আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ভরসা করি।

দিয়া বাতি - Publicaciones | Facebookআমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ভরসা করি।
কিন্তু আমি অনেক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জেনেছি,
চিকিৎসক বা ঔষধ রোগ সারায়, এটা তারাও বিশ্বাস করে না।
কোন রোগ কেন হয়, তার একদম স্পেসিফিক কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও বের করতে পারেনি,
তবে কোন কোন ওষধ দিলে কোন কোন রোগ চেপে আসে, তবে এটাই আসল চিকিৎসা না।
যেহেতু একটা জিনিস বিস্তারিত জানা যায়নি, অনেকটাই অজানা,
তাই কাজটা করতে হয় অনেকটা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই।
হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।
তবে রোগীরা চিকিৎসকের বিশ্বাসের মধ্যেই শতভাগ ভরসা করে।
‘বিশ্বাস’ শব্দটা আনলাম কারণ মানব সমাজে অসংখ্য ‘বিশ্বাস’ বাস করে।
যেমন-চিকিৎসা বিশ্বাস। এর মধ্যে হোমিওপ্যাধী, অ্যালোপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, আকুপ্রেসার, আকুপাংচারসহ নানান বিশ্বাস আছে। এরা একজন অন্য জনেরটা প্রকৃত বিশ্বাস বলে মনে মানতে চায় না অথবা নিজেরটা অন্যের থেকে উত্তম বলে মনে করে। আবার ধর্মীয় ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক বিশ্বাস বিদ্যামান- ইসলাম, ইহুদী, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, নাস্তিকতা আরো অসংখ্য। এরাও একজন নিজেরটা অন্যের থেকে ভালো বা একমাত্র বলে মনে করে। দেশী রাজনীতির মধ্যেও তেমন আছে- আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি। তেমননি আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যেও আছে গণতন্ত্র, কমিউনিজম, সেক্যুলারিজম, রাজতন্ত্র এরকম আরো অনেক থিউরী। অর্থনীতির মধ্যে এমন অনেক বিশ্বাস আছে।
যে কোন ঘটনা ঘটলেই কিন্তু প্রত্যেকটা বিশ্বাসের আলোকে তার একটা ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু কোন ঘটনাকে শুধু তার বিশ্বাসের আলোকেই বিচার করতে হবে, কিন্তু আমার বিশ্বাসে আলোচনা করলেই ‘ভুল’, আলোচনাকারীকে গালাগালি করতে হবে, পাগল বলতে হবে। এটা আমার কাছে এক প্রকার গোড়ামি মনে হয়।
আমি অনেকেই দেখেছি, হয়ত সে তার বিশ্বাস নিয়ে বলছে- “আমার এই বিশ্বাস বিজ্ঞান সমর্থিত, তাই এটা সত্য। আরে ভাই তুমি যে বিজ্ঞান বা গবেষণাকে পূজি করে তার সত্যতা দাবী করছো, সেটাই কি শেষ গবেষণা ? এর পরে কি আরো কোন গবেষণা বা জ্ঞান নেই ?? তোমার গবেষণা যে দুই বছর পর পরিবর্তন হয়ে যাবে না, তার কি গ্যারান্টি ?? তখন কোথায় থাকবে, তোমার আজকের গবেষণাকে সত্য বলে দাবী করা ??
আমি লক্ষ্য করেছি, অনেকেই সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
তবে তারা এই ব্যাখ্যাটা করতে চায় সেক্যুলারিজম এর পক্ষ থেকে।
আমার কথা হলো- ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেও করোনা ভাইরাসের ব্যাখ্যা করুন।
ধর্ম গ্রন্থ কোরআন, বাইবেল আছে সেখানে এই ধরনের ঘটনা নিয়ে অনেক ইতিহাস আছে।
কেন আসে এসব দুর্যোগ ? কিভাবে সেই দুর্যোগে বিভিন্ন কমিউনিটি ধ্বংস হয়েছে।
কিভাবে সেই দুর্যোগ বন্ধ করা যেতে পারে ?? এগুলোর ব্যাখ্যাও কাজে লাগানো যেতে পারে ।
ধরেন- এই যুগে যদি ‘ডেড সি’ তৈরী হতো, তবে নিশ্চয়ই এর একটা সেক্যুলার ব্যাখ্যা থাকতো?
মানুষ ধর্মীয় ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে সেক্যুলার ব্যাখ্যাটা হয়ত বিশ্বাস করার জন্য চাপ দিতো।
আমি এতগুলো কথা বললাম- কারণ করোনার ব্যাখ্যা শুধু সেক্যুলারিজম দিয়ে করতে হবে,
বাকি কোন বিশ্বাস দিয়ে করা করা যাবে না, এটা আমার কাজে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।
অন্য বিশ্বাস দিয়েও তার ব্যাখ্যা করে দেখা যেতে পারে।
যেমন ধরেন- বর্তমান করোনায় নিহতের সংখ্যা ৬ হাজারের মত।
এর মধ্যে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে নিহত ১০% এর মত,
যদিও মুসলিমদের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৫%।
এর মধ্যে ইরানকে যদি মুসলিম রাষ্ট্র ধরি, তবে সেখানেই মারা গেছে ৯.৫% এবং
বাকি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে মারা গেছে ০.৫%।
এই ক্যালকুলেশন থেকে কিন্তু মুসলমানরা তাদের ‘বিশ্বাস’ থেকেই বলতে পারে,
সারা বিশ্বজুড়ে অমুসলিমরা যেভাবে মুসলমানদের উপর টর্চার করছিলো,
করোনা হলো সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে নির্যাতনকারীদের জন্য শাস্তি,
তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।
সত্যিই বলতে- বিশ্বাস বিষয়টি আমার কাছে এক প্রকার শক্তি মনে হয়।
আমেরিকানরা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে বছরে লক্ষাধিক মারা যায়,
কিন্তু তারা কিন্তু জঙ্গী হয় না। কিন্তু মুসলমানরা ছোট একটা কটটেল ফুটালেও
সেটা জঙ্গীবাদ বলে মনে হয় করা হয়।
কারণ- আমেরিকানরা এই বিশ্বাসটা দৃঢ় করতে পারছে, তারা যেটাই করুক,
সেটা জঙ্গীবাদ নয়, কিন্তু মুসলমানরা যেটা করবে সেটাই অন্যায়।
আজকে চীন-ইউরোপ-আমেরিকাকে করোনা ভাইরাস ধরছে,
অনেকের দাবী হলো- আর যদি ২-৩ সপ্তাহ ইউরোপে করোনা ভাইরাস থাকে,
তবে অনেক ইউরোপীয়ান রাষ্ট্র কলাপ্স করবে।
মুসলমানদের কিন্তু এক্ষেত্রে বলার সুযোগ ছিলো-
“তোমরা যেহেতু আমাদের নির্যাতন করেছো, সেহেতু সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এটা তোমাদের উপর প্রতিশোধ।
তোমরা চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত হতে পারো, অনেক পারমাণবিক বোমাও তোমাদের কাছে থাকতে পারে,
কিন্তু সেগুলো তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারছে না। আমাদের কাছে এতো চিকিৎসা বিজ্ঞানও নেই, পারমানবিক বোমাও নেই, প্রযুক্তিও নেই, তারপরও আমরা অনেকটা রক্ষা পাচ্ছি।।”
আমার ধারণা- মুসলমানরা যদি জোর গলায় এই কথাটা বলতে পারতো, তবেই এই কথাটাই বর্তমান নিপীড়িত মুসলিমদের জন্য একটা বড় শক্তি হয়ে দাড়াতো। এবং অত্যাচারিদের জন্য হতো সতর্কবাণী। অনেকে হয়ত নির্যাতন ছেড়ে ভালোও হয়ে যেতে পারতো।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- খোদ মুসলমানরাই বর্তমানে সেক্যুলারিজমের ট্যাবলেট খেয়েছে। তারাই তাদের ধর্মীয় আলোকে এ ঘটনা ব্যাখ্যা করতে চায় না। অনেকে তো নিজ ধর্মকেও সেক্যুলারিজম দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চায়, যেটা সেক্যুলারিজমের সাথে মিলে না, সেটাকে ভুল মনে করে বা এড়িয়ে যায়। অথচ তারা বুঝতে চায় না, ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস, আর সেক্যুলারিজমও একটা বিশ্বাস। ঐ বিশ্বাসটাই সঠিক, আর তারটা ভুল, সেটা সে নিজেই নিজের মনের মধ্যে গেথে করে নিয়েছে।
তবে আমি অনেক মুসলমানকে তাদের ধর্মীয় আলোকে ব্যাখ্যা করতে শুনেছি। কিন্তু সমস্যা হলো সেক্যুলাররা তাদের হাবিজাবি বুঝিয়ে ‘চুপ’ করিয়ে দেয়, তাদের ‘পাগল’ বানিয়ে দেয়। কারণ ধর্মীয় বিশ্বাস যদি গুরুত্ব পায়, তখন সেক্যুলারিজম তো মাঠে মারা যাবে, তাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাবে। শুধুমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষেত্র টিকিয়ে রাখতে তারা অপর বিশ্বাসগুলো দমিয়ে রাখে, হয়ত প্রকৃত সমাধানও ধ্বংস করে, যদিও অনেকেই সেটা বুঝতে পারে না।