ধর্ষণ নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন হলেই আমি একটু বিব্রত হই। ধর্ষণের বিচার চেয়ে আন্দোলন করা ভালো, কিন্তু আন্দোলনকারীদের একটা মহলকে নিয়ে আমার সমস্যা, কারণ তারা আদৌ ধর্ষণের বিচার চায় বলে মনে হয় না, অন্তত তাদের পরিচয় তা বলে না। এই গ্রুপটি পরিচালিত হয় বাম-নাস্তিক নেতৃত্বাধীন এবং উপরে গিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যোগ হয় ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের সাথে। এদের আন্দোলন নিয়ে যে সমস্যাগুলো আমার চোখে পড়ে-
১) আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই প্রকৃত ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হোক। কিন্তু এই আন্দোলকারীদের মূল দাবীর মধ্যে কখন ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাইতে দেখি নাই। কারণ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেমোক্র্যাটিকরা মৃত্যুদণ্ড প্রথার বিরোধী। তাই তারা ধর্ষণের বিচার চায়, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড চায় না। তাই তাদের সাথে আমার মিলে না।
২) পাহাড়ে ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের অনেক দিনের প্রজেক্ট হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধর্ষক বলে প্রমাণ করা এবং তার মাধ্যমে পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার করা। কিন্তু তারা সেটা পারে নাই। সেই জিনিসটা তারা একটু ঘুড়ায় পরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে তনু ধর্ষণ দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছিলো। আমার কাছে এবার ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের পেছনে মিডিয়ার ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের হালচাল দেখে সেরকম মনে হইছে। কারণ ঘটনা ঘটছে সেনাবাহিনী এলাকা কুর্মিটোলায়, আর মিডিয়ায় প্রচার করছে সুঠাম দেহের ধর্ষক। কিন্তু পরে তারা সেটা প্রমাণ করতে না পারায় কষ্ট পাইছে।
৩) ধর্ষণ একটা সামাজিক সমস্যা। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিকরা এটাকে রাজনৈতিক সমস্যা বানায় ফেলতে চায়। আমি এর ঘোর বিরোধী। কারণ ধর্ষণকে রাজনৈতিক ইস্যু যারা বানায়, এতে হয়ত তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হবে, কিন্তু সঠিক ওষুধ প্রয়োগ না করায় ধর্ষণ বরং আরো বাড়বে।
৪) এই মহলটা প্রায় প্রচার করে, ধর্ষণ হলে বিচার হয় না। আমার মনে হয় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে এদের কোন ধারণা নাই। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের কেইসগুলো অন্য যে কোন কেস থেকে শক্তিশালী। একবার ফাসলে জীবন শেষ। বেইল নাই, রিমান্ড সহজ আরো অনেক সমস্যা। তবে শেষে বিচারটা আটকায় উচ্চ আদালতে। সেখানে মামলার জট বা দীর্ঘসূতিত্রার সুযোগে আসামীরা সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু কথা হইলো এই দীর্ঘসূতিত্রাটা কেন ? এর কারণ কেন্দ্রীয় বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীরকণ না হওয়া। আর সেটার মূল কারণ সুপ্রীম কোর্টে সেই ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের আইনজীবিদের স্বার্থগত কারণে হস্তক্ষেপ। তারা চায় না বাংলাদেশের বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ হোক, এতে তাদের মামলা কমে যাবে তাই। কিন্তু এর মাধ্যমে যে মামলা জট নিরসন হবে সেটা তারা পাত্তা দেয়া না। এখানে থেকে বলা যায়- যে লোকরা ধর্ষণ এর বিচার চেয়ে মাঠে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন করে, তাদের জাতভাইরাই ধর্ষণের বিচারে সবচেয়ে বড় বাধা।
৫) ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের একটা শাখা ব্লক হলো নারীবাদী গং। এরা কোন ধর্ষণ ইস্যু আসলেই প্রচার করতে থাকে- ধর্ষণের জন্য নারীর পোষাক দায়ী না। আমি এখন পর্যন্ত কোন নারীবাদীকে দেখলাম না, তারা ধর্ষণ হ্রাসে কি কি উপায় আছে, সেটা খুজতেছে বরং ধর্ষণকে পূজি করে তারা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ তথা স্বেচ্ছাচারিতা উদ্ধারে ব্যস্ত। অথচ যেসব দেশে নারীদের ইচ্ছামত পোষাক পরার স্বাধীনতা আছে, তারাই যে শীর্ষ ধর্ষক রাষ্ট্র- এই চিরন্তন সত্যটা তারা কৌশলে এড়িয়ে যাপওয়ার চেষ্টা করে।
৬) বাংলাদেশে এক নারীবাদীকে সেইদিন দেখলাম ইউরোপের কোন দেশে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পোষাক পরে ছবি দিয়ে বললো- “বাংলাদেশে এই পোষাক পরলে কত খারাপ কথা শুনতে হয়, কিন্তু ইউরোপে কেউ এটাকে কোন আমলেই নিলো না। দেখুন ইউরোপ কত ভালো।”
আমি ঐ নারীবাদীর বক্তব্য শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারি না। বাংলাদেশের নারীবাদীদের চেহারা আর বডিস্ট্র্যাকচার তো বুঝেনই কেমন। বাঙালীরাই ঠিকমত তাকাইতে চায় না। সেই নারীবাদী যখন ইউরোপে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পোষাক পড়ে ঘুড়ে, তখন তাকে দেখতে ইউরোপীয়দের চোখে নিশ্চয়ই তেমন লাগে, যেমন আমাদের দেশে পোষাকছাড়া পাগলী দেখলে আমরা ভয়ে পালায় যাই। এ কারণে ইউরোপীয়রা তাকে টিজ করতেছে না, এটা সে বুঝতেছে না।
৭) বাংলাদেশে ধর্ষণ হঠাৎ বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ হইলো পর্নোগ্রাফি বৃদ্ধি। পর্নোগ্রাফী হলো অনেকটা ভায়াগ্রার মত। আপনি জনগণকে যৌন ওষুধ খাওয়াচ্ছেন নিয়মিত, তাহলে তাদের যৌন উন্মাদনা তো বাড়বেই। এই পর্নোগ্রাফীর কারণে শিশু, বৃদ্ধা, বোরকা পরিহিতা এমনকি পাগলী পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে।
৮) ধর্ষণ ইস্যু আসলেই নারীবাদী একটা গ্রুপ প্রচার করে নারীদের অস্ত্র নিয়ে ঘোড়াঘুরির জন্য। মার্শালআর্ট শেখানোর জন্য। আমার মনে হয়- এই গ্রুপটা ধর্ষণকে কেন্দ্র করে সমাজকে আরো অস্থিতিশীল করতে চায়। কারণ একটা মেয়ে যতই শক্তিশালী হোক, একটা পুরুষের সাথে তার পেরে ওঠা কঠিন। দেখা যাবে, এগুলো মাধ্যমে নারীদের প্রতি ধর্ষকগ্রুপের বিদ্বেষ আরো বাড়বে, তখন ধর্ষণের পর নারীকে হত্যা করাও বাড়বে। যেহেতু নারী-পুরুষ উভয় মিলেই সমাজ, তাই লেজাকাটা নারীবাদীদের কথা শুনে এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না, যাতে সমাজে নারী-পুরুষের মধ্যে আরো সংঘর্ষ তৈরী হয়।
৯) ধর্ষণ ইস্যু কেন্দ্র করে ঐ গ্রুপটি আরো প্রচার করে- বাংলাদেশে পতিতালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক। তাদের দাবী এর মাধ্যমে নাকি ধর্ষণ কমবে। আবার ঐ গ্রুপটি প্রচার করে নতুন টার্ম বিবাহিত ধর্ষণ বা ‘ম্যারিটাল রেপ’ নামক একটি নতুন তত্ত্ব, যেখানে স্ত্রী স্বামীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারবে। আমি আগেই বলেছি- এই গ্রুপটি ধর্ষণকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করে ধর্ষণ হ্রাস করতে নয়, বরং তাদের নির্দ্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য আছে, সেগুলো হাসিল করার জন্য।
১০) বাংলাদেশে নারী নিপীড়ন হ্রাসের মূল উপায় ছিলো-
ক) নারী-পুরুষের বিয়ের বিয়ষটি সহজ করা। বয়সের বাধ্য-বাধকতা তুলে দেয়া।
খ) নারী পুরুষের জন্য পৃথক গণপরিবহন, স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল, বাজার-মার্কেট চালু করা। যেখানে নারীদের জন্য নারী এবং পুরুষের জন্য পুরুষ। একজন অন্যজনের যায়গায় আসতে পারবে না।
গ) পাঠ্যপুস্তকসহ সর্বত্র ধর্মীয় নৈতিকতা চালু করা। এখন যেটা চলতেছে সেটা হলো সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজম কখন নৈতিকতা ধারণ করতে পারে না। নৈতিকতাহীনতার কারণে সমাজের এই দুরাবস্থা।
ঘ) মিডিয়ায় যে কোন ধরনের অপসংস্কৃতি বন্ধ করা, সেটা দেশী হোক আর বিদেশী হোক।
ঙ) ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। এতে ঢাকার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমবে আর ঢাকার বাইরের জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে। এখন যেটা হচ্ছে- ঢাকাকেন্দ্রীক জীবনযাত্রার কারণে সব খরচ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে একজন পুরুষ খরচের কারণে বিয়ে করতে পারছে না, আর করতে পারলেও স্ত্রীকে গ্রামে রেখে শহরে কাজ করতে আসছে। এর ফলে সমাজে অস্থিতিশীলতা হচ্ছে। এটা দূর করতে হবে।
চ) ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে হবে, এবং বিচারবিভাগকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, মামলার জট নিরসনের জন্য। এতে শুধু ধর্ষণ নয়, সকল অন্যায়ের দ্রুত বিচার পাওয়া সম্ভব।
যেহেতু অতি নিকট সময়ে ধর্ষণের পরিমাণ বাড়তেছে, তাই খেয়াল করতে হবে, সমাজে অতি সমসাময়িক কি কি অপসংস্কৃতি চালু হচ্ছে এবং কোন কোন সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ নতুন সংস্কৃতির প্রবেশ এবং পুরাতনগুলো হারিয়ে যাওয়ার কারণেই সমাজে অস্থিতিশীলতা বা ধর্ষণ বাড়ছে। সেগুলোকে আবার ঠিক করতে হবে, তবেই সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু আপনি ধর্ষণ দেখিয়ে নতুন সংস্কৃতি নিয়ে আনার প্ল্যান করবেন, অথচ আপনি জানেনেই না সেটা আনলে ধর্ষণ কমবে না বাড়বে ? যেসব দেশে ঐ সংস্কৃতি চালু আছে তাদের দেশে ধর্ষণের হার কত সেটা খেয়াল করলেই বুঝা যায়, নতুন সংস্কৃতির আউটপুট কি। সুতরাং ধর্ষণ হ্রাসে উল্টা-পাল্টা সমাধান দিলে হবে না।