এ অঞ্চল অনেক দিন ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকায়, এর মানুষগুলোর মধ্যে ইংরেজী শব্দ বা বাক্যগুলোর মধ্যে একটা ফ্যান্টাসি আছে

এ অঞ্চল অনেক দিন ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকায়, এর মানুষগুলোর মধ্যে ইংরেজী শব্দ বা বাক্যগুলোর মধ্যে একটা ফ্যান্টাসি আছে। এই ফ্যান্টাসির সুযোগ নিয়ে বেশ ভালো একটা রাজনৈতিক ব্যবহার দেখিয়েছিলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে ব্যবহার করেছিলো ‘সার্জিকাল স্ট্র্যাইক’ শব্দদ্বয়ের। অধিকাংশ ভারতীয়ই জানে না, সার্জিকাল স্ট্র্যাইকটা কি ? অথবা বাস্তবে সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছিলো কি না, তারও কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু যখন মোদি সরকার প্রচার করলো, “ভারত পাকিস্তানকে সার্জিকাল স্ট্যাইক করেছে।” ব্যস এতটুকু শুনেই তারা খুশিতে দিশেহারা হয়ে গেলো। ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করে করে পুরো দেশ মেতে উঠলো। সিনেমা-নাটক-গান এমন কিছু নাই, যেখানে সার্জিকাল স্ট্রাইক নাই।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার পর পাবলিক শুনেছে ‘লকডাউন’ শব্দের ব্যবহার। পাবলিক আদৌ জানে না, এই শব্দের মাজেজা কি। কিন্তু তারপরও ফেসবুক-স্ট্যাটাসে কমেন্টে দেখি সবাই লকডাউন চায়।
লক ডাউন’র অর্থ খুজতে গিয়ে একটা অর্থ পেলাম-
কারাগারে যখন বন্দিরা দাঙ্গা করে তখন সেই দাঙ্গা নিয়ন্ত্রনের জন্য কারাগারে বন্দিদের তাদের কক্ষে বন্দি করাকেই লক ডাউন বলে।
আর ভাইরাস নিয়ন্ত্রনের জন্য লক ডাউন শব্দের অর্থ হলো-
কোন একটি এলাকায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পেলে ঐ এলাকাকে বদ্ধ করে দেয়া যেন বাইরে থেকেও কেউ ঢুকতে না পারে আবার ভেতরেও কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
আর ফুল লক ডাউন মানে হইলো- কোন নির্দ্দিষ্ট এলাকার কেউ বাড়ি থেকেই বের হতে পারবে না। ঘরের মধ্যে থাকবে। অর্থাৎ ভাইরাস ট্রান্সমিশন সর্বোচ্চ কমিয়ে নিয়ে আসাই এর কাজ।
অর্থাৎ যদি ধারণা করা হয়- কোন এলাকার কেউ জীবাণু আক্রান্ত হয়েছে, তবে ঐ এলাকা লক ডাউন অর্থ হলো, সেই এলাকার ভেতরের মানুষ যেন বাইরে না যায় আর বাইরের মানুষ যেন ভেতরে না আসে। এটা অনেকটা শেষ পরিণতি, তুমি মরলে ভেতরে মরো, বাইরে যেন কেউ আক্রান্ত না হয়।
যাই হোক, গতকাল সরকার অফিস আদালত বন্ধ করার পর দেখি পাবলিকের লক ডাউন চাওয়া বন্ধ হইছে।
আসলে পাবলিক মুখে মুখে লক ডাউন চাইলেও আসলে চাইছিলো শ্যাটডাউন।
মানে সব কিছু বন্ধ হোক, তাহলে পাবলিক দেশের বাড়িতে যাইতে পাড়বে।
ব্যস বিকাল ৫টায় বন্ধের ঘোষণা আসলো, আর সাথে সাথে পাবলিক ট্রেন-বাস-লঞ্চে ভীড় করে করে দেশের বাড়ি চলে যাওয়া শুরু করলো। ঠিক যেভাবে ঈদের ছুটিতে যায়।
যারা ভাইরাসের ছোয়াচে তত্ত্বে বিশ্বাস করে, তাদের বিশ্বাস অনুসারে এখন কি হলো?
তাদের বিশ্বাস অনুসারে যেটা ঘটলো- যেহেতু তাদের ভাষায় ঢাকা ইনফেকটেড, তাই ভাইরাস পুরো দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো। (চীনের গোপন নথিতে দেখা গেছে, অনেকে লক্ষণ প্রকাশ না করেও নাকি এই ভাইরাসের বহনকারী হতে পারে : সূত্র দৈনিক প্রথম আলো, ২২ মার্চ ২০২০)
তাহলে ভাইরাস নিয়ে এত জনসচেতনা তৈরী করে আদৌ কি কোন লাভ হলো ??
আসলে ঢাকার মত জনবহুল শহর যার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ১ লক্ষ জনগণ,
মাত্র ২৬০ বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ২ কোটি জনগণ
আসলে সেখানে কখনই লক ডাউন সম্ভব না।
কারণ বাংলাদেশের সবকিছু রাজধানী কেন্দ্রীক করে তৈরী করা হয়েছে,
বাংলাদেশে অন্য দেশের মত বিকেন্দ্রীকরণ বা প্রাদেশীক সরকার নাই।
যেমন- জার্মানি লক ডাউন করছে মাত্র ২টি প্রদেশ (Bavaria, Saarland), বাকি ১৪টা এখনও করে নাই।
যেহেতু প্রত্যেক প্রদেশের আলাদা সিস্টেম, তাই ২টা লক ডাউন করলে বাকিগুলো তাদের কাজ চালায় নিতে পারবে।
একই কাজ করছে পাকিস্তান, তারা সিন্ধকে লক ডাউন করছে, কিন্তু বাকি ৩টা প্রদেশ করে নাই।
একইভাবে সৌদি আরবও, সে তার কাতিফ অঞ্চল লক ডাউন করে দিছে।
মানে কয়েকটা অঞ্চল পৃথক করে দিলেও, বাকিগুলো কাজ চালিয়ে নিতে পারবে।
কিন্তু বাংলাদেশে তো সব ঢাকা কেন্দ্রীক, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা নাই।
ফলে ঢাকাকে লক ডাউন করা মানে পুরো দেশের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়া।
তাহলে পুরো দেশ চালাবেই বা কে ?
যেহেতু লক ডাউন সম্ভব না, তাই সরকার শ্যাট ডাউন করে দিছে।
কিন্তু ঘটনা হইছে ঢাকাতে তো স্থায়ী বাসিন্দা খুব কম।
ইতালিতে সংকট হইছে, প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেমন বাংলাদেশে চলে আসছে,
ঠিক তেমনি ঢাকাকে যখন তারা সংকটপূর্ণ মনে করছে, তখন তারা একই সূত্রে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।
ফলে ভাইরাস ভীতির সূত্র অনুসারে ইতালি থেকে যেমন ভাইরাস বাংলাদেশে আসছে,
ঠিক একইভাবে শ্যাট ডাউন করার কারণে ঢাকা থেকে ভাইরাস ৬৪ জেলা কিংবা ৮৫ হাজার গ্রামে ছড়ায় গেলো। হয়ত গাড়িঘোড়া কিছু বন্ধ করার প্ল্যান থাকতে পারে, কিন্তু তাতেও লাভ হবে না, বাংলাদেশ এত ছোট, কেউ যদি ঢাকা থেকে অন্য জেলায় যেতে চায়, তবে অন্য এলাকায় যাবেই, আটকাতে পারবে না।
আর তাছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের স্থায়ী নিবাস আর বর্তমান নিবাস বলে দুটি ঠিকানা আছে কি না, তা আমার জানা নাই, কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের কিনতু দুইটা ঠিকানা আছে। ফলে গোলযোগ দেখা দিলে মানুষ বর্তমান নিবাস থেকে স্থায়ী নিবাসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবেই, সেটা কেউ আটকাতে পারবে না। ইউরোপ-আমেরিকা অনেক বড়, ফলে ট্রেন-বাস, রাস্তা বন্ধ করতে কাজ হবে, কিন্তু বাংলাদেশে সেটা সম্ভব না, কারণ বাংলাদেশ অনেক ছোট। সমস্যা হইলো ইউরোপ-আমেরিকার সিস্টেম কপি করে বাংলাদেশে চালাইলেই কাজ হবে, এমনটা ভাবা বোকামি।
তারমানে দাড়াচ্ছে, এই যে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলো,
ভাইরাস ভীতিতে যারা বিশ্বাস করে, তাদের হিসেবে মতেই এতে আসলে কোন উপকারই হলো না, বরং ক্ষতি আরো বৃহৎ পরিসরে ছড়ায় পড়লো। তাদের দৃষ্টিতেই করোনা হয়ে গেলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন।
ছবি : গতকাল ছুটির ঘোষনার পর কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিট কাটার লাইন।