গরুর মাংশের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫২৫ টাকা। এন.সি- ৩৪৯

গরুর মাংশের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫২৫ টাকা
Image result for সাগর
গরুর মাংশের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫২৫ টাকা
কিন্তু কসাইয়ের দোকানরা সেটা মানছে না।
অনেক কসাইকে জরিমানা করা হচ্ছে।
কিন্তু তারপরও মানতে পারছে না কসাইরা।
এক কসাই তো বলে ফেলেছে, “‘না পোষালে সিটি করপোরেশন থেকে মাংস কেনেন”।
আমি ফেসবুক ঘুরে দেখলাম- অনেকেই মাংশের দাম হ্রাসের পক্ষে।
কিন্তু আমার কথা হলো, মাংশের দাম হ্রাস আসলেই বাস্তবসম্মত কি না, সেটা আগে যাচাই করা উচিত।
ঢাকার কসাই দোকানগুলো যে রেটে গরু কিনে, সেটা আগে বুঝা উচিত।
ঢাকায় বর্তমান রেটে ১২৫ কেজি ওজনের একটি গরু, যেখানে মাংশ থাকে ১১০ কেজি, আর বাকি ১৫ কেজি মাথা, কলিজা, পায়া, ভুরি থাকে। এই ১২৫ কেজির গরুর দাম মার্কেট প্রাইজ প্রায় ৭০ হাজার টাকা বা তার সামান্য কম বেশি, খুব একটা পার্থক্য নয়।
সে হিসেবে- গড়ে ধরলে প্রতি কেজি মাংশের দাম পড়বে ৫৬০ টাকা (যদিও মাথা আর ভূড়ি, পায়ার দাম কম। সেই অতিরিক্ত টাকাটা চামমার টাকা দিয়ে যদি ব্যালেন্স করি, যদিও চামড়ার রেট খুব কম)
এরপর একটা ব্যবসায়ীর দোকান ক্রয়/ভাড়া আছে, কর্মচারি খরচ আছে, সে নিজে সারাদিন পরিশ্রম করলো, তার খরচ আছে। দোকানের পানি, বিদ্যুৎ। এরপর আছে ঋণ। সব মিলায় একজন ব্যবসায়ী কতটাকা কেজি দরে গরুর মাংশ বিক্রি করলে তার লাভ হবে ? (কোরবানীর সময় ৭০ হাজার টাকার গরু ছিলতে ৭ হাজার টাকা লাগতো, এখানে কিন্তু সেটা নেই। )
তাই খুব স্বাভাবিক হিসেব- গরুর মাংশের দাম ৬০০ বা ৬০০+ হওয়া বাস্তবসম্মত, সেখানে ৫২৫ টাকা কখন গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তারপরও যে সব ব্যবসায়ী ৫৬০ টাকায় দিচ্ছে, তারা কতটুকু মাপে সঠিক দিচ্ছে সেটা হিসেব করা দরকার আছে।
আমার পাওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে অনেকগুলো মাংশ ব্যবসায়ী বা কসাই তাদের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছে, কারণ এ পেশায় তারা লাভবান হতে পারছে না। যদি গরুর মাংশ বিক্রি করে তারা লাভবান হতোই, তবে নিশ্চয়ই তারা পেশা ছেড়ে দিতো না ।
আসলে আমরা লাভ দেখলেই লাফ দেই। কিন্তু যারা আমাদের লাভবান হওয়ার পথ যারা দেখিয়ে দিলো, তাদের উদ্দেশ্যটা যাচাই করি না। যেমন- গার্মেন্টস সেক্টরে কিছু বিদেশী এনজিও রব উঠিয়ে দিলো শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হবে। খুব ভালো কথা। কিন্তু এমনিতেই লসে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, এর মধ্যে বেতন বাড়াতে গিয়ে পথে বসলো অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। বর্তমানে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসার কত করুণ অবস্থা, সেটা অনেকেরই জানা। অনেক গার্মেন্টস বিদেশী ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়েছে বলে শুনেছি।
যাই হোক, কথা বলছিলাম, গরুর মাংশের দাম নিয়ে। আসলে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা দরকার আছে। মনিটরিং সিস্টেম হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সামঞ্জস্য করা। কিন্তু মিডিয়ায় দেখানোর জন্য শুধু ক্রেতার পক্ষ নিবেন, কিন্তু বিক্রেতার উৎপাদন/ক্রয় খরচ দেখবেন না, তাহলে কিন্তু হবে না।
আসলে আমার মনে হয়, ঝামেলাটা অন্যখানে। আমি আগেও বলেছি, ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল বানাবেন, ৩৬ হাজার কোটি টাকা দিয়ে চক্রাকার রেল বানাবেন, ৫০ হাজার কোটি টাকা দি বিমানবন্দর বানাবেন, ১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপপুরে, দেড় লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাবেন, বিদেশ থেকে তরল গ্যাস আমদানি করবেন, এই খরচটা কে দিবে ? কার পকেট থেকে যাবে ? এই খরচটা কিন্তু জনগণের পকেট থেকে টান দেয়া হবে। আর সেটা হবে দেশী ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে। এটা কিন্তু দেশী ব্যবসায়ীর দোষ নয়, বরং তিনি যদি পণ্যের দাম না বাড়ান তখন উল্টা উনার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যখন দাম বাড়াবেন, তখন সরকার নিজের দায় সারবে বাজার মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে। চাপ দেবে ব্যবসায়ীদের, দেখাবে সব দোষ ব্যবসায়ীদের । পাবালিকও খুশি। এতে অনেক দেশী ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে, কিন্তু মনে রাখবেন, এতে পন্যের দাম কখনই কমবে না, কারণ সমস্যাটা ব্যবসায়ীদের মধ্যে নয়, সমস্যাটা অন্যখানে।
আসলে সম্মিলিতভাবে দেশের উৎপাদন খাত ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এটা কর্পোরটোক্রেসি’ আসার পূর্বলক্ষণ। শুনেছি বাংলাদেশে নাকি বেশি কিছুদিন যাবত জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন জায়ান্ট চেইন শপ 7-Eleven । তাদের ইচ্ছা নাকি বাংলাদেশে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার শাখা খুলবে। এই চেইনশপ পুরো দেশজুড়ে থাকলে মানুষ আর সাধারণ দোকান থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী ক্রয় করবে না, তাদের থেকে ক্রয় করবে। এসব বিদেশী কোম্পানি আসার আগে বিভিন্ন দেশী পন্য, তাদের মান ও দাম নিয়ে নানান উপায়ে প্রশ্ন তোলা হবে। দেশী ব্যবসায়ী ও তাদের পন্য মার্কেট আউট করে তারপর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিদেশীরা আসবে। দেখা যাক কি হয়।