‘উন্নয়ন’ বলতে যে জিনিসটা প্রচার করা হচ্ছে-

‘উন্নয়ন’ বলতে যে জিনিসটা প্রচার করা হচ্ছে-
“উন্নয়ন চাই না, খরচ কমান”
Image result for নদীআজকাল আমরা একটা কথা বলে সবাই ভুল করি। আমরা সব সময় বলি, “আমরা বাংলাদেশের উ্ন্নয়ন চাই”। আমার মনে হয়, আমাদের এই বক্তব্যটা পরিবর্তন করার সময় এসেছে। আমাদের শ্লোগান হওয়া উচিত, “উন্নয়ন চাই না, খরচ কমিয়ে দিন”।
‘উন্নয়ন’ বলতে যে জিনিসটা প্রচার করা হচ্ছে-
বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাস্তাঘাট, পর্যটন কেন্দ্র, ব্রীজ-সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে, স্টেডিয়াম, সিনেপ্লেক্স, পরিবেশ সুন্দর, বিমানবন্দর এই সব ‘উন্নয়ন’ বাংলাদেশের দরকার নাই। বিশেষ সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর এগুলো দরকার নাই। এগুলো উচ্চবিত্ত শ্রেনীর ইতিমধ্যে আছে, অথবা তারা টাকা দিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে সেগুলো ম্যানেজ করে ফেলছে। এবার আসুন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণী, যারা বাংলাদেশের ৯৯% জনগন। তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তো, তাদের আগে কি প্রয়োজন ? তাদের কি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাস্তাঘাট, সেতু, ব্রীজ, বিমানবন্দর, পর্যটন কেন্দ্র, পরিবেশ সুন্দর, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল আগে দরকার নাকি চালের দাম, ডালের দাম, তেলের দাম কমানো আগে প্রয়োজন ? বাড়িভাড়া, মেসভাড়া, যাতায়াত ভাড়া, মোবাইল বিল, ইন্টারনেট বিল ইত্যাদি যদি কমিয়ে অর্ধেক করে দেয়, তবে কি আপনি খুশি হবেন? নাকি মেট্রোরেলে করে খুশির ঠেলায় ঘুড়তে দিলে খুশি হবেন ? আমি নিশ্চিত, এসব খরচ কমালে মানুষ বেশি খুশি হবে।
আসলে কর্পোরেটোক্রেসি ষড়যন্ত্রের মূল ছিদ্রটা হলো ‘উন্নয়ন’।
যখনই আপনি উন্নয়ন চাইবেন, তখন আপনাকে উন্নয়নের নামে পর্যটন কেন্দ্র, বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্টেডিয়াম, ব্রীজ, সেতু, রাস্তাঘাট, মেট্রোরেল ধরায় দিবে। কিন্তু বিনিময়ে আপনার জীবন ব্যয় দ্বিগুন-ত্রিগুন-চতুর্গুন বেড়ে যাবে। আপনি যদি সুন্দর ঢাকা শহর চান, তবে তারা বস্তিতে আগুন দিবে, আপনি যদি পরিবেশ সুন্দর, চান, তবে সেই অজুহাতে দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করে দিবে, বিদেশী প্রডাক্টের উপর আপনাকে অভ্যস্ত করে খরচ তিন-চার গুন বাড়িয়ে দেবে।কর্পোটোক্রেসি পলিসিতে ব্যবসা বাণিজ্য ছড়াতে নয় বরং উচ্ছেদ করে ধ্বংস করতে চায়। কর্পোরেটোক্রেসির উন্নয়ন দেখে মানুষ শিহরিত হয়, আনন্দিত হয়। কিন্তু এর পেছনে খরচ বাড়ে, বেকারত্ব বাড়ে, বস্তিতে আগুন লাগে, দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়।
অপরদিকে, যখন আপনি খরচ কমানোর জন্য চাপ দিবেন, তখন বাধ্য হয়ে তাকে ইনভেস্ট করতে হবে কৃষি, শিল্পের মত উৎপাদনশীল খাতে, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক খাতে। আর উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ মানে বেকারত্ব হ্রাস। বাড়িভাড়া আর যাতায়াত খরচ কমাতে গেলে শহর বিকেন্দ্রীকরণ অবশ্যাম্ভী। শহর বিকেন্দ্রীকরণ করতে আপনাকে ঢাকাস্থ ব্যবসা বাণিজ্যকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে (উচ্ছেদ নয়) ।
সমীকরণ আকারে দেখালে:
(১) উন্নয়ন = অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ---দেশীয় শিল্প ধ্বংস--বেকারত্ব বৃদ্ধি--বিদেশী কর্পোরেটদের আগমন---জীবনব্যয় পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি--যানজট কৃত্তিমভাবে বাচিয়ে রাখা।
(২) খরচ কমানো = উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ----দেশীয় শিল্পে স্বনির্ভর----বেকারত্ব হ্রাস---শহর বিকেন্দ্রীকরণ---যানজট হ্রাস----বাড়িভাড়া হ্রাস---যাতায়াত ভাড়া হ্রাস---জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় পরিবেশ পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে এমনিতেই
আমার মনে হয়,
জনগণের এখন তাই ‘উন্নয়ন’ চাওয়া আর উচিত নয়। বরং তারা দাবী তুলুক তাদের বাড়িভাড়া অর্ধেক করে দেয়া হোক, তাদের খাদ্যের দাম অর্ধেক করে দেয়া হোক, তাদের যাতায়াত ভাড়া অর্ধেক করে দেয়া হোক। জীবনব্যয় কমানোর দিকে শ্লোগান দিলে বিদেশী কর্পোরেটরা এমনিতেই লেজ গুটিয়ে পালাবে।