ভারতীয় মুসলমানরা এখন কি করবে ?

ভারতীয় মুসলমানরা এখন কি করবে ?
ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ছাত্র সমাজ এনআরসি ও নাগরিক সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন-বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ বা আন্দোলনে জনসমাগমও কম ছিলো না। অনেক এলাকায় পুলিশ সে সব আন্দোলন দমানোর জন্য গুলি ছুড়েছে বা লাঠিচার্জ করেছে। তবে এই আন্দোলনে মোদি সরকার তার অবস্থান থেকে নড়েনি কিংবা নড়বে এমন কোন পূর্বাভাসও দেয়নি। একইসাথে তারা এখন যেটা করছে, যে সব স্থানে আন্দোলন হয়েছিলো, তার নেতৃত্বে কে কে ছিলো তা আইডেনটিফাই করে গ্রেফতার করছে। এছাড়া অনেক স্থানে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ রাখছে, কারণ খবরগুলো যেন স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে ছড়াতে না পারে।
তবে ভারতে এবারের আন্দোলনের একটা পজিটিভ দিক হচ্ছে, যারা আন্দোলনে মাঠে নেমেছে তাদের বেশিরভাগ ছাত্র সমাজ, এই সমাজটা একেবারে বুদ্ধিহীন নয়, যার কারণে এদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তারা ফাকফোকর বের করে নেবে, এটাই আশা। তবে এসব ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ ও বুদ্ধিদিপ্ত আগাম অবস্থান নেয়া বেশি দরকার।
আমি আগাম অবস্থানের কথা সব সময় এই কারণে বলি, কারণ- কোন ঘটনা দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিবর্তে, কোন ঘটনা হতে পারে সেটার উপর আভাস করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষপাতি আমি। কারণ কোন ঘটনা যদি ঘটেই যায়, তখন সেই অনুসারে কাজ করে আমার লাভটাই বা কি ? দাবা খেলায় সেই জয়ী হয়, যে প্রতিপক্ষের আগাম চাল ধরে সেই অনুসারে নিজের গুটি আগায়।
Locals of Dewanhat maintaining communal harmony - Anandabazarমোদি সরকার আসলে কোন পথে হাটছে এটা বেশি বোঝা জরুরী।
মুসলিম বিদ্বেষ কি শুধুই তারা রাজনৈতিক অবস্থান ?
নাকি মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে আলাদা কোন টার্গেট আছে তার ?
যদি টার্গেট থাকে, তবে সেই টার্গেটটা কি ?
এটা আগে বুঝতে হবে।
সেই বুঝাটা বুঝে, যখন ঐ ঘটনা ঘটবে তখন মুসলমান জাতিগোষ্ঠী কি করতো ? কি চিন্তাভাবনা করতো, সেই চিন্তাটা এখন আনতে হবে, কি কার্যক্রম করতো, কি পরিকল্পনা করতো, সেটা এখন করতে হবে। আর সেটা যদি এখন করা যায়, তখন মুসলমানরা একটা ভালো ফল পাবে এর আগে নয়।
আমি বিষয়টি এ কারণে বললাম-
এখন বিভিন্ন স্টেটে স্টেটে যে গণআন্দোলন বিক্ষোভ হচ্ছে, এটা আরো আগে হওয়া দরকার ছিলো।
যখন গরুর মাংশ খাওয়া নিয়ে আইন হলো তখন ঠিক এরকম হওয়া দরকার ছিলো।
যখন গরুর মাংশের জন্য মুসলমানকে পিটিয়ে মারলো তখন এমন হওয়ার দরকার ছিলো।
যখন বাবারী মসজিদের স্থলে রাম মন্দির করবে বলে ঘোষণা দিলে তখন এমন হওয়ার দরকার ছিলো।
যখন আসামে এনআরসি করবে বলে কথা উঠছিলো, তখন এমন হওয়ার দরকার ছিলো।
যদি ঐ সময়গুলো বড় কিছু হতো, তখন হয়ত এতদূর মোদি সরকার আগাতে পারতো না।
কিন্তু ঐ যে মুসলমান সমাজের দোষ, “আরেকটু দেখি”, “আরেকটু দেখি”,
কিন্তু পেছাতে পেছাতে দেখে পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে, আর পেছানোর যায়গা নাই।
কিন্তু তখন না হলেও, মুসলিম জনসংখ্যার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট যে কিছু একটা হবে, এটা তো অনেকে আভাস দিয়েছিলো। কিন্তু তখন হয়ত সেটা অনেকে তুরি মেরে উড়িয়ে বলেছিলো “দূর কিছু হবে না”।
এই “কিছু হবে না’ কথাটা আসলে খাবাপ কথা। খরগোস দ্রুত দৌড়াতে পারলেও কিছু না করে ঘুমিয়ে থাকায় তাকে ধীরগতির কচ্ছপের কাছে হারতে হয়- ছোটবেলায় এই গল্পটা কিন্তু ফেলে দেবার মত নয়। আজকে যখন স্কুলগুলোতে হিন্দু শিশুদের ট্রেনিং দেয়া হয় মসজিদ ভাঙ্গাই হলো দেশপ্রেম, তখন হিন্দু মাস্টারমাইন্ডদের আলটিমেট টার্গেট কোথায় সেটা আপনাকে বুঝতে হবে, আর প্রতিপক্ষের সেই আলটিমেট টার্গেট ঠিক করে আপনাকেও টার্গেট নিয়ে কাজ করতে হবে, তখন সফলতা আসবে, এর আগে নয়।
শেষে আরেকটা কথা বলবো-
আন্দোলন হবে, সমাবেশ হবে, দল-গ্রুপ অনেক কিছুই হবে। তবে যাই করেন- মুসলমানদের একটা পিওর পৃথক অবস্থান তৈরী কইরেন। এখানে দয়া করে ধর্মের মিশ্রন রাইখেন না। এত বেশি সাম্যবাদী ভেক বাদ দেন, এই সাম্যবাদী ভেক আপনাদের খাইলো। হতে পারে, অন্য ধর্মের অনেকে হয়ত অতি দরদী হয়ে আসবে, হ্যা তাদেরকে সাথে রাইখেন, তবে পেছনে রাইখেন, নেতৃত্বে নয়। যদি এরা আপনাদের নেতৃত্বে ঢুকে যায়, তখন সেটা হবে আপনাদের জন্য একটা বড় ভুল, যা আপনাদের বহু কষ্টে গড়া ভবিষ্যত আন্দোলন শেষ করে দিতে পারে এক নিমিষে।