সরকার বন্ধ করে দিয়েছে তাদের সমুদ্রে মাছ ধরার জীবিকা। এন.সি-৩৬৪

সরকার বন্ধ করে দিয়েছে তাদের সমুদ্রে মাছ ধরার জীবিকা
Image result for সাগর
সরকার বন্ধ করে দিয়েছে তাদের সমুদ্রে মাছ ধরার জীবিকা
বাধ্য হয়ে কাফনের কাপড় পড়ে রাস্তায় নেমেছে জেলেরা
পেটে ভাত না থাকলে পরিবার নিয়ে মৃত্যু ছাড়া আর তাদের গতি নেই
(https://bit.ly/2J5SL83https://youtu.be/sDo0t8VEtAI)
২০১৫ সালে সরকার একটি আইন করে, সমুদ্রের ইকোনোমিক জোনে ২০মে থেকে ২৩শে জুলাই এই ৬৫ দিন বড় বাণিজ্যিক ট্রলিং জাহাজগুলো মাছ ধরতে পারবে না। বাংলাদেশের এ ধরনের বানিজ্যিক ট্রলিং জাহাজের সংখ্যা প্রায় ২শ’ এর মত। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করে সরকার ট্রলিং জাহাজের সাথে সকল প্রকাশ ট্রলার বা নৌকাও নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এই সব নৌকা বা ট্রলার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের মত, যা মূলত সাধারণ জেলেরা চালায়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ২০মে থেকে ২৩শে জুলাই এই ৬৫ দিন সরকার তাদের মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং পরবর্তী ২ মাস সমুদ্র থাকে উত্তাল, যার ফলে প্রায় ৪ মাস তাদের মাছশূণ্য থাকতে হবে (এছাড়া ইলিশ ধরা নিষেধ অক্টোবরে ২২ দিন)। বাংলাদেশে যে কোন জীবীকার মানুষের অফিস বা ব্যবসা যদি ৪ মাস বন্ধ করে রাখা হয়, তবে তার কি অবস্থা হবে ? তার পরিবার পরিজন কিভাবে বাচবে ? তাহলে একজন ক্ষুদ্র মৎসজীবিকে কেন জোর করে সরকার মেরে ফেলতে চাইছে ?? কারণ কি ??
২০১৫ সালে সরকার তড়িঘড়ি করে মন্ত্রী সায়েদুল হকের সময় মাছ নিষিদ্ধের এই আইন পাশ করে সরকার। তাদের দাবী আন্তর্জাতিক বিশেষ করে ভারতের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আছে। ২০১৫ সালে ভারত এই নিয়ম চালু করলে পাশ্ববর্তী দেশ থাকায় বাংলাদেশ সরকারও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ম চালু করে। কিন্তু-
১) সমস্যা হলো, ভারত বাংলাদেশ ঘেষা তার পূর্ব উপকূলগুলোতে যে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করছে তা এপ্র্রিলের ১৫ তারিখ থেকে মে’র ৩১ তারিখ, ৬১ দিন । অপরদিকে বাংলাদেশের ২০মে থেকে ২৩শে জুলাই এই ৬৫ দিন। অর্থাৎ ভারতীয় পূর্র্ উপকূলের জেলেদের মাছ ধরা নিষেধের সময় বাংলাদেশের মাছ নিষিদ্ধের ৫৩ দিন আগে শেষ হবে। এতে বাংলাদেশের মাছ না ধরার পূর্ণ সুবিধা পাবে ভারতীয় জেলেরা।
২) ভারতের ক্ষেত্রে মাছ নিষিদ্ধ শুধুমাত্র ট্রলিং জাহাজের জন্য, কিন্তু ট্রলার বা ইঞ্জিনবিহীন নৌকার জন্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ পাশ্ববর্তী দেশের আইনের সাথেও মিলে না। (https://bit.ly/2ZNOtb0)
৩) বাংলাদেশে যখন মাছ ধরা নিষেধ থাকে, ভারতেরও সমুদ্র সীমানায় তখন মাছ ধরা নিষিদ্ধ, এটা ঠিক। কিন্ত তখন ভারতীয় জাহাজ ও নৌকাগুলো বাংলাদেশের সীমানা এমনকি উপকূলে ঢুকে মাছ শিকার করতে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে বাংলাদেশের জেলেদের মাছ আটকে রেখে যে অতিরিক্ত বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে, তার পুরোটাই ভারত থেকে আসা হাজার হাজার ট্রলার তুলে নিয়ে যায়। খবরগুলো দেখুন-
ক) বাংলাদেশের সমুদ্রে অবরোধে লাভবান হবে ভারতীয় জেলেরা (https://bit.ly/2vsp1tV)
খ) ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা: কৌশলে মাছ শিকার করছে ভারত-মিয়ানমারের জেলেরা (https://bit.ly/2GUPYgw)
গ) বাংলাদেশের পানিসীমায় মাছ ধরছে ভারতীয়রা (https://bit.ly/2GWBnRL)
ঘ) বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জেলেদের হানা জাল ও মাছ লুট (https://bit.ly/2V8DAC3)
ঙ) ভারতীয় জেলেদের অবৈধ প্রবেশে বিপর্যয়ের মুখে দুবলার শুঁটকি পল্লী (https://bit.ly/2Lfvzqo)
চ) বাংলাদেশ পানিসীমায় রাজত্ব করছে ভারতীয় জেলেরা (https://bit.ly/2PEQDFt)
ছ) দেশের পানিসীমায় ঢুকে মাছ নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা, ডুবিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশী ট্রলার (https://bit.ly/2J6a2ho)
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিদেশে মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। একইসাথে দেশী বাজারের বিরাট চাহিদা পূরণ করে সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু এত লম্বা সময় (ট্রলিং জাহাজ, ট্রলার ও নৌকা) মাছ শিকার বন্ধ রেখে একদিকে যেমন রফতানি বাজার হারাবে বাংলাদেশ, অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হবে ভারতীয় নিম্নমানের মাছে। অর্থাৎ এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশী-বিদেশী দুই মার্কেট হারাচ্ছে বাংলাদেশের মাছ। উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। বেশকিছুদিন যাবত ভারত চাইছে বাংলাদেশের বাজারগুলোও দখল করতে।
অপরদিকে বাংলাদেশের মাছের বাজারগুলোতে দেশী মাছের সাথে দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতীয় মাছের সংখ্যা, যা সবারই জানা।
অর্থাৎ বাংলাদেশের বিরাট মৎসশিল্প ধ্বংস ও মৎসজীবীদের হত্যা করে ভারতের মৎসশিল্প ও মৎসজীবিদের বাচিয়ে রাখার মেগা প্রজেক্টে নেমেছে আওয়ামী সরকার।
এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে আরেক ঝামেলা। ২০১৮ এর শেষ দিকে এই একই প্রজেক্টে বিশ্বব্যাংক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোন নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গ্রহণ করেছে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা (https://bit.ly/2vze5dP)। আর বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা মানেই ক্ষুদ্রপেশাজীবিদের হত্যা করে কর্পোরেটোক্রেসির প্ল্যাটফর্ম তৈরী করা। উল্লেখ্য ২০১৯ এর জানুয়ারির শুরুর দিকে মৎস সম্পদ মন্ত্রনালয়ের এক মিটিং-এ বাংলাদেশের জেলেদের পেশা পরিবর্তন করে কিভাবে নতুন পেশায় নেয়া যায় সেটা নিয়েও আলোচনা হয়। (https://bit.ly/2GRp8pb)