কিছুদিন আগে একটা কথা বলেছিলাম, আমার মনে হয় অনেকে সেটা বুঝেনি।

লন্ঠনে রুপের বাতি ( Lonthone ruper bati ) লালন ...কিছুদিন আগে একটা কথা বলেছিলাম, আমার মনে হয় অনেকে সেটা বুঝেনি।
তাই আবার কথাটা বলছি-
মোদি আর হাসিনা সরকারের পলিসিগত কিছু মিল আছে।
পলিসিটা হইলো-
মোদি সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটরদের পলিসি (কর্পোরেটোক্রেসি) তার দেশে বাস্তবায়ন করতে যাওয়ায় সেখানেই ভালোই অর্থনৈতিক মন্দা তৈরী হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে অনেক ভারতীয়। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ধর্মীয় বিভেদ তৈরী করে জনগণের খেয়াল অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখতে বেশ কৃতিত্বের সাথে সফল হয়েছে মোদি। যাকে আমি তুলনা করেছিলাম- অপরেশন থিয়েটারে ব্যথা ভুলিয়ে রাখতে রোগীকে প্যাথেডিন প্রয়োগের সাথে।
ঠিক একইভাবে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে কর্পোরেটোক্রেসি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মন্দা পরিবেশ তৈরী করেছে এবং আরো ধিরে ধিরে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হচ্ছে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনাকেও জনগণকে ভুলাতে মোদির অনুকরণে কিছু করতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা ধর্মীয় বিভেদ তৈরীকরণে বিশ্বাসী নয়। তাই কখনও ক্রিকেট খেলা, কখন কনসার্ট, কখন আতশবাজি দিয়ে জনগণকে ভুলয়ে রাখতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে চলেছে।
কিন্তু সমস্যা হলো- জনগণ এগুলো ভালো খাচ্ছে না। অথচ কর্পোরেটোক্রেসি বাস্তবায়ন করতে হলে এখনও বড় বড় প্রকল্প নিতে হবে, কিন্তু সেগুলো অ্যামাউন্ট শুনলে পাবলিকের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে পারে (যেমন- খুব শিঘ্রই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জাপানি ঋণে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের নির্মাণ কাজ)।
এ অবস্থায় সরকারের দরকার ছিলো জনগণের খেয়াল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে আসা। আমার ধারণা- সেটা করার জন্য এই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ। সাধারণত সরকারের কাছে এ ধরনের অনেক ডকুমেন্ট থাকে, যার মধ্যে অনেক অপ্রকাশিত সত্য থাকে, যা প্রকাশ পেলে বিতর্ক তৈরী হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এসব তথ্যের অনেকগুলো হয় ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, যা সরাসরি প্রকাশ্যে যোগ্যও নয়। কিন্তু এইসব তথ্য ব্যাখ্যা-সংশোধন ছাড়া সরকার ভুল করে ছেড়ে দিয়েছে, এটা আমি মানতে পারছি না। এত কাচা বুদ্ধি সরকারের নয়। সরকার অবশ্যই এটা ছেড়েছে এক বা একাধিক উদ্দেশ্য নিয়ে, যার মধ্যে একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরী করা, যাতে সরকারের মূল কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ঢাকা পড়ে। যেখা যাবে, পরবর্তীতে সরকারীই ভুল স্বীকার করে বা একটা ব্যাখ্যা দিয়ে সব মিটমাট করে ফেলবে।
আসলে সরকার কি চায় ?
বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক কোন প্রতিপক্ষ নেই। সুতরাং তার প্রতিপক্ষ নিয়ে আলাদা শক্তিশালী চিন্তা করার দরকার নেই। তার এখন মূল কাজ দুটি-
১) ক্ষমতা আরো দীর্ঘস্থায়ী করা। এরজন্য সে জনগণকে নয়, বরং বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের, বিশেষ করে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের খুশি করার চেষ্টা করছে।
২) আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া । কর্পোরেটোক্রেসি বাস্তবায়নে বড় বড় প্রকল্প নির্মাণের অজুহাতে বড় বড় এমাউন্টের টাকা এদিক সেদিক করা।
এ দুটি হলো সরকারের রিয়েল ফেস, যাকে আমি বলছি কর্পোরেটোক্রেসি বাস্তবায়ন। সরকার চায় না, এখানে কোন আঘাত হোক।
কিন্তু কথিত উন্নয়ন কার্যকলাপকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা দ্রব্যমূল্যের খরচ কমাতে বলা মানে তার রিয়েল ফেসে আঘাত হানা। সম্প্রতি পেয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমেই সেই ট্রেন্ডটাই উঠছিলো। কিন্তু সরকারের সেটাই অপছন্দ । তাই সে নিত্য নতুন আর্টিফিসিয়াল ফেস বের করবে এবং জনগণকে সেটা নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় মাতিয়ে রেখে রিয়েল ফেস আড়ালে রাখবে।
আমার মনে হয়, সরকারের রিয়েল ফেস রেখে আর্টিফিসিয়াল ফেস নিয়ে লাফালাফি করা জনগণের একটা বড় ভুল। যারা আলোচনা সমালোচনা করছে, সেখানে হয়ত তাদের রাজনৈতিক ফায়দা থাকতে পারে, কিন্তু জনগণের ব্লকের সেখানে দুই পয়সা লাভের কোন আশা নাই। যেখানে জনগণের লাভ-লস আছে, জনগণের সেটা নিয়েই মেতে থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়।