ইতালি কি তার গির্জা থেকে ৬১১ বছর পুরাতন মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র সরাবে ?
ইতালির বোলোগনায় একটি ক্যাথলিক গির্জার ভেতর মহানবীর ৬১১ বছর পুরাতন একটি ব্যঙ্গচিত্র সংরক্ষিত আছে। যে ব্যঙ্গচিত্রে দেখানো হয়েছে মহানবীকে নরকের রক্ষীরা নির্যাতন করছে। গির্জাটির নাম ‘San Petronio Basilica’ এবং এবং ব্যঙ্গচিত্রটির শিল্পির নাম Giovanni da Modena।
(সূত্র: https://bit.ly/395rxru, https://bit.ly/39bLXPs)
(সূত্র: https://bit.ly/395rxru, https://bit.ly/39bLXPs)
২০০১ সালে প্রথম ইতালির মুসলমানরা ঐ ব্যঙ্গচিত্রটি ধ্বংস করার দাবী তোলে। (https://bit.ly/2QxL9hx)। কিন্তু ইতালি সরকার মুসলমানদের দাবী পাত্তা না দিয়ে উল্টো মুসলমানদের দমানোর জন্য ২০০২ সালে ৫ জন মুসলমানকে গ্রেফতার করে দাবি করে মুসলমানরা নাকি ঐ গির্জা নিয়ে খারাপ কোন প্ল্যান করেছিলো। (https://nyti.ms/2U8YsHp)
এই ঘটনার পরই মুলতঃ ইউরোপে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণের একটি জোয়ার উঠে। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বর ইউরোপীয়ান রাষ্ট্র ডেনমার্কের জিল্যান পোস্টেনে মহানবীর ১২টি ব্যঙ্গকার্টুন প্রকাশ করে(https://bit.ly/2J1rFxu)। এরপর ২০০৬ সালে নরওয়ে ঐ কার্টুনগুলো তাদের দেশে পুনঃপ্রচার করে। এরপর ১লা ফেব্রুয়ারী একযোগে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেন জিল্যান পোস্টেনের কাটুর্নগুলো রিপ্রিন্ট করা শুরু করে। ৮ই ফেব্রুয়ারী ফ্রান্সের পত্রিকা শার্লি হেবদো মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রথম পাতায় বড় করে প্রিন্ট করে। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি এসে ইতালি সরকারের এক মন্ত্রী ঘোষণা দেয়, মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র সম্বলিত টি-শ্যার্ট সে সবার মাঝে বিলি করবে (https://bbc.in/2whHYUl)। এপ্রিলে এসে ইতালির ক্যাথলিক সট্যাডি (Studi Cattolici) নামক একটি মাসিক খ্রিষ্টিয় পত্রিকা ‘San Petronio Basilica’ চার্চে সংরক্ষিত Giovanni da Modena ব্যঙ্গচিত্রকে অনুকরণ করে নতুন কার্টুন প্রকাশ করে (https://bit.ly/33xQCdq)। এরপর খুব দ্রুত এই ব্যঙ্গ কার্টুনের বিষয়টি সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৭ থেকে ইসলাম ও মহানবীর ব্যঙ্গ নিয়ে ব্যাপক কাজ শুরু করে নেদারল্যান্ডের এমপি গ্রিট উইল্ডার্স। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে এই ব্যঙ্গচিত্রে প্রদর্শনীসহ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয় এবং কয়েকটি ব্যঙ্গাত্মক মুভিও নির্মিত হয়, যা নিয়ে সারা বিশ্বেজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরী করেছিলো। পুরো বিষয়টি তখন ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে রাজনীতিবিদ ও খ্রিষ্টীয় জনগণের মাঝে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা পায় এবং এ বিষয়টি কাজে লাগিয়ে এন্টি ইমিগ্র্যান্ট ইস্যু বড় হতে থাকে, যা পুরো ইউরোপের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশেও এক পর্যায়ে সেই ইউরোপী ইসলামবিদ্বেষী গ্রুপের কার্যক্রম চলে আসে। বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগার নামে আমরা যাদের চিনি, যারা বিভিন্ন সময় ইসলাম বা মহানবী নিয়ে কুৎসিত রচনা করে আলোচনায় আসে তাদেরকেও পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে ইউরোপ ভিত্তিক সংস্থা ‘পেন ইন্টারন্যাশনাল’ ((হেডকোয়ার্টার ব্রিটেন)। এই ‘পেন ইন্টারন্যাশনাল’ বাংলাদেশের কিছু ছেলেকে ইউরোপে থাকা খাওয়ার লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশেও সেই ব্যঙ্গচিত্র ও ব্যঙ্গ রচনার প্রকাশ করা শুরু করে। এবং পর্যায়েক্রমে ঐ সব কথিত ব্লগারকে ভিসা দিয়ে ইউরোপে নিয়ে যায়।
অর্থাৎ গত দুই দশকে সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের শেষ নবী, কোরআন বা ইসলাম নিয়ে যে ব্যঙ্গচিত্রের কার্যক্রম তা কিন্তু শুরু হয়েছিলো ইতালির চার্চের ভেতর সংরক্ষিত ৬১১ বছর পুরাতন সেই বঙ্গচিত্রকে কেন্দ্র করেই। অতি সম্প্রতি সারা বিশ্বের মানুষ অবলোকন করছে ইতালি নামক রাষ্ট্রটি কি করে করোনা ভাইরাস দ্বারা পর্যুদস্ত অবস্থায় আছে। অতি উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বহুমুখী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও তারা ব্যাপক মৃত্যুর হার ঠেকাতে পারছে না ইতালি, যা সত্যিই আশ্চর্যজনক। এ অবস্থায় দুর্যোগ থেকে বাচতে ইতালি তার গির্জার ভেতর সংরক্ষিত সেই ৬১১ বছরের পুরাতন মহানবীর বঙ্গচিত্রটি সরিয়ে ফেলে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।