গুজবে কান্দিবেন না চকবাজারে আগুন লাগার পর একটা খবর খুব ভাইরাল হয়।

গুজবে কান্দিবেন না
চকবাজারে আগুন লাগার পর একটা 
খবর খুব ভাইরাল হয়।
গুজবে কান্দিবেন না
চকবাজারে আগুন লাগার পর একটা খবর খুব ভাইরাল হয়। রিফাত ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিয়ার খবর। রিফাত-রিয়া নিয়ে মিডিয়ার হেডিংগুলোও ছিলো বেশ আবেগঘন……
Image result for নদী১) যুগান্তর: প্রথম সন্তানের মুখ দেখার স্বপ্ন পুড়ে ছাই রিয়া-রিফাতের (https://bit.ly/2HeAS5M)
২) ঢাকা ট্রিবিউন: অন্ত:স্বত্তা স্ত্রীকে নামাতে পারেননি, তাই নিজেও থেকে গেলেন অগ্নিকাণ্ডের ভেতর
(https://bit.ly/2DZBfy7)
৩) ভোরের কাগজ: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য আত্মাহুতি দিলেন স্বামী
(https://bit.ly/2C1iw51)
৪) ইত্তেফাক: মরণেও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গী হলেন
(https://bit.ly/2Tk8juZ)
৫) পূর্বপশ্চিম: প্রিয়তমা অন্তঃসত্ত্বা রিয়াকে একা মরতে দেননি রিফাত
(https://bit.ly/2tPAp2f)
৬) দেশ রূপান্তর: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে সহমরণে গেলেন স্বামী
(https://bit.ly/2UpXOms)
৭) সমকাল: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে মরণেও থাকলেন রিফাত
(https://bit.ly/2C86pTB)
৮) বাংলাটিভি: আগুনই শেষ করে দিল রিফাত রিয়ার স্বপ্নকে
(https://bit.ly/2TxC9vf)
৯) ঢাকা টাইমস: স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন
(https://bit.ly/2XHl3KT)
১০) বাংলাদেশ প্রতিদিন: কদিন পরই প্রথম সন্তানের মুখ, কিন্তু আগুন কেড়ে নিল সবকিছু
(https://bit.ly/2EQxDQr)
এছাড়া রিফাত-রিয়ার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে একটা শর্টফিল্মও নির্মিত হয়েছে (https://youtu.be/JAOi26EjNXw),
প্রতিটি খবরেই দাবী করা হয়, হাসপাতালের মর্গে রিফাত-রিয়ার উভয়েরই বন্ধু আল আকসার সাজিদ মর্গে এসে রিফাত ও রিয়ার করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন, যা শুনে সমস্ত মানুষ আবেগঘন হয়ে পড়ে, অনেকে কান্নাকাটিও করতে থাকে। আল আকসার সাজিদ তার বর্ণনায় স্পষ্ট বলে, ওয়াহিদ ম্যানসনের তৃতীয় তলাতেই থাকতো রিফাত-রিয়া দম্পত্তি।
কিন্তু সমস্যা হয়, লাশ হস্তান্তরের সময়। দেখা যায়, রিফাত-রিয়া নামক কোন দম্পত্তির লাশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, অন্তঃসত্ত্বা কোন নারীর লাশও সনাক্ত হয়নি। এমনকি কেউ এসে রিয়া-রিফাতের লাশও খুজতে আসেনি। এবং সেই আবেগঘন ঘটনার বর্ণনা করা কথিত বন্ধু আল আকসার সাজিদও হাওয়া, তার ফোন বন্ধ (https://bit.ly/2SQGMwohttps://bit.ly/2XI7lHM)।
অন্যদিকে ওয়াহিদ ম্যানসনের তৃতীয় তলায় থাকা একটি ছেলের ভিডিও সবাই শুনেছেন, যেখানে ওয়াহিদ ম্যানসনে রিফাত-রিয়া নামক কোন দম্পত্তি থাকতো না, এবং ঐ বাড়ির আবাসিক অংশের কেউ আগুনে পুড়ে নিহত হয়নি, সবাইকে নিরাপদে অন্য রাস্তা দিয়ে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। (https://youtu.be/LU7fFx6acn8)
তারমানে এটা নিশ্চিত, রিয়া-রিফাত দম্পত্তির খবরটা ভুয়া, কেউ ইচ্ছাকৃত গুজব রটিয়েছে। যেই গুজবে কেন্দে বুক ভাসিয়েছে কোটি কোটি জনগণ। কিন্তু ঘটনাতো আমরা এখানেই শেষ করে দিতে পারি না, কথিত আল আকসার সাজিদ কেন এবং কি কারণে এই গুজবটা রটালো, এটা নিয়ে এবার আলোচনা করবো-
(১) আগুনে অনেক লোক মারা গিয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাদের কাছে এমন কোন চমকপ্রদক ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে না, যা দিয়ে মানুষকে আবেগ আপ্লুত করা যায়। আল আকসার সাজিদকে যারা পাঠিয়েছে, তারা চাইছিলো মানুষকে আবেগআপ্লুত করতে। কারণ মানুষ যখন আবেগে অন্ধ হয়ে যায়, তখন তাকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে, সেটাই সে মেনে নিবে। যদি বলা হয়, ৪শ’ বছর ধরে গড়ে ওঠা পুরান ঢাকার বিশাল শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা ধ্বংস করে দাও, তবুও তারা চোখ বন্ধ করে মেনে নিবে।
(২) যেহেতু ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচে ঘটনা ঘটেছে, তাই আল আকসার সাজিদ গং ধরে নিয়েছিলো ওয়াহিদ ম্যানসনের উপরের সব মানুষ মারা গেছে, সে হিসেব কষেই সে গল্প ফেদেছিলো। কিন্তু ওয়াহিদ ম্যানসনের পেছন দিকে যে গেট আছে এবং সেটা দিয়ে যে সব মানুষ নেমে গেছে এটা তার জানা ছিলো না।
(৩) মূল থিম: “পুরান ঢাকা অধিকাংশ বাড়ির নিচে গোডাউন উপরে আবাসিক এলাকা । আগুন লাগলে দ্রুত নামা সম্ভব সম্ভব নয়। তার দরুণ জীবন দিতে হলো রিয়া-রিফাত দম্পত্তির।”- পুরান ঢাকা থেকে গোডাউন-কারখানা সরাতে হবে এই তত্ত্ব প্রচার করে যারা সুবিধা নিতে চায়, তারাই আল আকসার সাজিদকে পাঠিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় উপরে আবাসিক লোকজনও বেচে গেছে, আবার আন্ডার গ্রাউন্ডের গোডাউনও বেচে গেছে। মাঝখান দিয়ে রিফাত-রিয়ার আবিষ্কারক কথিত আল আকসার সাজিদ উধাও।
(৪) চকবাজার আগুনে যারা মারা গেছে, তাদের অধিকাংশ পথচারী, হোটেলে আসা কাস্টমারসহ আশাপাশে কেনাটাকা বা ব্যবসা করতে আসা লোকজন। অর্থাৎ নিহতের প্রায় সবাই কমার্শিয়াল পারপাসে পুরান ঢাকায় আগত। কিন্তু পুরান ঢাকা আবাসিক এলাকা, সেখানে গোডাউন-কারখানা থাকবে না, এই তত্ত্ব প্রচার করতে আবাসিক ভবনে নিহত কাউকে দেখানো প্রয়োজন ছিলো। সেই চিন্তা থেকেই রিফাত-রিয়ার জন্ম দেয়া হয়।