ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময় বিভিন্ন নৌ-বন্দরগুলোতে সতর্কতা আদেশ জারি হয়েছিলো।এন.সি- ৩৪৮

ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময় বিভিন্ন নৌ-বন্দরগুলোতে সতর্কতা আদেশ জারি 
হয়েছিলো।

Image result for সাগর
ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময় বিভিন্ন নৌ-বন্দরগুলোতে সতর্কতা আদেশ জারি হয়েছিলো।
নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আপাতত নদীতে চলাচল বন্ধ করতে আদেশ দেয়া হয়।
কিন্তু তারপরও দেখা যায়, কিছু মাছ ধরার নৌকা আদেশ ভাঙ্গে আর উত্তাল নদীতে ডুবে মাঝিদের মৃত্যু ঘটে।
ফণির সময়, এ ধরনের একটি খবর পড়ছিলাম, ফনীর সতর্কতা জারি করা পরে কিন্তু ট্রলার -নৌকা মাছ ধরতে যাওয়ায় তাদের নৌকা ডুবি হয়, কয়েকজন জেলে নিখোঁজ হয়।
খবরের হেডিংটা দেখার পর আমি ফেসবুকে কমেন্টবক্স খুলে পাবলিকের কমেন্ট পড়ছিলাম। একজন বললো- “ভালো হইছে মরছে। এতবার নিষেধ করার পরও যে নৌকা নামায়, তার মরাই উচিত।”
এই কমেন্ট পড়ার পর আমি অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। একটা লোক কি ইচ্ছা করে মরতে যায় ? নদী উত্তাল থাকলেও একজন মাঝি কেন এত রিক্স নিয়ে মাছ ধরতে গেলো ? কারণ কি ?
পরে দেখলাম, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিলো এবং ১লা মে থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়, কিন্তু ২রা মে’র সময় ফণী চলে আসে এবং নদী ও সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়ে।
একজন দরিদ্র মাঝি, দুই মাস তার ইনকাম বন্ধ। হয়ত ধার কর্জ করে ঋণগ্রস্ত। বাসায় ছেলে মেয়ে স্ত্রী বাবা মা’র অনেক চাহিদা। অনেক আশা। সেই আশাগুলো দুই মাস বহু কষ্টে চেপে ছিলেন। সরকার ২ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে, সরকার কিছু জেলেকে রেশনে চাল দিবে বলেছে। কিন্তু সেই চাল কতটুকু দরিদ্র জেলের ঘরে পৌছে তার হিসেব করার দরকার আছে।
নিষেধাজ্ঞা উঠলে তাই সে ফণীর গর্জন শুনবে কখন ? সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়া তার জন্য তখন জরুরী। ঋণের টাকা, সুদের টাকা পরিশোধ বেশি দরকার। হোক নদী উত্তাল, সেই নদী থেকেই মাছ ধরতে যাবে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে, তখন তার ফনী আর ঘূর্ণিঝড় দেখার সময় থাকে না। সেই খেয়াল থেকেই হয়ত মাঝির নদীতে যাওয়া।
সরকার দাবী করেছিলো- নদীতে ২ মাস মাছ ধরা নিষেধ করলে মাছের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন। দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও নদীতে মাছ ধরা পড়ছে না।
এ সম্পর্কে খবর-
১) দুই মাস মাছ না ধররেও মেঘনায় মিলছে হাতেগোনা ইলিশ
(https://bit.ly/2HiBQOb)
২) নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ইলিশ নেই, জেলেরা হতাশ
(https://bit.ly/2LHUZgO)
৩) দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরে নদীতে মিলছে না ইলিশ
(https://bit.ly/2VE3TjO)
৪) দুই মাস মাছ না ধরার পর পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা
(https://bit.ly/2Ebqs4O)
সরকার নদীগুলোতে মাছ বন্ধ রেখেছে ১লা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০ দিন।
আর সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে ২০মে থেকে ২৩শে জুলাই, ৬৩ দিন।
সরকারের দাবী, এই সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখলে মাছের সংখ্যা বাড়ে।
কিন্তু কথা হলো, যদি মাছের সংখ্যা না বাড়ে তখন কি হবে ?
তখন কি সরকার দরিদ্র জেলেদের এর জন্য ভতুর্কি দেবে ?
আপনি একটা গরিব মানুষের কাজ বন্ধ রাখলেন, বললেন- এর মাধ্যমে আপনার বাকি সময় আয় বাড়বে।
কিন্তু যদি না বাড়ে, তখন এর দায় কে নেবে ?
ঐ দরিদ্র জেলে ২ মাস ঋণ করে, খেয়ে না খেয়ে সংসার চালালো তার ব্যয় বহন করবে কে ?
সরকারের এই ভ্রান্ত আদেশের কারণে যে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না।
বাংলাদেশের উচ্চ আদালতকে আলাদা করে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলো, যেন সরকার জনগণের উপর যে জুলুম করে, তার বিরুদ্ধে সে কাজ করবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত জনগণের পক্ষে না থেকে চলে গেছে বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী হাতে। কিভাবে দেশী ব্যবসায়ী ও দেশী উদ্যোক্তাদের শেষ করে দেয়া যায় সে জন্য দিনে কমপক্ষে ১ হালি করে অর্ডার জারি করে হাইকোর্ট।
আর ক্ষমতাসীন সরকারের চিন্তা হলো- দেশের মানুষকে মেরে দেশী সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে কিভাবে দুই পয়সা কমিশন পাওয়া যায়। দেশের নদী-সমুদ্রে ২ মাস মাছ বন্ধ করে, ভারতীয় জেলেদের অবাধে মাছ ধরতে দেয়া হচ্ছে। এতে হয়ত অনেক জেলে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিদেশীদের কমিশন তো ক্ষমতাসীনদের পকেট ভরছে, তাহলেই হবে।