আবরার হত্যাকাণ্ড : ছাত্রলীগ আর্টিফিশিয়াল ফেস, রিয়েল ফেস ‘অমিত সাহা’ -১

আবরার হত্যাকাণ্ড : ছাত্রলীগ আর্টিফিশিয়াল ফেস, রিয়েল ফেস ‘অমিত সাহা’ -১
অ্যানালাইসিস ক্লাস করানোর সময় আমি আপনাদের যে কোন ইনসিডেন্টে দুটি অংশের কথা শিখিয়েছিলাম। একটির নাম দিয়েছিলাম- রিয়েল ফেস, অন্যটি আর্টিফিসিয়াল ফেস।
আমি বলেছিলাম- যে কোন এক্টর চাইবে- ঘটনাকে রিয়েল ফেস থেকে আর্টিফিশিয়াল ফেসের দিকে নিয়ে যেতে। এবং প্রতিপক্ষ যত আর্টিফিশিয়াল ফেসে আঘাত করবে, এটা বরং তার সফলতা হিসেবেই গণ্য হবে।
ঢাকা উত্তরে বসেছে ৩৩৪৩টি এলইডি বাতিআবরার হত্যাকাণ্ডে আমরা একই জিনিস দেখতে পাচ্ছি।
এই ঘটনায় রিয়েল ফেস হলো অমিত সাহা, যাকে এক্টররা লুকাতে চাইছে। কারণ- সেটার মধ্যে রয়ে গেছে মূল গোমর।
আর ছাত্রলীগ হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ফেস। এটা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ নিজেরাই উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। তারাই চাচ্ছে সেখানে যেন আঘাত হয়।
অনেকে এই ঘটনায় ছাত্রলীগকে দোষারোপ করে ভাবতেছে, এর মাধ্যমে সফলতা আসবে।
কিন্তু না, এটা ভুল। আপনাকে বিষয়টা বুঝতে হবে।
আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ যেটুকু ওজন বহন করতে পারবে, সেটা তারা স্বেচ্ছায় নিতে চাচ্ছে।
অর্থাৎ তার ১০ জন কর্মীর ফাসি হোক এটাতে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না।
এমনকি তারা খুনি সংগঠন হিসেবে প্রচার পাক, এটাতেও তাদের সমস্যা নাই।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, শুধু অমিত সাহার নাম প্রকাশটি নিয়ে।
অর্থাৎ আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের নিজের ১০ জন লোককে ফাঁসি দেয়ার ক্ষমতা আছে।
কিন্তু আসামী লিস্টে অমিত সাহা’র নাম উঠানোর ক্ষমতা নাই, এটা তার কাছে অনেক বেশি ওজনদার।
এবং আওয়ামীলীগ এই অংশটাকে নিজের দুর্বল অংশ বলে মনে করে। এই জন্য সে নিজের শরীর দিয়ে তার দুর্বল অংশটা ঢাকার চেষ্টা করে।
আওয়ামীলীগের দুর্বলতা কোথায় ?
হিন্দুত্ব বা ভারতকে আওয়ামীলীগ অসন্তুষ্ট করতে চায় না। কারণ আওয়ামীগের বিশ্বাস (!) এতে তার সাথে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হবে, এবং সে কারণে তার ক্ষমতায় সমস্যা হতে পারে। এ কারণে হিন্দুত্ব বা ভারত প্রসঙ্গ আসলে আওয়ামীলীগ ‘নো-কম্প্রোমাইজ’ নীতি ফলো করে। জনগণকে প্রয়োজনে কিক করে ফেলে দিবে, কিন্তু তাদের কথার বাইরে যায় না। এর উদাহরণ হিসেবে তিনটি ঘটনা টানা যায়।
একটি- রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে সব জনগণ বিরুদ্ধে গেলেও আওয়ামীলীগ সেখানে তোয়াক্কা করেনি।
দ্বিতীয়টি- নাসিরনগরের ঘটনা। যাকে উপলক্ষ করে মুসলমানদের তুলোধুনা করেছিলো আওয়ামীলীগ। পরবর্তীতে অবশ্য ভারতীয় পার্লামেন্টে একজনের বক্তব্য শুনেছিলাম- তারা ভারত থেকে আওয়ামীলীগকে ফোন করেছিলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
তৃতীয়টি- সরকারী চাকুরীতে ব্যাপক হারে হিন্দু নিয়োগ, যা ঘটে থাকে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের ফোনের মাধ্যমে। আমার জানা মতে, এই ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের দৌরাত্বের কারণে আজকে মুসলিম পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা হিন্দু পুলিশদের ইন্ডিয়ান হাই কমিশন পাওয়ারের কাছে অতিষ্ঠ।
আওয়ামীলীগের ভারত বা হিন্দুত্ব নিয়ে এ ভীতি কতটুকু সত্য ?
মোটেও সত্য না। এটা আওয়ামীলীগের ‘ফলস বিলিভ’। এই ভীতির পক্ষে আওয়ামীলীগ কিছু না করলে আওয়ামীলীগের ক্ষমতার ক্ষতি হবে এই বিশ্বাসের আসলে কোন ভিত্তি নাই। পুরোটাই আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকদের ভুয়া কল্পনা। অথচ এই ফলস বিলিভের কারণে ভারতকে খুশি করাতে গিফট দিতে গিয়ে আজকে আওয়ামীলীগ একটি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে।
ভারত বা হিন্দুত্ব ভীতি যে ফলস বিভিল, তার দুটি প্রমাণ দিচ্ছি।
এক, বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ সংযুক্ত হওয়া। আওয়ামীলীগ মুখের উপর না করে দিছিলো। কিন্তু এর প্রতিদানে ভারত কিছুই করতে পারে নাই।
দুই, সম্প্রতি বাংলাদেশের উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা হুমকি দিছিলো পূজার জন্য রংপুর নির্বাচন পেছানোর জন্য। কিন্তু সরকার সেটাকে পাত্তা দেয় নাই। এতে হিন্দুত্ববাদীরা কিছুই উল্টাতে পারে নাই।
কথায় বলে, “বনের বাঘের খায় না, মনের বাঘের খায়”।
আমার মনে হয়- আওয়ামীলীগের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় তাদের নীতি নির্ধারকদের হিন্দুত্ব ও ভারত নামক মনের বাঘের খপ্পর থেকে বাড়িয়ে আসা খুব জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে।
(চলবে)