গত কয়েকদিন আগে দৈনিক বণিক বার্তায় জোসনা বেগম নামক এক নারীর ভেজা শাড়ি শুকানোর ছবি প্রকাশিত হয়।

গত কয়েকদিন আগে দৈনিক বণিক বার্তায় জোসনা বেগম নামক এক নারীর ভেজা শাড়ি শুকানোর ছবি প্রকাশিত হয়।
Image result for নদী
গত কয়েকদিন আগে দৈনিক বণিক বার্তায় জোসনা বেগম নামক এক নারীর ভেজা শাড়ি শুকানোর ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিতে দেখা যায়, জোসনা বেগম গোসলের পর তার ভেজা শাড়ির এক প্রান্ত কিছুর সাথে আটকিয়ে অন্যপ্রান্ত দিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করেছেন, আর মাঝখানের অংশটা শুকাচ্ছেন। অতি দরিদ্র জোসনা বেগমের শাড়ি শুকানোর এছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলো না, কারণ তার শাড়ি সংখ্যা মাত্র ১টি।
জোসনা বেগমরা বাংলাদেশে ছিলো এবং এখনও আছে। কিন্তু আশঙ্কার কথা, সরকার যে পলিসি করছে, তাতে দেশে এই জোসনা বেগমদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আজকেই খবরে দেখলাম, বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী সরকারের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অবজেকশন জানিয়েছে। তারা বলছে গ্যাসে দাম বৃদ্ধি (প্রায় ৩ গুন) হলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পথে বসে যাবে, ফলে বেকার হবে অসংখ্য মানুষ । মূলত: সরকার দেশের গ্যাস না তুলে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করায় অতিরিক্ত খরচ হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা তারা জনগণের পকেট থেকে আদায় করতে চায়।
নতুন পদ্ধতিতে-
--আবাসিকে একচুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা,
--সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা,
--ক্যাপটিভ পাওয়ারে (নিজস্বভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন) ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা,
--শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা,
--বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৪.০৫ টাকা
--বিদ্যুতে ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা
--সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা,
--প্রি-পেইড মিটারে ৯.১০ (ঘনমিটার) টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬.৪১ টাকা
করার প্রস্তাব করেছে।
(https://bit.ly/2VTZntm)
উপরের বিষয়গুলোর দাম বাড়লে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, অতিশিঘ্রই আপনার খাদ্যদ্রব্য, ব্যবহার্য পন্যদ্রব্য, ঘরের বিদ্যুৎখরচ, যাতায়াত ভাড়া হু হু করে বাড়বে। প্রস্তাব অনুসারে যদি বাড়ে, তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এতদিন আপনার মাসিক খরচ যদি ২০ হাজার টাকা হয়, সে খরচ লাফ দিয়ে বেড়ে ৪০ হাজার ক্রস করবে। আপনার মেসখরচ ৫ হাজার থেকে লাফ দিয়ে ১০ হাজার হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে যদি আপনার বেতন দ্বিগুন হয়, তবে সমস্যা নেই। কিন্তু বেতন দ্বিগুন না হলে আপনার নিজের খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনতে হবে।
তবে যদি পাবলিক আন্দোলন করে, তবে সরকার দাম হয়ত বাড়াবে না, কিন্তু ব্যাংকে ফ্রি নোট ছাপানো শুরু করে দিবে, তখন টাকার অবমূল্যায়ন বা মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে, সৃষ্টি হবে মূল্যস্ফীতি। তখন চালের দাম, ডালের দাম, তেলের দাম, যাতায়াত ভাড়া সব কিছু এমন ভাবে বাড়বে যেন আপনার ২০ হাজার টাকার মূল্যমান ১০ হাজার টাকা সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ সরকার আপনার থেকে টাকা বের করবেই তা যে উপায়েই হোক।
আমার মনে আছে, সরকার যখন মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল করে, তখন তার ডামি ছবি নিয়ে অনেকেই প্রচার করেছে, “দেখুন বাংলাদেশে কত উন্নয়ন হচ্ছে, কত বড় বড় স্থাপনা হচ্ছে।”
অথচ এই গ্রুপটি জানেই না, “যত উন্নয়ন, তত খরচ”।
যে ব্যবসায়ীদের নাম করে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, সেই ব্যবসায়ীরাই যখন বলছে, এটা আমাদের ব্যবসা ধ্বংসের পায়তারা। তাহলে এলএনজি কার জন্য ?
আজ থেকে ২ বছর আগে ২০১৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী দৈনিক প্রথম আলোর এক খবরে দেখেছিলাম,
“মিরসরাইয়ে হবে ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর আয়তন হবে প্রায় ৩০ হাজার একর। আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সবার আগে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। ”
(https://bit.ly/2TN2plu)
তরল গ্যাস আনা হচ্ছে বেসিক্যালী বিদেশী ব্যবসায়ীদের নিয়তে, কিন্তু তার আগে সেই গ্যাসীয় স্টিমরোলার চালানো হবে দেশীয় ব্যবসায়ী ও জনগণের উপর দিয়ে। ব্যবসায়ীরা তখন পথে বসে যাবে, আর জনগণ বেকার হয়ে জোসনা বেগমের মত এক কাপড়ের অর্ধেক গায়ে জড়িয়ে বাকিটা শুকাবে। আর মাঝ দিয়ে কমিশনের ভাগ জমা পড়বে পানামা আর প্যারাডাইস পেপারে।
লেখাটা শেষ করবো, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল সরাতে যে সব সুশীল ফেসবুকার চিল্লাচিল্লি করেছিলো তাদের উদ্দেশ্যে। তাদের জন্য একটা সুখবর আছে। সুখবরটা হলো, আপনারা পায়ে যে স্যান্ডেল বা জুতা পরেন, এই স্যান্ডেল বা জুতার কিন্তু একটা বড় অংশ আসে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার আর সিদ্দিক বাজারে বিভিন্ন জুতার কারখানা থেকে। এই জুতাগুলো বানাতে এক ধরনের আঠা লাগে যাকে বলে ‘সলুশন’। এই সলুশন কথিত দাহ্য পদার্থ তাই এর বিরুদ্ধে কঠিন অভিজান পরিচালনা করে তাকে মহল্লা ছাড়া করেছে সরকার। ফলে হাওয়া হয়ে গেছে সল্যুশনের ড্রামগুলো, এতে বন্ধ হয়ে গেছে পুরান ঢাকার জুতার উৎপাদন। যেহেতু কারখানায় উৎপাদন বন্ধ, তাই খুব শিঘ্রই দেশীয় উপায়ে তৈরী করা জুতা-স্যান্ডেল আর পাচ্ছেন না আপনারা। এতদিন পুরান ঢাকায় বানানো যে ৩০০ টাকা স্যান্ডেল পরে ফ্যাশন মারতেন, এখন সেই একই জুতা ইহুদীর ‘বাটা’ বা আওয়ামী এমপি’র ‘এপেক্স’ থেকে কিনতে কমকরে হলেও দেড় হাজার টাকা লাগবে। ৩০০ টাকার জুতা দেড় হাজার টাকা হোক সমস্যা নাই, পুরান ঢাকা থেকে আপনার শত্রু কেমিক্যাল ভাগছে, তাহলে খুশি তো ??