বাংলাদেশের ইকোনোমিক হিটম্যান !!!এন.সি-৪০৩

বাংলাদেশের ইকোনোমিক হিটম্যান !!!

বাংলাদেশের ইকোনোমিক হিটম্যান !!!
Related imageজনপার্কিন্সের লেখা `এক অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারক্তি' বইয়ে `জন পার্কিন্স' নিজেকে অর্থনৈতিক ঘাতক বা ইকোনোমিক হিটম্যান বলে দাবী করেছিলো। জনপার্কিন্স জানায়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ’র মত আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা কাজ করে। তাদের কাজ হচ্ছে ভুল আার্থিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ভুল পথে পরিচালিত করা এবং সম্রাজ্যবাদীদের গোলাম বানানো।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেছে, বাংলাদেশ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৮.১৩% এবং মাথাপিছু আয় হবে ১৯০৯ ডলার। এই তথ্যের উৎস বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) (https://bit.ly/2CtQkIk)।
উল্লেখ্য
বিশ্বব্যাংক বলেছিলো, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭%
(https://bit.ly/2OkNKJ9)
আর আইএমএফ বলেছিলো প্রবৃদ্ধি হবে ৭.১%
(https://bit.ly/2OhMsyB)।
কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ থেকেও তাদের পূর্বাভাস বাড়িয়ে বাড়িয়ে ৮.১৩% বলে ঘোষণা করলো। উল্লেখ্য বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর বর্তমান মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন (অতিরিক্ত সচিব), তাকে উপর থেকে সাপোর্ট দেয় পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী।
অতিরিক্ত সচিব কৃষ্ণা গায়েন নামটা ফেসবুক জগতের কাছে অধিক পরিচিত, কারণ কৃষ্ণা গায়েনের বোন হলো কট্টর ইসলামবিদ্বেষী ও গোমাতা আদর্শে বিশ্বাসী অদিতি ফাল্গুনী গায়েন। (ফেসবুক আইডি: https://www.facebook.com/audity.falguni.9)
জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি কি নির্দেশ করে ?
জিডিপি সূত্র: জিডিপি = ভোগ + বিনিয়োগ + (সরকারী ব্যয়) + (রপ্তানি − আমদানি)
ক) জিডিপি যেহেতু ব্যয়ের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়,
তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে বুঝতে হবে মানুষের ব্যয়ও বেড়ে গেছে।
আগে মানুষ যে চাল ৪০ টাকা করে কিনতো, সেটা ৬০ টাকা করে কিনে।
তাই জিডিপি বেড়েছে।
খ) জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে বোঝায় যায়, সরকার অনেক অনেক উন্নয়ন (!) প্রকল্প গ্রহণ করতেছে। এবং সেতু-ফ্লাইওভারের নাম দিয়ে দেশকে ঋণের বোঝায় ডুবায় দিচ্ছে।
গ) জিডিপির প্রবৃদ্ধি যেহেতু বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে, তাই ব্যাংক থেকে ঋণ বা বিনিয়োগের নাম করে যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে সেটাও জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে বেগবান করেছে। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ব্যাংক লুটপাটও নির্দেশ করে।
এবার আসুন মাথাপিছু আয়ের হিসেবে।
পরিসংখ্যা ব্যুরো দাবি করছে করছে মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার।
১৯০৯ ডলার= ১ লক্ষ ৫২ হাজার, ৭২০ টাকা
১২ মাসে আয় ১,৫২,৭২০ টাকা হলে ১ মাসের আয়= ১২,৭২৬ টাকা
বাংলাদেশের প্রত্যেক জনগণের মাথাপিছু আয় এটা। সেটা ৯০ বছরের বৃদ্ধ হোক, ১ দিনের শিশু হোক।
সে হিসেবে ৫ জন সদস্যের একটি পরিবার যদি ধরি,
তবে ১টি পরিবারের মাসিক আয় = ১২,৭২৬ গুন ৫ = ৬৩,৬৩০ টাকা
এবার আমাকে বলুন,
বাংলাদেশে কতগুলো পরিবার আছে, যাদের মাসিক আয় ৬৩ হাজার টাকা ?
শহরে পরিবারগুলোর মধ্যে মাসিক আয় ৬৩ হাজার টাকা কতগুলো পরিবারের আছে ?
আর গ্রামের পরিবারগুলোর মধ্যে মাসিক আয় ৬৩ হাজার টাকা কতগুলো পরিবারের আছে ?
এই হিসেব শেষ না করা পর্যন্ত মাথাপিছু আয় ‘খায় না মাথায় দেয়’ সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় কোন রাষ্ট্রগুলোতে ?
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে-
বাংলাদেশের থেকে বেশি জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আছে,
লিবিয়া, ইথোপিয়া, ঘানা, গিনি, আর্মেনিয়া, আইভরি কোস্ট
(https://en.wikipedia.org/…/List_of_countries_by_real_GDP_gr…)
উল্লেখ্য লিবিয়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ, যেখানে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো গণহারে তাদের তেল সম্পদ তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের প্রবৃদ্ধিও অর্ধশত মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
একইভাবে ইথোপিয়া, গিনি, আইভরি কোস্টসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে চলছে গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ। সেখানে বিদেশী সেনা মোতায়েন করে চলছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি।
ঘানার অর্থনীতি খারাপ বলে তাদের ফুটবলাররা নিজ দেশে ভাত না পেয়ে বাংলাদেশে এসে চুরি-চামারিতে যুক্ত হচ্ছে। আর্মেনিয়াতে কিছুদিন আগে চরম দারিদ্রতার কারণে জনগণের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সার্জ সার্গিয়ান । (https://bit.ly/2HS8FlV)
সরকার কেন জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখায় ?
বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের আকৃষ্ট করার জন্য, বিনিয়োগ বা ঋণের নামে তাদের ডলার নেয়ার জন্য।
কারণ বিদেশীরা যত ঋণ দিবে, সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের নামে তত বেশি লোপাট করতে পারবে।
জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি নির্দেশ করে, বিদেশীদের আসার পথ অধিকহারে উন্মুক্ত।
মজার ব্যাপার হলো আগে বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ এসব ভুয়া পরিসংখ্যান দেখিয়ে ভুক্তভোগী রাষ্ট্রগুলোকে আকৃষ্ট করতো,
কিন্তু এখন বাংলাদেশ সরকার নিজের আমলা-কর্মকর্তাদের দিয়ে এসব ভুয়া পরিসংখ্যান তৈরী করছে দেশকে নিলামে তোলার জন্য।
জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকলে আমরা কেমন অর্থনীতির দিকে যাবো ?
যেহেতু বাংলাদেশের থেকে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত, দুর্ভিক্ষক্লিষ্ট ও রোগাক্রান্ত লিবিয়া, ইথোাপিয়া, আইভরি কোস্ট, ঘানা, গিনি বা আর্মেনিয়ার। তাই বাংলাদেশের যত প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে তত বাংলাদেশ লিবিয়া, ইথোাপিয়া, আইভরি কোস্ট, ঘানা, গিনি বা আর্মেনিয়ার মত হয়ে যাবে, যেসব দেশ প্রাকৃতিকভাবে অনেক সম্পদপূর্ণ, কিন্তু তাদের বিশ্বাসঘাতক শাসকরা টাকার লোভে সেসব সম্পদ বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে এবং শেষে ঐ দেশের মানুষ নিজের প্রাণ দিয়ে সেই বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য পরিশোধ করছে।
ছবি : বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন (অতিরিক্ত সচিব)