করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বাংলাদেশের কি করা উচিত ??

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বাংলাদেশের কি করা উচিত ??
ধরুন- ‘এ’ অংশে প্রচুর পানি আছে।
তা ‘বি’ দিয়ে তা প্রবেশ করে ডানপার্শ্বের অংশ প্লাবিত করতে পারে।
তবে পানি যতই বেশি হোক, তা ‘সি’ দাগের বেশি হয় না।
এতে যদি ‘ডি’ অংশ প্লাবিত হয়, তবে ১-৪ টি দাগ পানিতে সম্পূর্ণ নিম্মজিত হবে।
কিন্তু ৫-১৩ নম্বর দাগ আংশিক নিম্মজিত হবে, কিন্তু পরিপূর্ণ নিম্মজিত হবে না।
এখন যদি ‘ডি’ অংশকে পানিতে ক্ষয়ক্ষতি বাচাতে চান, তবে কি করতে হবে ?
প্রথম যেটা করতে হবে-
‘বি’ ফুটোকে বন্ধ করতে হবে।
দ্বিতীয় যেটা করত হবে- ১-৪ এর দাগগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ পানি সম্পূর্ণ হলে তাদের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে, বাকিরা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হলেও পুরোপুরি ডুববে না।
বাংলাদেশকে করোনা থেকে বাচাতে হলে এই পলিসিটা ফলো করাই আমার কাছে সর্বোত্তম মনে হয়।
অর্থাৎ ‘এ’ অংশে বিদেশে করোনা আক্রান্তরা আছে। তারা ‘বি’ অংশ দিয়ে ঢুকে, সেখানেই তাদের পরীক্ষা করে ঢুকতে হবে। প্রয়োজনে তাদের আইসেলেশনে রাখতে হবে। আর যদি করোনা পুরোপুরি এসেই যায় তবে যাদের ক্ষতির সম্ভবনা বেশি, মানে বৃদ্ধদের (১-৪ নম্বর দাগ) আগে থেকেই সাবধানে রাখতে হবে। তবে বাকিদের (৫-১৩ নম্বর দাগ) যদি হয়ও, তবে তাদের তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু এই উদ্যোগের বেশি কিছু করা কখনই ঠিক হবে না। কারণ এর থেকে যদি বেশি করা হয়, তখনই ঘটবে বিপত্তি, তৈরী হবে ভীতি বা গুজব। যার ফলশ্রুতিতে করোনায় নয়, বরং অন্যভাবে মৃত্যুহার বহুগুন হবে।
একটু বুঝিয়ে বলছি-
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ৪টি পদ্ধতি আছে-
১) প্রথম পর্যায়—বিদেশ থেকে রোগের সংক্রমণ
২) দ্বিতীয় পর্যায়--- লোকাল ট্রান্সমিশন (যেমন: পরিবারের মধ্যে)
৩) তৃতীয় পর্যায়--- কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (যখন কোনও ব্যক্তি আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসেননি বা এমন কোনও দেশে সফর করেননি যেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, অথচ তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে।)
৪) চতুর্থ পর্যায়—যখন মহামারির আকার ধারণ করে
আমাদের প্রথমে যেটা করতে হবে, বিদেশ থেকে যারা আসছে তাদের সঠিক মাত্রায় পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোরেন্টাইন ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে অবশ্য বাংলাদেশে সেটা কিছু করা হয়েছে, যদিও তা যথাযথ নয়। এটা যেন ঠিক মত করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্যায়টা ঠেকানোই আমাদের বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ।
তবে ৩ আর ৪ নম্বর ঠেকানোর সম্ভব না এবং সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে গেলেই অতিরিক্ত ভীতি বা গুজব তৈরী হবে, কারণ এই অংশের জনংসংখ্যা অনেক বেশি, যাতে ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হবে।
এরপর ধরে নিলাম, ভুলের কারণ তা ছড়িয়েই গেলো।
তাহলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ?
পরিসংখ্যান বলছে- এই রোগে বৃদ্ধদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
তাহলে প্রত্যেকের পরিবারে যে বৃদ্ধরা আছে, তাদেরকে আগে থেকেই সতর্কতার সাথে রাখুন। তাহলে তারাও আক্রান্ত হলো না, ফলে ক্ষতির পরিমাণও বাড়লো না। হ্যা অন্যরা যদি আক্রান্ত হয়, তবে সেটা সাধারণ ফ্লু এর মত হবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সিজনের জ্বরে মানুষ প্রতিনিয়ত ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর-সর্দি-কার্শিতে তো আর সবাই মারা যাচ্ছে না, ওষুধ খেলে ৭ দিন, না খেলে ১ সপ্তাহ জ্বরে ভুগছে। এটা নিয়ে এত টেনশন বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
অর্থাৎ বিদেশ থেকে আগতদের সঠিক মাত্রায় পরীক্ষা করা, সন্দেহ হলে পৃথক করে রাখা।
আর দেশে যে সব অতি বৃদ্ধ আছে তাদের আপাতত সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা।
এই দুইটি বিষয় করা গেলে আমার মনে হয় করোনা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই।
বেশি চিন্তা করতে গেলে আমাদের অন্য সিস্টেমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।
যেমন- আমাদের মৌলিক বিষয় হচ্ছে ৫টি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।
করোনা ভীতির কারণে ইতিমধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে গেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভীতির কারণে স্থবির হতে চলেছে। যদি তা হয়, তবে শুধূ ভীতির কারণে বহু লোক বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।
আর বাকি রইলো খাদ্য ব্যবস্থা। যদি মানুষ আতঙ্কিত হওয়া খাদ্য ক্রয় বাড়িয়ে দেয়, তখন ব্যবসায়ীরা খাদ্য মজুদ শুরু করবে, আর ব্যবসায়ীরা খাদ্য মজুদ শুরু করলেই সর্বনাশ হবে। খাদ্যের দাম বহুগুন বৃদ্ধি পেয়ে তৈরী হবে কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ।
অনেকেই ইতালির ঘটনা দেখিয়ে বলছে সতর্ক হতে।
আরে ভাই ইতালির সাথে আমাদের মিলালে হবে ?
ইতালিতে জনংখ্যা:
০-১৪ বছর: ১৩.৬%, ১৫-২৪ বছর ৯.৬১%, ২৫-৫৪ বছর, ৪১.৮২%, ৫৫-৬৪ বছর ১৩.২৯% এবং ৬৫ উর্ধ্ব বছর- ২১.৬৯%,
অপরদিকে বাংলাদেশে-
০-১৪ বছর: ২৭.২৯%,১৫-৬৪ বছর: ৬৬.৩%, ৬৫-তদুর্ধ্ব: ৬.৪২%
অর্থাৎ ওদের দেশের সাথে আমাদের বয়সের অনুপাতে জনংসংখ্যার কোন মিল নাই।
এই কথাটা সিএনএন এর ১৬ই মার্চের খবরে আসছে, কেন ইতালিতে মৃত্যু হার এত বেশি অথচ দক্ষিণ কোরিয়াতে মৃত্যু হার কম। কারণ ইত্যালিতে বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি তাই ।
বাংলাদেশের জনংখ্যার বিচার করলে প্রায় ২৭% জন্য করোনায় কোন মৃত্যু ভয় নেই বললেই চলে। এটা সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশির মত্। বাকি ৭৫% এর মধ্যে ৬৮% এর মধ্যের যাদের হবে তাদের ৫০০-১০০০ জনের মধ্যে মাত্র ১ জনের মৃত্যু ঝুকি আছে। আর মাত্র ৬% জনসংখ্যা অর্থাৎ বৃদ্ধ দের যদি হয়, তখন তাদের মৃত্যু ঝূকি ১০০ জনের মধ্যে আড়াই জনের। অর্থাৎ টোটাল হিসেব যদি করি তবে বাংলাদেশে যদি ১০০০ জনের করোনা হয়, তবে মৃত্যুঝুকি আছে মাত্র ২ জনের। আর যদি ৬৫+ বছরের বৃদ্ধদেরকে সাবধানে রাখা যায়, তবে মৃত্যুঝুকি আছে ১০ হাজার জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনের।
লক্ষ্য করুণ বাংলাদেশে ধূমপায়ী বা তামাকজনিত কারণে মৃত্যুহার ১০ হাজার জনের মধ্যে বছরে ২৩ জনের (৭ কোটি তামাক ব্যবহারকারী, বছরে মৃত্যু ১ লক্ষ ৬১ হাজার)। তাহলে ধূমপান নিয়ে যে ভীতি হচ্ছে তার থেকে বেশি ভীতি কি করোনা নিয়ে হচ্ছে না? অথচ হিসেবে করোনা নিয়ে যে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে, তার ৪ গুন বেশি ভীতি ছড়ানো উচিত ছিলো সিগেরেট খাওয়ার বিরুদ্ধে।
আমি যে কথাটা আগেও বলেছি, আবারও বলছি-
করোনা ভীতিতে স্কুল, কলেজ বন্ধ, মসজিদ বন্ধ, কলকারখানা,অফিস আদালত বন্ধ এগুলো করা কখনই ঠিক নয়, বরং এতে ভীতি ছড়াবে এবং এতে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় তৈরী হতে পারে এবং ইতিমধ্যে তা হওয়া শুরু করেছে। যেখানে মৃত্যুর হার অনেক বেশি হবে। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে খাদ্য ব্যবস্থায় ভেঙ্গে পড়ে মারা গিয়েছিলো ১৫ লক্ষ লোক। অর্থাৎ প্রতি ১০০০ জনে মারা গিয়েছিলো ২১ জন। অথচ যদি বাংলাদেশের সব লোকের করোনা হয়, তবে ১০০০ জনের মধ্যে মারা যাওয়ার সম্ভবনা ২ জন লোক। অর্থাৎ করোনায় গণহারে হলে যে মৃত্যু হবে দুর্ভিক্ষে তার তুলনায় মৃত্যু হবে আরো ১০ গুন বেশি। আর যদি চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে তবে মৃতের সংখ্যা আরো বহুগুণ ছাড়াবে নিঃসন্দেহে।
অনেককে বলতে দেখেছি, “ইতালির মত বাংলাদেশও অবরুদ্ধ করে দেয়া উচিত”।
আরে ভাই ইতালির অবরুদ্ধ হওয়াটা দেখলেন, আর ঐ দেশে খাদ্য সংকটে পড়ে বাংলাদেশী কিভাবে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে সেটা দেখলেন না?
ইতালিকে অবরুদ্ধ করার কারণে খাদ্য মজুদ করা হচ্ছে, এতে খাদ্য সংকট তৈরী হয়েছে, খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। অনেক বাংলাদেশী সেটা ক্রয় করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তারা জীবন বাচাতে নিজ দেশে ফিরে আসছে। আপনাদের মুখরোচক কথা শুনে বাংলাদেশেও যদি এমন ভীতিকর পরিস্থিতি হয়, তখন যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তবে আপনারা কোথায় যাবেন ? ভারতে না মায়ানমারে ? নাকি বঙ্গপোসাগরে ঝাপ দেবেন। গুজব ছড়ানোর আগে নিজেই একবার চিন্তা করে দেখুন।