সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে “মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধই রইল।”এন.সি- ৩৭২

সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে “মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধই রইল।”
Image result for কলম
আজকে খবর এসেছে,
সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে “মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধই রইল।”
আজ থেকে ১৫ বছর আগে সাভারের আমিন বাজারে গড়ে ওঠা মধুমতি মডেল টাউনকে অবৈধ ঘোষণা করতে রিট করেছিলো কথিত পরিবেশ ভিত্তিক এনজিও ‘বেলা’। তাদের দাবী জলাশয় ভরাট করে এই প্রকল্পটি তৈরী হয়েছে। এই রায়ের কারণে শুধু মধুমতি মডেল টাউন নয়, ঢাকার আশেপাশে গড়ে ওঠা ১ হাজারেরও বেশি হাউজিং প্রকল্প ‘জলাশয় ভরাটের অজুহাতে’ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।
(https://bit.ly/2UAkxeYhttps://bit.ly/2UGDVXP)
প্রথমেই বলে রাখি, কোন ঘটনা ঘটলে তার ভালো-মন্দ আগে যাচাই না করে,
আগে যাচাই করবেন- কাজটা কে করছে? এবং যে করছে তার উদ্দেশ্যটা কি ?
কথিত পরিবেশ ভিত্তিক এনজিও ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)’ বা এর আইনীজীবি ‘রিজওয়ানা হাসান’ নামক মহিলা হচ্ছে মার্কিন ব্লকের সদস্য।
এরা পরিবেশবাদীতার নাম দিয়ে বাংলাদেশের সকল উৎপাদনশীল খাতের লাগাম টেনে ধরতে চায়।
এর আগে জাহাজ ভাঙ্গার শিল্প ধ্বংস করতে এরা বেশ ফাইট করেছিলো। এছাড়া ইটভাটা বন্ধ করার নামে মাছ চাষের লাগাম টেনে ধরতে এরাই কাজ করছে। ড. কামালের মেয়ের যেমন আছে ব্লাস্ট, ঠিক তেমনি রেজওয়ানা হাসানের আছে ‘বেলা’, আর মনজিল মোরশেদের আছে “হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ”। এদের সবার গোড়া এক, মার্কিন ব্লক মেইনটেই করে চলে এবং তাদের কেন্দ্রীয় পলিসি বাস্তবায়ন করে।
যাই হোক, কথা বলছিলাম মধুমতি মডেল টাউন নিয়ে। মধুমতি মডেল টাউনের জমি নিয়ে রিট হইছে ২০০৪ সালে, কিন্তু ততদিনে তারা প্লট বিক্রি করছে ৫ হাজার।
কথা হলো- মধুমতি মডেল টাউনের মালিকপক্ষ অবশ্যই ধনী শ্রেণী হবে। কিন্তু যে ৫ হাজার লোক প্লট কিনলো তারা তো সে রকম নয়। দেখা যাবে, জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে, চাকুরী করে টাকা জমিয়ে, গ্রামের জমি বিক্রি করে, প্রবাসী ছেলের অর্থ সঞ্চয় করে প্লটগুলো তারা ক্রয় করেছে। যদিও হাইকোর্টে অর্ডার ছিলো এই টাকা ফেরত দিতে হবে, কিন্তু আদৌ কি ৫ হাজার লোক তাদের অর্থ ফেরত পাবে ? এটা মনিটরিং করবে কে ? আবার যে জমিগুলো পাবলিকের থেকে নিয়ে মধুমতি মডেল টাউন ব্যবসা করছিলো, সেগুলো কি পাবলিকের কাছে ফেরত যাবে ? নাকি সরকারীকরণ করা হবে ?
আমার কথা হলো কি জানেন?
সব কিছু বলির পাঠা হয় পাবলিক। বন্যা প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেখে মধুমতি মডেল টাউন বন্ধ। কিন্তু যমুনা ব্রীজের কারণে যে নদী বন্ধ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে কেউ রিট করে না (https://bit.ly/2IIGwi3)। আবার ঢাকার জলাবদ্ধতা হওয়ার পেছনে যে হাতিরঝিল বা তার পর্যটন কেন্দ্র দায়ী (https://bit.ly/2vlC2Fv), সেটা নিয়ে কেউ রিট করে না।
যেহেতু মধুমতি মডেল টাউনের জমি পাবলিক কিনছে, তাই এটার মধ্যে সমস্যা খুজে পাওয়া গেছে। দাও পাবলিককে শেষ করে।
মজার বিষয় হলো-
নদীতে সমস্যা, জলাশয়ে সমস্যা, পরিবেশে সমস্যা এই কথাগুলো কেউ আগে বলে না। ব্যবসা শুরু আগে তাদের ধরা হয় না। কিন্তু ব্যবসা করে যখন পাবলিকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, তখন তাদের ধরা হয়। তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে কিন্তু বড় পূজিপতির কোন ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় পাবলিকের, আটকে যায় তাদের শেষ সম্বল।
এই যে বুড়িগঙ্গাসহ সকল নদীর তীরে প্রতিদিন উচ্ছেদ অভিজান চলতেছে, বড় বড় বাড়ি অবৈধ ট্যাগ লাগিয়ে ভাঙ্গছে, এই বাড়িগুলো কিভাবে আসলো ? এগুলো কি উড়ে এসেছে ?
যদি অবৈধ স্থানে নির্মিত হয়ে থাকে তবে এতদিন থাকলো কিভাবে ? গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ লাইন পেলো কিভাবে ? তখন কেনো ধরা হলো না ? এখন যখন ১০ হাত বদল করে সাধারণ পাবলিকের হাতে আসলো, তখন অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে তা ভেঙ্গে দেয়া হলো, ক্ষতি কিন্তু হলো পাবলিকের, যে অবৈধ দখলদার সে চিরজীবনই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে গেলো।
আসলে ঘটনা কি জানেন ?
এখানে সবারই স্বার্থ আছে। যে মডেল টাউনের মালিক সে তো টাকা নিয়ে গেছে তার তো লস নাই। এখন সে পাবলিককে কবে টাকা ফিরিয়ে দেবে, তার খবর কে রাখে ? আর জমি ফিরে পেলে তা সরকার ক্রোক করবে, সরকারেরও লাভ। আর মার্কিন ব্লকের উদ্দেশ্য- “দেশের প্রডাকটিভ খাত ধ্বংস করে দেয়া, কৃত্তিম দরিদ্রতা সৃষ্টি করা ” সেটা হয়ে যাবে। মিডিয়া, কোর্ট, উকিল, প্রশাসন সবার ভাগ আছে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে পাবলিক হয়ে যাবে দেউলিয়া। এই যে পূর্বাচলের চারপাশে শত শত হাউজিং প্রকল্প হয়েছিলো, তাদের সবগুলো দখল করে নিয়েছে সরকার। পাবলিকের জমি খেয়েছে হাউজিং প্রকল্প, আর হাউজিং প্রকল্প খেয়েছে সরকার। মানে ছোট মাছ খেয়েছে মাঝারি মাছ, আর মাঝারি মাছ খেয়েছে বড় মাছ। হিসেবে বড় মাছের পেটে ছোট আর মাঝারি দুটোই আছে, কিন্তু কষ্ট করে ছোটটাকে শিকার করতে হয়নি, এই আরকি।
আমার কথা হলো, পরিবেশ বলেন, আর নিয়মনীতি বলেন,
সব সময় বলিরপাঠা হলো জনগণ। প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্বার্থের জন্য কাজ করে , কিন্তু জনগণের স্বার্থে কেউ কাজ করে না, জনগণের পক্ষ বলেও কোন পক্ষ গড়ে ওঠেনি। মিডিয়া নামের সাথে ‘গণমাধ্যম’ শব্দ ব্যবহার করলেও তারাও কোন পক্ষ হয়ে কাজ করে সাধারণ মানুষের ব্রেন ওয়াশের কাজ করে।
আমি বলতে চাই, আপনি পরিবেশ বাচান আর সুন্দর শহর গড়েন, পাবলিকের পেটে লাথি মারেন কেন ?
হাইকোর্ট বলতেছে অমুক প্রকল্প অবৈধ, রাজউক বলতেছে তমুক প্রকল্প অবৈধ, এটা এতদিন পরে কেন বলতেছে, আগে বলে নাই কেন ? আগে কেন বন্ধ করে নাই। পাবলিকের পকেটের হাজার-লক্ষ কোটি টাকা লোপাটের পর কেন বলতেছে ?
তাই অমুক অবৈধ, তমুক অবৈধ রায় দেয়ার পূর্বে, যে সব সরকারি কর্মচারি-কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় এত বড় প্রকল্প গড়ে উঠছে তাদের আগে অবৈধ ঘোষণা করে বিচার করা হোক। সেটা আওয়ামীলীগ আমলে হোক আর বিএনপি আমলে হোক, তদন্ত করলে বের করা কঠিন কাজ নয়। আগে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে পাবলিকের টাকা পরিশোধ করা হোক। তারপর হাইকোর্ট-সুপ্রীম কোর্ট থেকে রায় দিন, তাহলে তা জনগণের প্রতি সুবিচার হবে, এর আগে নয়।