ড কামাল হোসেন খামোশ বলার পর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়েছিলো,
“এই খবর করার জন্য তোমরা কতটাকা পেয়েছো ?”
“এই খবর করার জন্য তোমরা কতটাকা পেয়েছো ?”
ড. কামাল ও তার পরিবার যে পরিমাণ বিদেশী নেটওয়ার্ক এর সাথে জড়িত, তাদের হাটুর সমান যোগ্যতা আজকালকার সাংবাদিকদের নাই। সেই ড. কামাল যখন সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে, তাদের খবরের পেছনে আর্থিক যোগান সম্পর্কে, তখন সেই কথা ফেলে দেয়ার মত নয়। গত কয়েকদিন যাবত বাংলাদেশের মিডিয়া ‘কেমিকেল’র নাম দিয়ে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে যে খবর করছে, তা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, এর পেছনেও রয়েছে বিশাল টাকার খেলা।
আসুন খবরগুলো একটু দেখি:
১) সময়টিভির লাইভ সংবাদ (https://bit.ly/2INJcw1) এ দেখাচ্ছে, আরমানিটোলায় কেমিকেল গুদামে অভিজান। বাংলাদেশে যে ৮০-৯০ জন ইহুদী থাকে (ইহুদী পরিচয়ে থাকে না, থাকে ‘জিহোভার সাক্ষী’ নামে) তার অধিকাংশ থাকে এই আরমানিটোলায়। তাদের রক্ষা করতে বাহিনী আগে গেছে আরমানিটোলায়। (নিচের) ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, বিধ্বংসী (!) কেমিকেলের বস্তা পাওয়াতে সিলগালা করে দিয়েছে কথিত ট্যাস্কফোর্স। যে কেমিকেল বস্তায় স্পষ্ট লেখা ‘সাইট্রিক এসিড’। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ক্লাস ৫ এর একটা বাচ্চাও জানে লেবুর রস হচ্ছে সাইট্রিক এসিড। সেই লেবু আমরা হরহামেসা খাচ্ছি, কিন্তু বিষ্ফোরণ তো দেখছি না। সাইট্রিক এসিডের অনেকগুলো ধরণ আছে, এর মধ্যে মনো-সাইট্রিক এসিডের বস্তা যদি পান, তবে সেটা দিয়ে ট্যাং এর মত জুস বানায় খাইতে পারবেন। আর ছবির বস্তাটা হলো অ্যানহাইড্রাস সাইট্রিক এসিড। এটা কৃষিতে ও ওষধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এটা দিয়ে আপনার জীবন বাচে, ধ্বংস না। আমি নিশ্চিত এটা বন্ধ করায় কয়েকদিন পর বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্য আর ওষধের দাম হু হু করে বাড়বে।
সময়টিভির লাইভ সংবাদ লিঙ্কে যান (https://bit.ly/2INJcw1) সেখানে আরো বলতেছে, দাহ্য প্লাস্টিকের গুটি পাওয়ায় কারখানা সিলগালা করে দেয়া হইছে। খুব ভালো হইছে। আপনার ঘরেও তো অনেক প্লাস্টিক আছে, সেগুলোও তো সমপরিমাণ দাহ্য, তাহলে আপনার বাসা সিলগালা করবে কবে ? আর এই যে প্লাস্টিক কারখানাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে, এগুলোতে কিন্তু প্রতিদিন ঢাকা শহর ও তার আশাপাশের ডাস্টবিন থেকে আগত অসংখ্য প্লাস্টিক বোতল এবং অন্যান্য প্লাস্টিক থাকে, যা রিসাইক্লিং হয়। দাহ্য পদার্থের অজুহাতে প্লাস্টিক কারখানা বন্ধ করায় কয়েকদিন পর দেখবেন, পুরো ঢাকা শহর আবার প্লাস্টিকের ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। আর ঐ কারাখানায় বেকার হওয়া টোকাইরা আপনার মোবাইল আর আপনার বউয়ের চেইন ছিনতাই করবে, তখন কি করবেন ?
২) বণিকবার্তার খবর: অনুমোদন ছাড়া দাহ্যবস্তু ও রাসায়নিকের ব্যবসা চলছে সারা দেশে (https://bit.ly/2EJrTIp)
মন্তব্য: সরকার অনুমোদন দিলেই তো বৈধ হয়ে যায়। দেশীয় উপায়ে গড়ে ওঠা এই শিল্প এলাকায় অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে, এটা চালু রাখতে তো সরকারের নিজেরই উদ্যোগী হওয়ার দরকার ছিলো।
৩) বিবিসিরি খবর: “পুরনো ঢাকার সংস্কার করা কি সম্ভব হবে? বাড়ীর মালিকরা রাজী হবেন?” (https://bbc.in/2C13bkZ)
মন্তব্য: সংস্কারের অজুহাতে একবার যদি কারখানাগুলো বন্ধ করা যায়, তবে পুরান ঢাকায় গড়ে ওঠা বিশাল দেশীয় শিল্প ধ্বংস করা সহজ হবে। তবে বিবিসি খবরে মিথ্যা বলছে। বলছে পুরান ঢাকার লোকরা নাকি এটা বলছে পুরান ঢাকার লোকরা নাকি এটা চাচ্ছে। এটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। এই কাজ গত ২ বছর ধরে করতেছে সাঈদ খোকন। সে পুরান ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটিগুলোকে বুঝাইছে, তোমাদের বাড়িঘরগুলো ভেঙ্গে নতুন করে গুলশান-বনানীর মত প্ল্যান করে বানিয়ে দেবো। কিন্তু বাড়ির মালিকরা রাজী হয় নাই। তাদের বক্তব্য হলো: তারা নিশ্চিত না, সরকার তাদের জমি যে হারে বুঝে নেবে, সেই হারেই ফিরিয়ে দিবে কি না ? এছাড়া নতুন করে বাড়ি বানালে আরো জমি ছোট হয়ে যাবে, এর মধ্যে রয়েছে অনেক অংশীদার, সবাই কি ভাগ পাবে ? পাশাপাশি অধিকাংশ জমি নিয়ে মামলা মোকাদ্দমা চলতেছে, সেগুলোরই বা কি হবে ? তাই তারা বাড়ি ভাঙ্গতে রাজী না।
৪) সমকালের খবর: রাসায়নিক গুদামের টাকা যায় কোথায় : বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার অবৈধ কারবার, লাভের গুড় অনেকের পকেটে (https://bit.ly/2Vwkb9Q)
মন্তব্য: সত্য মিথ্যা বানায় খবর। পুরো ব্যবসাকে বানায় দিলো অবৈধ। হায়রে দেশীয় শিল্প ধ্বংস করতে কত টাকা খেয়েছো বিদেশীদের থেকে ?
৫) এনটিভির খবর: “রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম স্থানান্তরই কি সমাধান?” (https://bit.ly/2SDw5x4)
মন্তব্য: এনটিভি’র খবর পড়লে দেখবেন, তারা আসছে ‘কমপ্ল্যায়েন্স’ নিয়ে। গার্মেন্টস এর মত বড় শিল্প ক্লমপ্লায়েন্স মেটাতে গিয়ে অর্ধেক গামেন্টস বন্ধ করে দিছে (https://bit.ly/2tL3tro )। আর পুরান ঢাকার কারখানাগুলোতো রুম-বাথরুম আর বারান্দার মধ্যে গড়ে উঠছে। ওদের কাছে কমপ্ল্যায়েন্স চাওয়া আর কারখানা বন্ধ করে দেয়া একই কথা।
তবে আশার কথা হলো, আজকে দুপুরে অভিজান চালানোর সময় ব্যবসায়ীরা এক হয়ে প্রতিবাদ করে কথিত টাস্কফোর্সের অভিজান বন্ধ করে দিয়েছে (https://bit.ly/2IMZMfo )। আমি ব্যবসায়ীদের এই কাজ ১০০% সমর্থন জানাই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের এই প্রতিবাদ অবশ্যই অভিবাদন পাওয়ার যোগ্য। আপনারা আরো বড় আকারে সবাই এক হোন, সবাই রাস্তায় নামেন, প্রতিবাদ করুন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাহিনী আসলে তাদের পিটিয়ে হাড়গুড়ো করে দিন, প্রয়োজনে ষড়যন্ত্রকারীদের ২-৪টা লাশ ফেলে দিন। যে সাঈদ খোকন কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে পুরান ঢাকার শিল্পকারখানা ধ্বংসের প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছে (https://bit.ly/2GWbd2E), তার বাসার সামনে গিয়ে আন্দোলন করুন, তাকে এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করুন।
মনে রাখবেন, আপনাদের এই কাজের মাধ্যমে পুরান ঢাকার ভিতর-বাহিরে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, জনগণ বিদেশী পণ্যের বদলে কমমূল্যে দেশী সামগ্রী পাচ্ছে, এক পুরান ঢাকা সমস্ত ময়লা আকড়ে ধরে পুরো ঢাকা শহরকে পরিষ্কার করেছে। এই অবদান অসামান্য। সারা বিশ্বে দেশীয় শিল্পকে রাষ্ট্র পৃষপোষকতা করে, সেখানে বাংলাদেশে সাহায্য করা তো দূরের কথা, বিদেশী কর্পোরেটদের সাথে এক হয়ে সরকার এসেছে তাকে ধ্বংস করতে। এক মিথ্যা স্যাবোটেজের অজুহাতে ৪শ’ বছর ধরে গড়ে ওঠা দেশীয় শিল্প ধ্বংস ও কোটি মানুষকে বেকারকে করা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সবাই এক থাকুন, ষড়যন্ত্রকারীরা কিছুই করতে পারবে না।