বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ-কে হিন্দু ধর্ম থেকে মুক্ত করে প্রাথমিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষকরণ। এন.সি- ৩৮৬

বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ-কে হিন্দু ধর্ম থেকে মুক্ত করে প্রাথমিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষকরণ
Image result for গাছবাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ-কে হিন্দু ধর্ম থেকে মুক্ত করে প্রাথমিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষকরণ এরপর ইসলামীকরণ করা হচ্ছে। এটা বাঙালী হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ইলিশ-পান্তাভাতের ছবি, তালপাতার পাখার ছবি, কলা পাতায় মাছভাতের ছবি, একতারা হাতে বাউলের ছবি পয়লা বৈশাখের প্রতীক নয়। পয়লা বৈশাখের আসল প্রতীক হলো- ঘটের উপর সিন্দুর দিয়ে গনেশের আকৃতির ছবি, সিন্দুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন বানানোর ছবি, কলাপাতায় সিন্দুরের টিপ দেওয়া ছবি, আসল ছবিগুলো সবাই সংরক্ষণ করুন, প্রকাশ করুন
------------------------------------রাজেন্দ্র দত্ত
Rajendra Dutta
বন্ধুরা.. সামনে পয়লা বৈশাখ। বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেসেজ নিশ্চয়ই পাঠাবেন। কিন্তু তার আগে কিছু বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাই। সাথে আপনাদের সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। দয়া করে মন দিয়ে শুনুন।
আচ্ছা, আপনাদেরকে একটি প্রশ্ন করি। ছোটবেলায় আমরা সবাই পয়লা বৈশাখ দেখে এসেছি। নতুন পোশাক পরে বাড়ীর বড়োদের সাথে বিভিন্ন দোকানে যেতাম। নিজেদের দোকান থাকলে তো আপনাদের মননে পয়লা বৈশাখ বা শুভ নববর্ষের ছবি তো খুব স্পষ্টই হওয়া উচিত। এখন একটু ভাবুন তো … “পয়লা বৈশাখ” বললে আপনার মনে ঠিক কেমন ছবি ভেসে ওঠে। সবুজ ব্যাকগ্রাউন্ডে লাল সূর্যের ছবি, ইলিশ-পান্তাভাতের ছবি, কলা পাতায় মাছভাতের ছবি, একতারা হাতে বাউলের ছবি, মুখোশ পড়া মানুষের ছবি, কুলোয় “এসো হে বৈশাখ” লেখা মানুষের মিছিলের ছবি? নাকি, লাল মলাটের হালখাতা? ঘটের উপর সিন্দুর দিয়ে গনেশের আকৃতি করা, সিন্দুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন, কলাপাতায় সিন্দুরের টোপা ইত্যাদি। কোনটা আপনার পরিচিত ছবি... ভেবে দেখুন। যেটাই মনে হয়, অন্যকে সেন্ড করার সময় সেইরকম ছবিই ব্যবহার করুন, অন্যগুলো নয়।
কেন? এর উত্তরে, ২০১৩ সালের এরকমই একটা দিনের ঘটনা বলি। পয়লা বৈশাখের এরকমই একটি দিন একটি ছেলে পয়লা বৈশাখের ছবিসহ শুভেচ্ছা মেসেজ করবে ভাবলো ফেসবুকের কিছু বন্ধুকে। আপনারা সাধারনত যা করেন, তাই করলো সে। সোজা গুগলে গিয়ে ইমেজ সার্চ করলো ‘শুভ নববর্ষ’ লিখে.. স্ক্রীণে ফুটে উঠলো অসংখ্য ছবি। কিন্তু ‘View more’ …করে করে অনেক নিচে চলে গেলেও সে আশ্চর্য হয়ে দেখলো পয়লা বৈশাখের ছবি তো প্রচুর। কিন্তু সে পয়লা বৈশাখ-কে যেভাবে দেখে এসেছে তার সাথে একটা ছবিরও মিল নাই। একটাও পরিচিত ছবি সে একটাও পাচ্ছিল না। একটাও না! সব ছবিগুলোই তার কাছে অচেনা। তারপর সে একে একে ‘১লা বৈশাখ’ আর ‘পয়লা বৈশাখ’ লিখেও সার্চ দিলও স্ক্রোল করে করে নামিয়েই গেল অনেক নিচে। হাজার হাজার ছবি দেখা হয়ে গেল। তবু ঐ একই রকম অচেনা সব পয়লা বৈশাখের ছবি। সাইটগুলোয় ঢুকে ঢুকে সে বুঝলো এগুলো সব বাংলাদেশের পয়লা বৈশাখের ছবি। কিন্তু হিন্দু ধর্মীয় চিহ্নগুলো পুরো ভ্যানিস! একটাও নেই।
ইতিমধ্যে বাকিরা তাকে মেসেজ পাঠাতে শুরু করেছে। তাতেও সেই একই সব অচেনা ছবি। সে বুঝতে পারলো যে তারাও গুগল ইমেজে যা পেয়েছে, কিছু না ভেবে সেগুলোই পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সে ঠিক করলো সে পাঠাবে না। সে পয়লা বৈশাখের খবরের কাগজে থাকা কয়েকটা ছবি ক্যামেরায় তুলে একটু এডিট করে পাঠিয়ে দিলো।
পাঠিয়ে তো দিলো। কিন্তু মনে প্রশ্নটা খচ খচ করেই যাচ্ছিল। সে ভেবে পাচ্ছিল না যেসব বাংলাদেশি ব্লগ সাইট গুলোতে মৌলবাদীরা পয়লা বৈশাখের বিরুদ্ধে নিয়মিত গালাগালি পাড়ে। পয়লা বৈশাখ বন্ধ করার আহ্বান জানায়, তারাই তাদের সাইটগুলোয় কেন পয়লা বৈশাখের এত ছবি দিচ্ছে। আস্তে আস্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে সে নিশ্চিত হলো যে, এইটা বাংলাদেশের মৌলবাদীরা ইচ্ছা করেই করছে। এক ধরনের ষড়যন্ত্র এটা। পয়লা বৈশাখকে বাংলাদেশে বন্ধ করে দিতে পারে নি বলে তারা ঘুরপথ অবলম্বন করেছে। আর সেটা হলো হিন্দু ধর্ম থেকে পয়লা বৈশাখ-কে মুক্ত করে পয়লা বৈশাখের প্রাথমিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষকরণ, বাংলাদেশীকরণ এবং তারপর ইসলামীকরণ। একদিকে তারা হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন বাদ দিয়ে পয়লা বৈশাখের ছবি তৈরি করছে প্রচুর পরিমানে, ইনটারনেটে সেগুলি ছড়িয়ে দিচ্ছে। এবং অন্যদিকে ‘বঙ্গাব্দ’ শশাঙ্কের নয়, আকবরের তৈরি বলে উইকিপিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্লগ সাইটে প্রচার করছে বঙ্গাব্দের ইসলামীকরণের উদ্দেশ্যে।ওরা তো জানে, ভবিষ্যতে মানুষ ইনটারনেট থেকে ইনফরমেশন জোগাড় করবে, ইনটারনেটের বিভিন্ন লেখালেখিই তাদের মনন চিন্তন তৈরি করবে। তাই ওরা অনেক আগে থেকেই মানুষের চিন্তাভাবনা বদলের চেষ্টা করছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যেহেতু এক্ষেত্রে ওরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীণ তাই এই কাজটা অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে, নিরুদ্বিগ্নচিত্তে সফলতার সাথে করে চলেছে। অন্যদিকে আমরা বাঙালী হিন্দুরা চিন্তা করি কম, তাই প্রতিনিয়ত সেই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছি।
তখন সে তার এই উপলব্ধি এমন কিছু বন্ধুকে জানালো যারা গ্রাফিক্সের কাজ করে। বন্ধুরা প্রাথমিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি, কিন্তু ছেলেটি দেখিয়ে দেওয়ার পর তারা অবাক হয়ে গেল। তারা বল্লো, কিছু তো করতে হবে কিন্তু কি করা যায়! তারা ঠিক করলো তারা আবার সেইরকম ছবি বানাবে যেগুলোর সাথে ছোটবেলায় দেখা ছবির মিল আছে। এমন কিছু ফটো তুলবে, শেয়ার করবে, যেগুলোর সাথে আমাদের সংস্কৃতির মিল আছে। প্রত্যেকবছর তারা এগুলো করবে। তারা তাদের কয়েকজন বন্ধুকেও জানাবে যারা ফটো এডিটিং ইত্যাদি করে৷ তারা তাদের দেওয়া কথামতো সেই কাজগুলো নীরবেই করে চলছিল। আজ আপনারা আমাদের হিন্দু সংস্কৃতির চিহ্ন সম্বলিত পয়লা বৈশাখের যে সামান্য কিছু ছবি ইন্টারনেটে দেখেন তার অধিকাংশই তাদের তৈরি।
আপনারা ভাবছেন, আমি কেন এত কথা বলে যাচ্ছি। কেউ কেউ হয়তো এত লম্বা লেখা পড়তে বিরক্ত হচ্ছেন। আসলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ তাদেরই একজন আমাকে গত পরশু ফোন করেছিল… কথাপ্রসঙ্গে এই কথা ওঠায় তাকে অনেক হতাশ লাগলো। সে বলল, তাদের প্রচেষ্টা কোনো কাজেই লাগছে না। কেননা, একদিকে যারা এই ধরনের কাজ করছে নিজের বাঙালী সংস্কৃতির জন্য, পশ্চিমবঙ্গের জন্য, তারা সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য, হাতে গোণা, তারা সক্রিয় হলেও সেটা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। আর অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ অসচেতন কিম্বা অর্ধসচেতন হিন্দু বাঙালীতে ভর্তি, যাদের কেউ নিজের সংস্কৃতির বিরোধিতা করে, অসম্মান করে নিজেকে ইন্টেলেকচুয়াল দেখিয়ে একটু স্ট্যাটাস বাড়িয়ে নিতে চায় তো কেউ নিষ্ক্রিয় থেকে খালি ‘জয়শ্রীরাম’ বলেই, বা ভোট প্রচার করেই দায়িত্ব খালাস করতে চায়। আমার মনে হলো, সত্যিই তো, কিইবা করছি আমরা? এই ছেলেগুলির নীরবে করে যাওয়া পরিশ্রমের মূল্য দেওয়ার মানুষ পশ্চিমবঙ্গে নেই বললেই চলে। ‘জয় শ্রীরাম’ বলুন, হাজারবার বলুন, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু মনে রাখবেন, শুধু জয় শ্রীরাম বলে আপনি এগুলি রুখতে পারবেন না, আপনার সংস্কৃতি বাঁচাতে পারবেন না। বাঙালীর সংস্কৃতি বাঁচাতে ‘জয়শ্রীরাম’ যেমন অত্যাবশ্যক নয়, আবার পর্যাপ্তও নয়। নিজের বাঙালী সংস্কৃতি বাঁচানোর জন্য সংস্কৃতির প্রতিটা দিককে জানার, বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তাকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তবেই বাঙালী বাঁচবে, বাংলার সংস্কৃতি বাঁচবে, পশ্চিমবঙ্গ বাঁচবে। সেই দায়িত্ব সুধু সেই ছেলেগুলোর নয়। আপনার আমার সবার।
তাদের নিষেধের কারণে তাদের নাম নিলাম না। নামের ভক্ত তারা নন। তারা মনে করেন, এই কাজে সহমর্মী, সহযোগী এবং সহভাগী হতে পারলেই তারা শুধু সফল হবেন না, আমরা সফল হবো আমাদের সংস্কৃতির রক্ষায়, আমাদের মাতৃভূমি রক্ষায়। আমি শুধু সেই কাজের সহমর্মী তাই নিজের দায়িত্ব পালন করছি আপনাদের সচেতন করার জন্য। আপনারাও যে যেভাবে পারুন সহযোগিতা করুন নিজের মাতৃভূমিকে নিজের সংস্কৃতিকে বাঁচানোর জন্য লড়াই-এর শুধু একটাই হয় না। বিভিন্ন দিকেই এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তার জন্য সমস্ত ক্ষেত্রে নিজের সংস্কৃতির প্রতি সচেতন হতে হবে। সমস্ত দিক থেকেই তাকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তাই আপনাদের প্রতি আরেকবার জানাই, পয়লা বৈশাখে নিজের সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত ছবিই শেয়ার করুন। অনেকটা সময় নেয়ার জন্য এবং তাড়াহুড়ো করে লেখার ফলে ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। শুভ নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা সকলকে।