দেশে বাড়বে পর্যটন, কি প্রভাব পড়বে সাধারণ জনগণের উপর ?

দেশে বাড়বে পর্যটন, কি প্রভাব পড়বে 
সাধারণ জনগণের উপর ?

Image result for নদী
দেশে বাড়বে পর্যটন, কি প্রভাব পড়বে সাধারণ জনগণের উপর ?
আওয়ামী সরকার খুব দ্রুত দেশে পর্যটনের বিস্তার করার লক্ষে কাজ শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আজকে খবরে দেখলাম, পর্যটন মন্ত্রী বলেছে, “পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানসমূহে উন্নত অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটন সুবিধাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।…..এ রকম ৮০০ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।” (https://bit.ly/2H9H9AB)
আমি যেটা বুঝতেছি, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরীর ঘোষণার পর, বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে পর্যটন বান্ধব করতে চাইছে শেখ হাসিনা। যেন বিদেশীরা বাংলাদেশ ঘুড়ে দেখে ভালো লাগে এবং বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হয়। এই পর্যটন স্পটগুলো কারা সিলেক্ট করে দিচ্ছে তা জানি না, কিন্তু এর মধ্যে উল্টা পলিসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন, শিল্প-বাণিজ্য তুলে পর্যটন করা হচ্ছে, (পুরান ঢাকা, বুড়িগঙ্গার পার), আর পর্যটন এলাকা তুলে শিল্প এলাকা করা হচ্ছে (সুন্দরবনের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তার আশেপাশে শিল্পাঞ্চল)।
শুধু তাই নয়, হকার উচ্ছেদ করে ফুটপাথগুলোকে বাগান বানানো হচ্ছে, সেটা ঐ একই ইচ্ছা থেকে। এছাড়া বস্তিগুলোতে আগুন লাগানো হচ্ছে একই কারণে, দৃশ্যত বস্তি দেখতে ভালো লাগে না। বিদেশীরা এসে বস্তি দেখে কি বলবে ? তাই তাদের আগুন লাগায় দ্রুত তাড়িয়ে দাও। এছাড়া ভাঙ্গা মন্দিরগুরো সংস্কার করতে ২২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে (https://bit.ly/2J1VK2Z), যাতে বিদেশীরা এসে বলতে না পারে, “দেখেছো, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনলায়গুলোর কোন খবর নেয় না, কি ভাঙ্গাচুরা দশা” ।
এছাড়া দেশে নতুন ১০টি ফাইভ স্টার হোটেল নির্মিত হচ্ছে (https://bit.ly/2NEYhxx), এর মধ্যে হাতিরঝিলের পাশে হচ্ছে ২৯ তলা ফাইভ স্টার হোটেল। এসব হোটেলে আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ীদের আড়ালে ইনভেস্ট করছে আমেরিকা, ফ্রান্স বা বিশ্বব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া ঢাকায় নতুন করে আরেকটা বিমানবন্দর প্রস্তাব করা হয়েছে (https://bit.ly/2VUALkd)।
এছাড়া জনগণের টাকায় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত বড় ব্যয়ের প্রজেক্ট করা হচ্ছে বিদেশীদের সুন্দর করে সবকিছু দেখানোর জন্য।(এসব যদি সত্যিই জনগণের জন্য করা হতো, তবে অবশ্যই ঢাকায় যানজট কমতো, যাতায়াত ভাড়া কমতো, কিন্তু কোনটাই হয়নি।)
বাংলাদেশ যদি সুন্দর করে সাজানো গোছানো হয় তবে আমার কেন খারাপ লাগবে ?
আমার তো ভালো লাগারই কথা ।
যদি ভালো না লাগে তবে বুঝতে হবে আমি আওয়ামীবিদ্বেষী বা উন্নয়নবিরোধী।
কিন্তু আমি চাই, প্রতিটা জিনিস জনগণের পক্ষ নিয়ে বিবেচনা করতে।
আমি আবার বলছি, আমি উন্নয়নের পক্ষে নই, আমি জনগণের পক্ষে।
জনগণের পক্ষে যদি ছোট কাজও হয়, তবে প্রকৃতঅর্থে আমি তাকে উন্নয়ন বলবো,
কিন্তু দেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এমন দৃশ্যত্ব যত বড় কাজ হোক,
সেটাকে আমি প্রকৃত উন্নয়ন বলতে নারাজ।
পর্যটন শিল্প বৃদ্ধি করেন ভালো কথা, কিন্তু সেটা স্ব-নির্ভর শিল্প খাত ধ্বংস করে কেন ?
তারমানে কি আপনারা চান, আজকে স্বনির্ভর লোকগুলো আগামীকাল পর্যটনের বয়-বেয়ারা-গাইড আর এসকোর্টের মধ্যে জীবিকা খুজে নিক?
বিশেষ পর্যটন ভিত্তিক অর্থনীতি তৈরীর জন্য প্রথম উঠে পড়ে লাগতে দেখেছি, বাংলাদেশের কূটনীতিক সাঈদা মুনা তাসনিমকে। এই মহিলা সম্ভবত থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত থাকার সময়, বাংলাদেশে বৌদ্ধ ভিত্তিক পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য বলে । এ লক্ষে সে বাংলাদেশের ৫০০ বৌদ্ধ মন্দিরকে চিহ্নিত করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে পর্যটন উন্নয়ন করার পরামর্শ দেয়। (https://bit.ly/2EZrZLP)
সাঈদা তাসনিমা মুনাকে আপনারা চিনতে পারছেন কি না জানি না, একটু সহজ করে দেই, গত কয়েকদিন আগে আল জাজিরার সাথে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গহ্বর রিজভীর এক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পাশ থেকে অদ্ভুত চেহারার এক বাংলাদেশী মহিলা রোহিঙ্গা নিয়ে কথা বলে (https://bit.ly/2XNXmAI)। কোন একটা অদৃশ্য আইটি সেল বিষয়টিকে দেশে ভাইরাল করার চেষ্টা করে। ঐ মহিলাটাই হচ্ছে সাঈদা মুনা তাসনিম। পতিতাবৃত্তির স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত ব্যাংককে গিয়ে সে বুঝতে পারে, এই সিস্টেমটাই বাংলাদেশে আনা দরকার। তখন সে বাংলাদেশে ঐ সিস্টেম আনার পক্ষে বুদ্ধি দেয়। লোকমুখে প্রচার আছে, এই সাঈদা মুনা তাসনিম বাংলাদেশের অনেক নারীকে কাজ দেয়ার কথা বলে থাইল্যান্ডে নিয়ে গেছে এবং সেখানে এসকোর্ট সার্ভিস বা পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করে তাদের থেকে কমিশনের ভাগ নিয়েছে।
সত্যিই বলতে, আপনারা পর্যটন বলতে কি বুঝেন জানি না, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, কথিত পর্যটকরা শুধু ঐ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আকৃষ্ট হয় না, তাদেরকে ঐ দেশের নারীর মাংশ দ্বারাও আকৃষ্ট করতে হয়। তাই পর্যটন ব্যাপক হওয়া মানে, দেশে বিরাট অর্থে আন্তর্জাতিক খদ্দের ধরার জন্য পতিতাবৃত্তি বা এসকোর্ট সার্ভিসের সূচনা করা।
বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্য সম্রাজ্যবাদীরা নানাভাবে আগে থেকে আমাদের শিক্ষিত মহলের ব্রেনে পয়জন ঢুকাচ্ছে। আপনাদের মনে থাকার কথা, কিছুদিন আগে, আইমান (মডেল ইউনাইটেড নেশন) নামক একটি ক্লাবের ভিডিও লিক হয় (https://bit.ly/2UqpV4N)। ঐ ভিডিওতে স্কুলের মেয়েদের স্টেজে উঠে আন্তর্জাতিক মানের পতিতাদের মত অঙ্গভঙ্গী করতে দেখা যায়। এর কারণ কি ?
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ঢাকায় এই ক্লাবের এক প্রোগ্রামে আলোচনার বিষয় ছিলো “এসকর্ট শিল্পের বৈধতা দেওয়া প্রসঙ্গে”। ঐ অনুষ্ঠান উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বাণীও দিয়েছিলো। (https://bit.ly/2ESdkki)
আপনি আজকে পতিতাবৃত্তির কথা বলে যে এসকোর্ট সার্ভিসের বিরোধীতা করছেন, কালকে আপনার বাচ্চাই স্কুলের ক্লাব থেকে এসে এসকোর্ট সার্ভিসের গুরুত্ব নিয়ে আপনার সাথে বিতর্ক শুরু করবে ! নৈতিকতা ছুড়ে ফেলে এনজয়মেন্ট আর ইনকামকেই বড় করে তুলে ধরবে। তখন আপনার কিছুই বলার থাকবে না।
যাই হোক, যেটা আলোচনা করছিলাম, দেশীয় উৎপাদনকে ভেঙ্গে দিয়ে এই পর্যটন নির্ভর বা বিদেশী নির্ভর অর্থনীতি আমাদের জন্য কেমন হবে ?
পযর্টন নির্ভর বাজার অর্থনীতি হলে সব কিছুর দাম খুব বেড়ে যাবে (কক্সবাজারের অর্থনীতি যেমন), আমাদেরকে বিদেশীদের সাথে প্রতিযোগীতা করে সবকিছু কিনতে হবে। নিজেদের উৎপাদন বন্ধ থাকায় আমরা বিদেশীদের দয়াদাক্ষিণের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাবো।
উল্লেখ্য, বিদেশী পর্যটকদের দয়া দাক্ষিণ্য পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তাদের দেশী নারীর মাংশ আর মদ সার্ভিস দেয়া। এই দুইটা দিলেই বিদেশীদের থেকে বেশি পাওয়া যাবে, তাই নিরুপায় হয়েই মানুষ ঐ দিকেই বেশি ঝুকে যাবে। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত হচেছ স্বনির্ভর অর্থনীতি, যেটা আমাদের আছে। আমাদের দেশে মাটির মধ্যে বীজ বুনলে গাছ হওয়া, ফল ধরা শুরু করে। আমাদের শিক্ষার হার বা নৈতিকতাও কম নয়, স্বাধীনতা পেয়েছি অর্ধ শতাব্দী হয়ে গেছে। সেদিক বিবেচনায় আমাদের তো আরো স্বনির্ভর হওয়া, গবেষণা-শিল্প বাড়িয়ে আরো বেশি আত্মমর্যাদাসম্প্ন্ন হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সেটা না করে, দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে বিদেশীদের এনে আমরা কেন দক্ষিণ আমেরিকা বা থাইল্যান্ডের মত নারী মাংশের বাজার চালু করবো ?
আমার লেখা দেখে হয়ত অনেকে মাইন্ড করতে পারেন,
ভাবতে পারেন, বাংলাদেশের মানুষের মন-মানসিকতা এত নিচু হয়ে যায়নি, যে নিজের ঘরের মেয়েকে বিদেশীদের জন্য বাজারে তুলবে ?
আপনার ধারণা যদি সঠিক হয় এবং আমি যদি ভুল হই, তবে সেটাই যেন সত্য হয়।
কিন্তু ভাই, ঠেকায় পড়লে মানুষের মধ্যে যে বাচ-বিচার থাকে না।
এখনই ল্যাক্স ফটো সুন্দরী প্রতিয়োগীতায় নামে নারীদের দেহ ব্যবসা হয়, এটা তো অনেকেই জানে, তারপরও তো হাজার হাজার স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির মেয়ে এইসব প্রতিযোগীতায় নাম লেখাচ্ছে, সৌদি গেলে নারীদের কোন নিরাপত্তা থাকে না, এটাও সবাই জানে, তারপরও কি নারী শ্রমিকদের সৌদি আসা-যাওয়া বন্ধ আছে ?
দেশে যখন প্রাইভেট চাকুরী ব্যবসা সব বন্ধ হয়ে যাবে, খাবার খরচ উচ্চ, বাড়িভাড়া যখন আকাশ চুম্বি হবে,
তখন ভদ্র ঘরগুলোও ভদ্রতা ছেড়ে টাকা কামানোর সহজ উপায় খুজবে।
সুদ খাওয়া ইসলামে নিষেধ, তারপরও অধিকাংশ মুসলমান যেমন সুদের মধ্যে হালাল খূজে নিয়েছে,
নাটক সিনেমা নাচ ইসলামে নিষেধ হওয়ার পরও যেমন অধিকাংশ মুসলমান যেমন মধ্যে হালাল খুজে নিচ্ছে,
ঠিক তেমনি, ঠেকায় পড়লে এসকোর্টের মধ্যেও হালাল খুজে নিবে তারা,
তখন নৈতিকতা আর ফতওয়ার দোহাই দিয়ে কিছুতেই তাদের আটকাতে পারবেন না।
এখন উবারের নারী চালক শাহনাজ আক্তার যেমন বলে, “এগুলো মধ্যে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, সংকোচ ভুলে যাও”
তেমনি তখনও অনেক নারী এসকোর্ট বলবে, “এসকোর্টের মধ্যে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, সংকোচ ভুলে, এগিয়ে আসো, নিজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করো। আর তোমার মাধ্যমে যদি একটা পর্যটক খুশি হয়ে যায় এবং বাংলাদেশে ইনভেস্ট করে, তবে তুমি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখলে।