কেন এবং কি উদ্দেশ্যে সরকারী উদ্যোগে ‘কুসংষ্কার রীতি’ আমদানি করা হলো ? এন.সি- ৩৯৯

কেন এবং কি উদ্দেশ্যে সরকারী উদ্যোগে 
‘কুসংষ্কার রীতি’ আমদানি করা হলো ?

কেন এবং কি উদ্দেশ্যে সরকারী উদ্যোগে ‘কুসংষ্কার রীতি’ আমদানি করা হলো ?
২৫শে মার্চ উপলক্ষে একটি বিষয় নিশ্চয়ই আপনাদের সবার নজরে এসেছে। বিষয়টি হলো সরকারি পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে দেশজুড়ে ২৫ মার্চ উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্জলন করা। খবরগুলো:
Related image১) “লক্ষাধিক মোমবাতি প্রজ্বলন করে শহীদদের স্মরণ করলেন বগুড়াবাসী”
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, ১ লাখ ৩০ হাজার মোমবাতি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই মোমবাতি প্রজ্বালন করেছেন। (https://bit.ly/2YjvWCZ)
২) “নড়াইলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন”
মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন—জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। (https://bit.ly/2HOm8Lr)
৩) “মেহেরপুরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন”
সোমবার সন্ধায় শহরের শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
(https://bit.ly/2TZ7E2C)
৪) ``মোমবাতি জ্বালিয়ে নাটোরে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন”
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মোমবাতি জ্বালিয়ে শোক র‌্যালী বের করা হয়। (https://bit.ly/2U3GyHK)
৫) “নরসিংদীতে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন”
২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছে জেলার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন।
(https://bit.ly/2TDO9rq)
৬) “আড়াই হাজার মোমবাতি জ্বেলে শহীদদের স্মরণ”
“ভয়াল ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আড়াই হাজার মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। ”
(https://bit.ly/2YnyArm)
৮) “রাজশাহীতে ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জলন”
সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় রাজশাহী নগরীর হাদির মোড় বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে জেলা প্রশাসন। (https://bit.ly/2Ty9Zwj)
৯) “যশোরে হাজার মোমবাতির আলোয় ভয়াল ২৫ মার্চ স্মরণ”
প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় সেদিনের বীর শহীদদের।
(https://bit.ly/2JP6FNw)
১০) “সাতক্ষীরায় জেলা ২৫শে মার্চ উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্জলন”
২৫মার্চ সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা চত্বরে স্থাপিত বীর মুক্তিযোদ্ধা স্তম্ভের পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্বলন হয়। (https://bit.ly/2Oq5jHJ)
এবার আসুন মৃতদের উদ্দেশ্যে এ ধরনের মোমবাতি প্রজ্জলন করার রীতি কোথা থেকে আসলো তা জানি:
১) প্যাগান ধর্ম: মৃতের জন্য প্রদীপ জ্বালানোর প্যাগান বা মূর্তিপূজকদের একটি বিশেষ প্রথা। এ সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলছে-
মৃতের জন্য প্রদীপ : প্যাগানদের একটা রীতি হলো মৃতের জন্য একটি প্রদীপ দেয়া, যেন মৃতব্যক্তি পরবর্তীতে জীবনে আলো পায়। তাদের বিশ্বাস পরবর্তী জীবনের বেশিরভাগ অংশই হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাই তারা তাদেরকে আলোকিত করতে এই আলো দেয়া। এই কালচার এশিয়াটিক অঞ্চল থেকে উৎপত্তি, Phoenicia এবং Punic colonies- তেও এই কালচার পালিত হয়। ইউরোপে রোমের অধিনে দেশগুলোতে এই রীতি দেখা যায় । (https://tinyurl.com/y3lwhwpf)
২) ডাইনী দমনে যাদুবিদ্যা :
ডাইনী দমনে যাদুবিদ্যার সাথেও এই মোমবাতি রীতি জড়িত। যাদুকররা বিশ্বাস করে মোমবাতি জ্বালিয়ে মৃতের আত্মাকে নিয়ে আসা হয় । (https://tinyurl.com/y23arfny)
(৩) হিন্দু ধর্ম :
দিপাবলী পূজার সময় হিন্দুরা বাড়ি বাড়ি প্রদীপ জালায়। হিন্দুদের দাবি, নিকষ অন্ধকারেই অশুভ আত্মা ও অশুভ শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই এই অশুভ শক্তিকে দুর্বল করতে ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় বাতি বা প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। (https://tinyurl.com/y3tns69f)
(৪) শিখ ও জৈন :
হিন্দু ধর্মের দিপাবলীর দিনটি শিখ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরাও পালন করে। তারা এ দিনটিতে মোমবাতি জ্বালায়। (https://tinyurl.com/y4267hol) তবে শিখরা এ দিবসটি নাম দিয়েছে Bandi Chhor Divas । (https://en.wikipedia.org/wiki/Bandi_Chhor_Divas)।
(৫) বৌদ্ধ ধর্ম:
মোমবাতি জ্বালিয়ে পূজা ও ধ্যান করা বৌদ্ধ ধর্মের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। (https://tinyurl.com/y36kmjwb)
(৬) খ্রিস্টান ধর্ম:
আব্রাহামিক ধর্ম হলেও পরবর্তীতে খ্রিস্টান ধর্মেও পৌত্তলিকতা বা প্যাগানিজম প্রবেশ করে। তাই মৃত ব্যক্তির জন্য মোমবাতি জ্বালানো কালচারটা খ্রিস্টানদের একটি বড় কালচার। এ দিবসটি তারা পালন করে All Soul’s Day নামে। খ্রিস্টানরা এ দিবসটি পালন করে ২রা নভেম্বর। খ্রিস্টানদের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক, বাইজেন্টাইন ক্যাথলিক, ইস্টার্ন অর্থডক্স, প্রটেস্টান্ট, অ্যাঙ্গলিকানদের মধ্যে এ দিবস পালনের রীতি দেখা যায়। (https://tinyurl.com/y485d8ud)
(৭) ইহুদী ধর্ম :
ইহুদী ধর্মের মধ্যে বর্তমানে অনেক পৌত্তলিকতা বা প্যাগানিজম ঢুকে গেছে। তাই মৃতব্যক্তিদের জন্য মোমবাতি জ্বালানোর কালচারটা ইহুদী ধর্মও করে। ইহুদীদের এ অনুষ্ঠানটির নাম Yahrzeit candle । এ সময় ২৬ ঘন্টা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। (https://en.wikipedia.org/wiki/Yahrzeit_candle)
“মৃতের আত্মাকে শান্তি দিতে মোমবাতি”
অথবা ‘মৃতকে স্মরণ করে মোমবাতি’
অথবা ‘মৃতকে আলো দিতে মোমবাতি’
এই তিনটি বিষয় ইসলামধর্ম ভিন্ন অন্য ধর্ম বা রিচুয়ালগুলো সমর্থন করে।
বাংলাদেশে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এবং দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এ অবস্থায় হঠাৎ করে প্রশাসনের উদ্যোগে, দেশটির একটি জাতীয় উপলক্ষকে (২৫শে মার্চ) কেন্দ্র করে এমন একটি সংস্কৃতি আমদানি করা হলো, যা দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সংস্কৃতি ও চেতনার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ধর্মনিরপেক্ষতার নাম দিয়ে বাংলাদেশে অনেক কিছুর প্রচলন করা হয়, কিন্তু এই মোমবাতি প্রজ্জলনটা তো ধর্মনিরপেক্ষও কোন সংস্কৃতি নয়, বরং আদি পৌত্তলিকদের কুসংস্কার বিশ্বাস থেকে আগত।
কেন সরকারী উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান ?
সরকার সম্ভবত চাইছে ২৫শে মার্চকে ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি নিতে। এবং এখানে যে বিশ্বাসটি কাজ করছে, সেটা হলো পৌত্তলিক বা প্যাগান কালচার গ্রহণ করলে ইউনেস্কো থেকে দ্রুত স্বীকৃতি নেয়া সম্ভব। সেই বিশ্বাস থেকে সম্ভবত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এই মোমবাতি প্রজ্জলনের উদ্যোগ।
সরকার তার রাজনৈতিক অর্জন দেখানোর জন্য রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসগুলোকে জাতিসংঘের ইউনেস্কোতে তালিকাভূক্ত করাতে দৌড়ঝাপ করছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, ইউনেস্কো বা জাতিসংঘ হচ্ছে সম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেনামি অঙ্গসংগঠন, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনে জড়িত (https://bit.ly/2utAj0w )।
বিষয়টি এমন দাড়াচ্ছে, রাষ্ট্রের মহান অর্জনগুলোকে এমন দুষ্টু শক্তির কাছ থেকে আমরা স্বীকৃতি চাচ্ছি, যারা খোদ আমাদের রাষ্ট্রের বিরোধী। এবং সেই দুষ্টু শক্তির স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও ধর্মকেও বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করছি না। সরকারের ভেতরে যারাই এ ধরনের অপতৎপরতার পেছনে জড়িত তাদের কঠিন শাস্তি দাবী করছি।