কোটি টাকার কাজে লাগায় না।
জনগণ যখন দেশী ব্যবসায়ীদের প্রতি বিতশ্রুদ্ধ তখন সে সুযোগটা কাজে লাগায় বিদেশী ব্যবসায়ী বা সম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো।
তারা ঐ দেশের সরকারকে হাত করে ঐ দেশের ইনভেস্ট করে।
আর এভাবেই প্রবেশ করে বিদেশী কর্পোরেট, শুরু হয় কর্পোরেটোক্রেসি।
বর্তমান সময়ে আপনি যত কিছু দেখেন, সব কিছুর মধ্যে বিদেশীরা প্রবেশ করতেছে।
বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে বিদেশী ইনভেস্টমেন্টে।
বড় ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল-বিমানবন্দর টার্মিনাল-রাস্তাঘাট হচ্ছে বিদেশী (চীন, জাপান, ভারত, এডিবি, বিশ্বব্যাংক) ইনভেস্টমেন্টে।
সরকার নতুন কারামতি নিছে পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টারশীপ।
এই পিপিপি’র মধ্য দিয়ে সরকারের কাধে ভর করে প্রচুর বিদেশী কর্পোরেট বাংলাদেশে ঢুকে পড়তেছে।
এই পিপিপি’র মধ্যে অনেক প্রজেক্ট হচ্ছে, তার মধ্যে দেখলাম প্রচুর ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে হাসপাতাল বানাচ্ছে। অর্থাৎ চিকিৎসা সেক্টররা তারা বাংলাদেশের ভেতরে থেকেই দখল করতেছে।
হয়ত বলতে পারেন- ভাই বিদেশীদের টাকা আছে, তাই তারা আসতেছে।
দেশীদের টাকা নাই, তাই তারা আসতেছে না।
না ভাই, এটা ভুল কথা।
এসব ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এগুলো বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য করা কোন ব্যাপার না।
তারা ১০ ভাগের ১ ভাগ দামে এগুলো করে দিতে পারে।
কিন্তু সমস্যা হইলো- সরকার বিদেশী কোম্পানিগুলোকে যত সুযোগ সুবিধা দেয়, যত ট্যাক্স মওকুফ করে,
বিনা ট্যাক্সে মেশিনারিজ আনতে দেয়, দেশী কোম্পানিগুলোকে সেই সুযোগ দেয় না। দেশীদের হাতে-পায়ে নানান নিয়মনীতির শিকল পড়ায় রাখে, ফলে দেশী ব্যবসায়ীরা সাহস পায় না।
ফলে বিদেশীরা যতটা স্বাচ্ছন্দে আসে, দেশী কোম্পানি সেই স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারে না।
আরেকটি ঘটনা হইলো- সরকার বিদেশী কোম্পানির সাথে আড়ালে কিছু চূক্তি করে, সেটা পাবলিকলি প্রকাশ করে না। কিন্তু দেশী কোম্পানি হইলে সেটা সম্ভব হয় না। তাছাড়া বিদেশী কোম্পানি হইলো বাজেট ১০-২০ গুন বেশি দেখানো যায়, যেটা দেশী কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখানো যায় না।
কথা হইলো জনগণ যখন দেশী ব্যবসায়ী বিরোধী হবে, তখন বিদেশী ব্যবসায়ীরা আসবেই,
প্রয়োজনে তারা সরকারের কাধে ভর করে আসবে।
আর তখন সরকার দুইভাবে টাকা খাবে।
এক, বিদেশী ব্যবসায়ীদের থেকে কমিশন।
দুই, সরকারের অংশিদায়িত্বর দেখায় বাজেট থেকে মোটা টাকা তুলে নেয়া্। যা শেষে পরিশোধ করতে হবে জনগণের চাল-ডালের টাকা থেকেই।
মূল কথা হইলো- দেশী ব্যবসায়ী কর্তৃক দেশী প্রাইভেটাইজেশন লাগবে।
শুধু সরকারী মনোপলী নয়, সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেক সেক্টরে দেশী ব্যবসায়ীদের ঢুকতে দিতে হবে।
যখন প্রাইভেট ভীতি নিয়ে আমরা দেশী ব্যবসায়ীদের আটকে রাখবো, তখন সরকার-ই নানান অজুহাতে বিদেশী ব্যবসায়ীদের ঢুকাবে (ইতিমধ্যে অসংখ্য প্রজেক্ট নেয়া হয়ে গেছে)। আর সরকারের উপর ভর করে বিদেশী ব্যবসায়ীদের আগমন হলো কর্পোরেটোক্রেসি, যার ফলাফল খুব ভয়ঙ্কর।