দেশটাকে কি তাহলে শেষ করে দিবেন ? এন.সি-৪০৫

দেশটাকে কি তাহলে শেষ করে দিবেন ?

Image result for গাছ
দেশটাকে কি তাহলে শেষ করে দিবেন ?
গত মাসে “১০ বিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম তহবিল অনুমোদন” শীর্ষক একটি খবর আমার নজরে আসে। এই খবরের সারমর্ম হচ্ছে, বাংলাদেশের রিজার্ভে যে ৩২ বিলিয়ন ডলার আছে, এর থেকে প্রাথমিকভাবে ২ বিলিয়ন এবং ৫ বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে একটি ফান্ড করা হবে। এই ফান্ডের সাহায্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প গড়তে বিদেশী ফান্ড নিয়ে আসা হবে। (https://bit.ly/2FbMwfd)
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। ধরুন, বাংলাদেশে কোন একটা ফ্লাইওভার করতে ১০ হাজার কোটি টাকা দরকার। ধরলাম বিশ্বব্যাংক বা জাপানের সাথে চূক্তি হলো এই ফ্লাইওভার বানাতে তারা টাকা দিবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক বা জাপান এই টাকাটা দেয়ার আগে সরকারকে বলবে তারা যেন কমপক্ষে সেই ফ্লাইওভারের শুরুতে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে, তবে তারা বাকি ৯৫০০ কোটি টাকা দেবে।
কিন্তু সরকারের এই ধরনের আলগা অর্থ দেয়ার সংকট হওয়ায় অনেক প্রকল্প গ্রহণ করলেও শুরুটা দিতে পারে না বলে অনেক কাজই আটকে থাকে। তাই বিদেশের টাকাও আনতে পারে না। বিদেশের টাকাগুলো আনা যেন সহজ হয়, তাই জনগণের সম্পদ রিজার্ভের টাকার দিকে হাত বাড়িয়েছে সরকার।
‘সার্বভৌম তহবিল’ করলে ভালো হবে না খারাপ হবে ?
১) আমার দৃষ্টিতে সার্বভৌম তহবিল হচ্ছে জনগণকে মেরে ফেলার চূড়ান্ত প্ল্যান। এতদিন শুরুর টাকার অভাবে অনেক বিদেশী ঋণ সরকার আনতে পারছিলো না, ফলে দেশও সহজে ঋণে জড়াচ্ছিলো না। কিন্তু ১০ বিলিয়ন ডলার হাতে পেলে সরকার ১০ বিলিয়ন ডলার দেখিয়ে দেশকে বিদেশীদের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণী করে তুলবে এবং প্রচুর টাকা্ আত্মসাৎ তথা লুটপাট করতে পারবে।
২) উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদেশীদের থেকে প্রচুর ঋণ আসলে তার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়বে জনগণ। বর্তমানে দেশের মাথাপিছু ঋণ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু গণহারে নতুন বিদেশী ঋণ আসলে মাথাপিছু ঋণ ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষে পৌছাবে। যা এক অর্থে দেশকে বিক্রি করে দেয়ার সামিল। ঐ অবস্থা বিদেশী ঋণদাতারা বাংলাদেশ নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারবে এবং দেশের জনগণ ও ভূমির উপর অনেক বৈদিশীক সম্রাজ্যবাদী নিয়মনীতি চাপিয়ে দিবে।
৩) এর আগে আমরা দেখেছি সরকার ফিলিপাইনের জুয়ার কোটে রিজার্ভের টাকা নিয়ে গেছে। তারমানে রিজার্ভের বিরাট মজুদের দিতে তার লোভী চোখ পড়েছে। অথচ এই রিজার্ভ সম্পর্দের উপর দেশের অর্থনীতি বা মুদ্রার ভিত্তি নির্ভর করে। সেখান থেকে যদি ১০ বিলিয়ন ডলারের টাকা তুলে নেয়া হয়, তবে দেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা তৈরী হতে পারে, দেখা দিতে পারে বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতি। তখন টাকার মান এতটা নেমে যেতে পারে যেন, বাংলাদেশের মানুষকে জিম্বাবুয়ের মত ১ বস্তা টাকা নিয়ে ১টা পাউরুটি কিনতে যেতে হবে।
৪) আপনারা মাঝে মাঝে খবর দেখবেন, “১০ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন”, “২০ হাজার কোটি টাকার ৩০ প্রকল্প অনুমোদন” এই ধরনের খবর প্রতিনিয়ত ভুড়ি ভুড়ি থাকে। দেখলে মনে হবে যেন, বাংলাদেশে প্রচুর টাকা, আর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কথিত এই প্রকল্পগুলো হলো জনগণের জন্য ব্যয় বাড়ানোর ফাদ আর সরকারের লুটপাটের নতুন ধান্ধা।
বর্তমানে এই প্রকল্প এত বেশি হয়ে গেছে যে, খবরে এসেছে,
ক) “প্রকল্প ভারে ন্যুব্জ সংশোধিত এডিপি: মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১৪৫১টি, সেটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৯১৬টি, আরো বাজেট চাই” (https://bit.ly/2Wc7q4R)
খ) প্রকল্পের ভারে পিষ্ট পরিচালকরা (https://bit.ly/2UGBNjj)
গ) কাজ শেষ না করেই ৩শ’প্রকল্পের সমাপ্তি, টাকা শেষ (https://bit.ly/2W8JKOQ)
৫) আমি আপনাদের আগেই একটা সূত্র শিখিয়েছিলাম কর্পোরেটোক্রেসির বিরুদ্ধে, “উন্নয়ন চাই না, খরচ কমান”। কর্পোরেটোক্রেসি মানেই সরকার আপনাকে উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে লুটপাট করবে আর অন্যদিকে খরচ বাড়িয়ে সেই টাকা কয়েকগুন উসুল করবে। যেমন:
ক) বৈদেশিক ঋণের ভারে নুয়ে পড়েছে রেল। বর্তমানে চলমান ৪৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নেয়া ৬৩ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিষদের তাই এবার ট্রেনের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে গড়ে ২৫ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ (https://bit.ly/2TQhgvL)
খ) এলএনজি টার্মিনাল দেখিয়েও সরকার অনেক উন্নয়ন উন্নয়ন করেছিলো, সেই টার্মিনাল বানাতে এডিবি থেকে ফান্ডও নিয়ে এসেছিলো। এখন সেই এলএনজি টার্মিনালে বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার গ্যাস আমদানি করতেছে সেটার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে, ফলে জনগণের জীবনযাত্রা ব্যয় কয়েকগুন বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাস্তবে সেই গ্যাস জনগণের কোন উপকারে লাগবে না, কিন্তু খরচ বহন করতে হবে জনগণকেই।
সরকার যে কর্পোরেটোক্রেসি নামক নতুন পলিসি দিয়ে দেশ বিক্রির ধান্ধা শুরু করেছে, সেটা সম্পর্কে আপনাদেরকে আমি আগেই খবর দিয়েছিলাম, এবার ধারবাহিকভাবে আপনারা মিলিয়ে দেখুন।
যাই হোক, কর্পোরেটোক্রেসি দিয়ে কিভাবে দেশ দখল করতে হয়, তার বর্ণনা ইকোনোমিক হিটম্যান ‘জন পার্কিন্স’র লেখা এক অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারক্তি বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠার কিছু বলা আছে, সেটা দিয়েই স্ট্যাটাস শেষ করছি:
“আমরা অর্থনৈতিক ঘাতকরা যে কাজটি সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারি সেটা হচ্ছে বিশ্ব সাম্রাজ্যকে গড়ে তোলা। আমরা হচ্ছি এমন একটি বিশেষ শ্রেণী যা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাকি বিশ্বকে আমাদের কর্পোরেটক্রেসির গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা। এই কর্পোরেটক্রেসিই সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোকে নিরঙ্কুশ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। মাফিয়ার সদস্যদের মতই অর্থনৈতিক ঘাতকরা সুযোগ-সুবিধা বিলায়। এগুলো মূলত ভৌত অবকাঠামো, যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাইওয়ে, সমুদ্রবন্দর, সেতু, রেললাইন, বিমানবন্দর ও শিল্প স্থাপনা নির্মাণের জন্য ঋণ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এসব ঋণের মূল শর্ত হচ্ছে এই যে, এসব ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ যে কোন আমাদের কোম্পানীকে অবশ্যই দিতে হবে। তাই প্রকৃত অর্থে ঋণের অর্থ কখনই আমাদের বাইরে যায় না.............। ঋণের অর্থ হাতে না পেলেও ঋণগ্রহীতা দেশকে এই ঋণ সুদে আসলে পরিশোধ করতে হয়। যখন একজন অর্থনৈতিক ঘাতক পুরোপুরিভাবে সফল হয় তখন ঋণের অংক বিশালাকার ধারণ করে। তখন কয়েক বছরের মধ্যেই ঋণগ্রহীতা দেশটি ঋণখেলাপিতে পরিণত হতে বাধ্য হয়। যখনই এই ঘটনা ঘটে তখনই আমরা মাফিয়ার মত ঋণখেলাপী দেশটির টুঁটি চেপে ধরে আমাদের স্বার্থ হাসিল করি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘে আমাদের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান, ঋণখেলাপী দেশে আমাদের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন, আমাদের বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর হাতে ঋণখেলাপী দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে তুলে দেয়া অথবা ঋণখেলাপী দেশের উপর দিয়ে অবাধে আমাদের যাতায়াতের অধিকার অর্জন করা। তারপরেও ঋণখেলাপী দেশটি আমাদের কাছে ঋণীই থাকে। সেই সাথে আমাদের বিশ্ব সম্রাজ্যে আরেকটি দেশ সংযুক্ত হয়।...।”