অনেক সময় আমি বলি, মার্কিনপন্থীরা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে জড়িত।এন.সি-৩৪৭

অনেক সময় আমি বলি,
মার্কিনপন্থীরা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে জড়িত।
Image result for সাগরঅনেক সময় আমি বলি,
মার্কিনপন্থীরা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে জড়িত। অনেকে হয়ত এটা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে। কিন্তু আমি যখন অ্যানালাইসিস করি, তখন অনেকগুলো ক্যালকুলেশন করি, লক্ষণ মিলাই, তারপর সে কথা বলি।
অতি সম্প্রতি দেশী পণ্য ও উৎপাদনশীল খাতের বিরুদ্ধে ‘নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ’ নামক একটি সংস্থার তৎপরতা লক্ষণীয়। ৯৩% গরুর দুধে ব্যাকটেরিয়া আছে, এমন তথ্য প্রকাশ করে হঠাৎ করে তাকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।
আমি অবশ্য গরুর দুধ নিয়ে কথা বলার সময় বলেছিলাম, এই সংস্থার ভেতরে মার্কিনপন্থীদের ইনফিলট্রেশন আছে। যদিও তখন তেমন দলিল পেশ করতে পারি নাই। আজকে সংস্থাটির একটি সার্টিফিকেট পাইলাম। ছবিতে দেখুন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার চালিত এনজিও ইউএসএইড এবং মার্কিন সম্রাজ্যবাদীদের তৃতীয় হাত মানে জাতিসংঘ পরিচালিত খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)’র লোগো বা সিল আছে। বাংলাদেশের অন্যকোন সরকারি সংস্থার সার্টিফিকেটের মধ্যে এ ধরনের বিদেশী সংস্থার ‘সিল’ আছে কি নাই, তা আমার জানা নাই।
যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ এখনও অনেক অবুঝ। তারা অনেক কিছুই বুঝে না। আর কিছু লোক বুঝলেও রিয়েল ফেস বাদ দিয়ে আর্টিফিসিয়াল ফেসে আঘাত করে। এজন্য অনেক চেষ্টা করেও কোন কাজ হয় না।
আসলে সম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র বা আগ্রাসন ৩ ধরনের হয়-
১) সাস্কৃতিক আগ্রাসন, এটা অনেকই হয়ত বুঝতে পারে।
২) রাজনৈতিক আগ্রাসান, এটা যারা রাজনীতি করে, তাদের উপরের লেভেলের কিছু লোক বুঝতে পারে।
৩) অর্থনৈতিক আগ্রাসন, এটা খুব কম লোকই বুঝতে পারে। এর কারণ তারা আগ্রাসন চালায় উন্নয়নের ছদ্মাবরণে। তাদেরকে দেখলে সবাই ভাবে- “আরে তারা তো দেশের উন্নয়ন করতেই আসলো, সমস্যা কোথায় ?”
যারা ব্যবসা করেন, তারা বুঝতে পারবেন, একজন ব্যবসায়ীর জন্য সবচেয়ে বড় থ্রেট হচ্ছে তার ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বী। যে ব্যবসার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী যত কম, সে ব্যবসা করা তত স্বাচ্ছন্দময়।
ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ‘মনোপলি’ বলে একটা টার্ম প্রচলন আছে। মানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন একচেটিয়া ব্যবসা, যেখান থেকে ইচ্ছামত লাভ তুলে নেয়া যায়।
সম্রাজ্যবাদীরা যখন কোন দেশে আসার আগে প্রতিদ্বন্দ্বী শেষ করে দিতে চায়, কারণ সে মনোপলি করার সুযোগ চায়। বিশেষ করে বিদেশী মার্কেটে আসলে ঐ দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের সাথে পারা কঠিন। কারণ তারা যে রেটে মাল দিবে, বিদেশ থেকে এসে ঐ রেটে মাল দেয়া সম্ভব না। তাই আগে দেশী প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের শেষ করাই তাদের উদ্দেশ্য থাকে। এক্ষেত্রে তারা দেশীয় কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, প্রশাসন বা বিচারবিভাগের উপর ভর করে কাজগুলো করে। তারা দেশী পণ্যের বিরুদ্ধ গুজব রটায় এবং বিচারবিভাগের তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে সেই ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরপর তাদের মিডিয়া দিয়ে প্রেসার ক্রিয়েট করে প্রশাসন দিয়ে সেই ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে।
যেমন ধরুন, দেশী ফল আম নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ফরমালিন আছে বলে গুজব রটিয়ে ৬০ হাজার টন ফল, আম আর মাছ নষ্ট করে। কিন্তু পরে বের হয় যেই যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন মাপা হয়, সেটাই নষ্ট। আর প্রাকৃতিকভাবে সকল ফলে কিছু ফরমালিন থাকে। (https://bit.ly/2Ee2Wny)
এরপর ধরুন, মিডিয়ায় একটা খবর খুব প্রচার হয়েছে ‘পচা খেজুর’। এই ট্যাগ দিয়ে অনেক ব্যবসায়ীকে ক্ষতি করছে। আচ্ছা ! খেজুর কখন পচে কি ? খেজুর আলগা রাখলে তার মধ্যে ফাঙ্গাস টাইপের কিছু জন্মাতে পারে। সেটার বিরুদ্ধচারণ করা যেতে পারে। কিন্তু ‘পচা খেজুর’ কখন বিশ্বাসযোগ্য নয়। মূলত খেজুরে থাকে ‘এন্টি অক্সিডেন্ট’ যা অক্সিজেন বিক্রিয়া দমন করে ফ্রি রেডিক্যাল সমূহকে নির্মূল করে। খেজুর খেলে মানুষের বার্ধক্য থামানো যায়, সেই খেজুর কিভাবে পচে, এটা বিশ্বাস যোগ্য না।
এরপর ধরেন দুধে ৯৩% ক্ষতিকর ব্যকরেটিয়া আছে, সীসা আছে, বলে ব্যাপক প্রচার করলো। অথচ ব্যকটেরিয়া আছে ৯৩%, কিন্তু সীসা আছে ১০%। আর ব্যকটেরিয়া পাস্তরাইজেশন করলে বা ফুটালে দূর হয়ে যায়, এটা কিন্তু প্রচার করা হয়নি।
এরপর গরু মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড ব্যবহার হয়, কোরবানীর আগে এ ধরনের অপপ্রচারে নামতো প্রথম আলো গ্রুপ। গরু খাবেন না, গরুর শরীরে আছে ‘ভয়ঙ্কর স্টেরয়েড’, শুনলে যে কেউ আৎকে উঠবে। অথচ গরুর শরীরে স্টেরয়েড পুশ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার অধিকাংশ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। আর ৭৭ কেজি গরুর মাংশে যে পরিমাণ স্টেরয়েড থাকে, তার সমপরিমাণ স্টেরয়েড থাকে ১টা ডিমে। একজন মানুষ মাসে কয়কেজি গরুর মাংশ খায় ?
স্বাভাবিকভাবে কেমিকেল, রাসায়নিক এ ধরনের শব্দগুলোর মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে। আর সেই সুযোগে তারা এই গুজবগুলো রটায়। পুরান ঢাকার চকবাজারে স্যাবোটাজের পর সেখানে কেমিকেলের দোকানগুলোতে অভিজান চালানো হয়। একদিন সময় টিভির খবরে দেখালো, কোন এক গুদামে ভয়ঙ্কর সাইট্রিক এসিডের মজুদ পাওয়া গেছে। (https://bit.ly/2E7r5fF)
শুনে পাবলিকও বলবো- খুব ভালো, খুব ভালো।
অথচ লেবুর রস হচ্ছে সাইট্রিক এসিড। আমরা অনেক সময় দোকান থেকে ‘ট্যাং’ নামক এক প্রকার জিনিস কিনে পানিতে গুলিয়ে শরবত বানাই, সেটাও সাইট্রিক এসিড।
একটা সময়, মিডিয়াগুলো প্রচার করতো, ফেসবুকে নাকি গুজব রটায়।
অথচ এখন থেকে যাচ্ছে দেশের প্রধান মিডিয়াগুলো এখন গুজবের আখড়া হয়ে দাড়িয়েছে। এমনকি সেই গুজবের তথ্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করছে। আর হাইকোর্টও জ্ঞান না থাকার সত্ত্বেও মিডিয়ার গুজবের উপর নির্ভর করে দেশীশিল্পগুলোর উপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, ভুল অর্ডার দিয়ে দেশীয় ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে বিদেশীদের আগমন ত্বরান্বিত করছে।
লেখার শেষে আলোচনা করবো আমার পোস্টে ভারত দায়ী না আমেরিকা দায়ী’ এই তর্কের সমাধান নিয়ে।
অনেকে প্রায় বলেন, ভাই আপনি কি অ্যানালাইসিস করেন,
বাংলাদেশের ব্যবসা নষ্ট হলে ভারত লাভবান হয়, আর আপনি আমেরিকাকে দায়ী করেন, এটা কেমন কথা ?
আসলে আমি অ্যানালাইসিস ক্লাস নেয়ার সময় ‘ব্লক’গুলো সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলাম। ভারতেও এ ধরনের আন্তর্জাতিক ব্লক আছে। যেমন- মোদি হলো মার্কিন রিপাবলিক ব্লকের সদস্য, মমতা তৃণমূল হলো মার্কিন ডেমোক্র্যাট ব্লকের সদস্য আবার কংগ্রেস হলো রুশ ব্লকের সদস্য।
সত্যি বলতে, আমেরিকা দূরে থাকায়, তার জন্য ডাইরেক্ট ষড়যন্ত্র করা কঠিন। ইতিহাস বলছে সম্রাজ্যবাদী বড় শক্তিগুলো আগ্রাসন চালানোর সময় ভারতের মধ্যে অবস্থিত তার প্রতিনিধিকেই আঞ্চলিক নেতা হিসেবে নির্বাচন করে। রাশিয়া যেমন করেছিলো কংগ্রেসকে, ঠিক তেমনি আমেরিকা করছে মোদিকে। আমার এ কথা বলার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের কোন ব্যবসা নষ্ট হলে তা দ্বারা তৃণমূলের ব্যবসায়ী (ডেমোক্র্যাট ব্লক) লাভবান হলো, নাকি কংগ্রেসের ব্যবসায়ী (রুশব্লক) লাভবান হলো, নাকি বিজেপি’র ব্যবসায়ী (রিপাবলিকান ব্লক) লাভবান হলো নাকি সেটা যাচাই করলে বের হবে, ঘটনা আসলে কার পক্ষে যাচ্ছে। তাই কথা বললে, পুরোটা বুঝে বলা উচিত।
হয়ত ভাবতে পারেন, এত দ্বন্দ্ব বুঝে লাভ কি ?
অবশ্যই আছে। তাদের পরষ্পরের মধ্যে সম্পর্কটা বুঝতে পারলে, রিয়েল ফেসে আঘাত করা সহজ হবে এবং তাদের পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে একদলকে অন্যদলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবেন। আর এর মাধ্যমে তৈরী হবে ‘জনগণের পক্ষ’ নামক নতুন শক্তি।