নবাবপুরে টায়ারের গুদামে আগুন : কি কারণ থাকতে পারে ?

নবাবপুরে টায়ারের গুদামে আগুন : কি কারণ থাকতে পারে ?

নবাবপুরে টায়ারের গুদামে আগুন : কি কারণ থাকতে পারে ?
Image result for নদীআজকে ঢাকাস্থ নবাবপুরে মানসী সিনেমা হলের পাশে বারিক প্লাজায় একটি টায়ারের গুদামে আগুন ধরেছে (https://bit.ly/2TyoPXB)। আমার কাছে যতটুকু তথ্য এসেছে, ঐখানে কোন ব্যবসায়ী পুরান টায়ার কেনা-বেচা করতো। এত যায়গা থাকতে পুরান টায়ার কেনাবেচার গোডাউনে কেন আগুন ধরলো, সেটা বুঝতে হলে আগে একটি প্রতিবেদন পড়তে হবে, বাংলাদেশ প্রতিদিনে ১লা জুলাই ২০১৭ তারিখে যা প্রকাশ হয়েছিলো।
প্রতিবেদন:
বাতিল টায়ার রিসোলিং : মাসে শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়
একসময় বাস-ট্রাকের টায়ার ব্লাস্ট বা ক্ষয় হয়ে গেলে সেগুলোর আর তেমন ব্যবহার ছিল না। ইটভাটা কিংবা চাতালে পুড়িয়ে ফেলা হতো। ২০০৫ সালের দিকে ভারতীয় কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ব্যবহার-অনুপযোগী এসব টায়ার খুব কম দামে কিনে তাদের দেশে নিয়ে যেতে শুরু করেন। বাতিল হয়ে যাওয়া এসব টায়ার দিয়ে কী করেন তারা? এ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে যশোরের মনিহার এলাকার ব্যবসায়ী মডার্ন টায়ার হাউসের মালিক কাওসার আহমেদের মাথায়। জানতে পারেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এসব টায়ার রিসোলিং করে আবারও ব্যবহার-উপযোগী করে তা ৭-৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তখনই তিনি চিন্তা করেন, দেশেই যদি এসব টায়ার রিসোলিং করা যায়, তাহলে আরও অনেক কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে। সেই চিন্তা থেকেই তিনি ২০০৭ সালে দুটো পুরনো টায়ার কিনে স্থানীয় প্রযুক্তিতে রিসোলিং করে একটি বাসে পরীক্ষামূলকভাবে তা সংযোজন করেন। কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই টায়ারটি দেড় বছর চলে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০০৭ সালে যশোরের হামিদপুরের ব্যবসায়ীকে বাণিজ্যিকভাবে টায়ার রিসোলিংয়ের কাজ শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
কাওসার আহমেদ বলেন, এসব টায়ার বিক্রি করা হচ্ছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে; যেখানে একটি নতুন টায়ারের দাম ২৫-৩০ হাজার টাকা (৮০% সাশ্রয়)। রিসোলিং করা এসব টায়ারের গ্যারান্টিও দেওয়া হচ্ছে নতুন টায়ারের মতোই। এখন সারা দেশে এ রকম শতাধিক টায়ার রিসোলিং কারখানা গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বছরে ৩০-৪০ হাজার টায়ার রিসোলিং করে বিক্রি করা হচ্ছে।
কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে টায়ারের যে চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই ৩০ হাজার টায়ার আমদানি করতে হলে কমপক্ষে ৭৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হতো। টায়ার রিসোলিংয়ের কারণে এই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’ অনেকেই বলেছেন, সারা দেশে টায়ার রিসোলিংয়ের সংখ্যা ব্যবসায়ীরা ৩০-৪০ হাজার বললেও এ সংখ্যা এর চেয়ে বেশি ছাড়া কম হবে না। ভ্যাট/ট্যাক্স কর্মকর্তাদের ঝামেলার ভয়ে ব্যবসায়ীরা এ সংখ্যা অনেক কমিয়ে বলেন।
(রিসোলিং : প্রথমে ব্লাস্ট হওয়া টায়ারের ওপরের সোল কেটে তুলে ফেলা হয়। এরপর পুরানো বাতিল হয়ে যাওয়া টায়ারের ওপরে তা সংযোজন করা হয়। উচ্চতাপে সেটিকে মজবুত করে ফিটিং করা হয়। )
(https://bit.ly/2XHWcqo)
আজকে যে এলাকায় আগুন ধরেছে তার পাশেই ধোলাইখালে রয়েছে টায়ার রিসোলিং-এর বিশাল ব্যবসা। যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুধু শো-রুম নিয়ে বসে থাকলে তো হয় না, কমপক্ষে ১০০ টায়ার রাখতে হয়। আর ১০০ টায়ার দৃশ্যত একটা গোডাউন বলেই মনে হবে।
আজকে যারা আগুন ধরিয়েছে, সম্ভবত তাদের উদ্দেশ্য, পুরান ঢাকায় যে কেমিক্যাল বিরোধী অভিজান চলছে, তার সাথে ‘টায়ার’ শব্দটাও যেন যোগ হয়ে যায়। এতে ধোলাইপাড়ের টায়ার রিসোলিং এর ব্যবসাটা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশে টায়ার রিসোলিং বন্ধ হলে কার উপকার হবে ?
সবচেয়ে বেশি উপকার হবে ভারতের। কারণ বাংলাদেশে এই শিল্পের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত। ধোলাইখালের মার্কেট একবার নষ্ট করতে পারলে ভারতীয় টায়ার আরো অবাধে ঢুকতে পারবে বাংলাদেশে, চাঙ্গা হবে তাদের ব্যবসা।
শেষে শুধু একটা কথা বলবো,
বাংলাদেশের সাথে আমি এখন ফিলিস্তিনের মিল পাচ্ছি। ফিলিস্তিনে যেমন ইহুদীরা প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে উচ্ছেদ করে, ঠিক তদ্রুপ বাংলাদেশেও মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা বাণিজ্য বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের মাথায় যেন ঠিক সেই ইহুদীবাদীদের ভুত চেপে বসেছে।