শুরু হয়েছে ইট ভাটার দূষণ দিয়ে, শেষ হইছে মৎস চাষে লাগাম দিয়ে।এন.সি-৩৭৬

শুরু হয়েছে ইট ভাটার দূষণ দিয়ে, শেষ হইছে মৎস চাষে লাগাম দিয়ে।
Related imageশুরু হয়েছে ইট ভাটার দূষণ দিয়ে, শেষ হইছে মৎস চাষে লাগাম দিয়ে।
শুরু হয়েছে গ্যাসের অপচয় দিয়ে, শেষ হবে ওয়াসার দায়িত্ব পিউরইটকে দিয়ে।
শুরু হয়েছে ক্রোমিয়ামে ক্যান্সার দিয়ে, শেষ হইছে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি বিতাড়ন দিয়ে,
শুরু হইছে, কেমিক্যাল দিয়ে, শেষ হবে পুরান ঢাকার ব্যবসার ইতি দিয়ে
শুরু হয়েছে, আইসিইউতে সুপারবাগে মৃত্যু দিয়ে, শেষ হবে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস করে।
আজকে দৈনিক প্রথম আলোতে খবর আসছে,
পিজি হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু ৮০% হয় সুপারবাগের কারণে (অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ব্যাকটেরিয়া)। খবরের এক পর্যায়ে বলছে, পোল্ট্রি মুরগীর মাধ্যমে মানব শরীরে এন্টিবায়োটিক ঢুকতেছে। (https://bit.ly/2XBQiGd)
প্রথম আলো বলছে, খবরটি ২২শে এপ্রিল ব্রিটিশ টেলিগ্রাফ পত্রিকা থেকে নেয়া। (https://bit.ly/2GqWdXM)
আবার ব্রিটিশ টেলিগ্রাফ বলছে, খবরটি আসলে গত ৮ই এপ্রিল বাংলাদেশের ডেইলি স্টার থেকে নেয়া।(https://bit.ly/2PtQzIG)
মাঝখানে একটু বলে রাখি, আজ থেকে দেড় বছর আগে আমি এক স্ট্যাটাসে বলেছিলাম,
ডেইল স্টারের মাহফুজ আনাম হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এ পরিচালিত ইউএসজিএলসি-এনইডি-ইএফইএক্স নেটওয়ার্কের দৈনিক পত্রিকার পাবলিশারদের সংগঠন World Association of Newspapers and News Publishers International এর সদস্য। (https://bit.ly/2USuXeP)
যাই হোক, খবরের ভেতরে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের রেফারেন্সে আইসিইউতে মুত্যুর খবর বলা হলো, সেই সায়েদুর রহমানের রেফারেন্সে গত ৫ এপ্রিল দৈনিক কালেরকণ্ঠে একই বিষয়ে (সুপারবাগে আইসিইউতে মৃত্যু) একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো (https://bit.ly/2PrX8eG)। সেখানে সুপারবাগ রুখতে মানুষের মধ্যে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ওষধ সেবন এবং এন্টিবায়োটিক কোর্স শেষ না করাকে বেশি উল্লেখ করেন। কিন্তু ডেইলি স্টার, টেলিগ্রাফ ও প্রথম আলো তার মূল কথা ছোট করে তার মধ্যে পোল্ট্রি মুরগীকে ঢুকিয়ে দেয়। একই খবর নইম নিজামের বাংলাদেশ প্রতিদিন একধাপ এগিয়ে মুরগির বদলে গরু মোটাতাজা করতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে বলে লিখে। (https://bit.ly/2VoyWiF)
আসলে এসব খবর এমনি এমনি ছাপা হয় না, এগুলোর পেছনে কোন না কোন জ্বালানি কাজ করে।
আপনাদের জানার জন্য বলছি, গত বছরের শেষের দিকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। (https://bit.ly/2IEutlT)
যখনই আমি শুনেছি, বিশ্বব্যাংকের বিদেশী ইনভেস্ট বাংলাদেশের ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের মধ্যে ঢুকতেছে, তখনই বুঝছি, দেশীয় খামারিদের পতন শুরু হলো বলে।
আপনি শুধু ষড়যন্ত্র খুঁজেন, পোল্ট্রি মুরগিতে কি এন্টিবায়োটিক দেয় না ?
অবশ্যই দেয়। কিন্তু পুরো ঘটনা না জেনে, প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের গুজবে কান দেয়া কি ভালো কাজ হবে ?
মূলতঃ পোল্ট্রি মুরগিতে সবচেয়ে বেশি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় ঠাণ্ডা দূরীকরণে। মার্চ-এপ্রিলের দিকে যখন গরম-ঠাণ্ডা একসাথে পড়ে, তখন সাধারণত মুরগির বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগে। একটা মুরগির বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগলে খামারের সব মুরগির বাচ্চাকে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। মাস শেষ হলে আগের মুরগি চলে গিয়ে নতুন মুরগি উঠে, তাই ঢালাওভাবে সব মুরগিতে এন্টিবায়োটিক আছে বা ১২ মাস এন্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে, এটা আমার কাছে অপপ্রচার বলে মনে হয়।
আরেকটি পয়েন্ট, মুরগির এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় ৮-৯ দিন বয়সে, ডাক্তাররা বলে যায়, ২০-২১ দিন বয়স পর্যন্ত মুরগির শরীরের এন্টিবায়োটিক থাকে, তাই এই কয়দিন মুরগি খাবেন না। অতঃপর মুরগিগুলো বিক্রি হয় ৩০-৩৫ দিনে। তারমানে পশু ডাক্তারের হিসেবে মুরগীর শরীরে এন্টিবায়োটিক থাকে না, কিন্তু পত্রিকায় গুজব রটতেছে ‘মুরগি খাইলে মৃত্যু’ হিসেবটা মিলতেছে না।
আরেকটা কথা-
খবরে আসতেছে “পোল্টি্ শিল্পে এন্টিবায়োটিক বাড়তেছে”
এ কথাটা ভুল নয়, অবশ্যই ঠিক।
আবার বিশেষজ্ঞরা বলছে, অনেক অসুখে এন্টিবায়োটিক লাগে না, এন্টিবায়োটিক ছাড়াও সারানো যায়।
পাঠক ! খেয়াল করুন-
অনেক অসুখের এন্টিবায়োটিক লাগে না,
কিন্তু খামারে এন্টিবায়োটিক বাড়তেছে।
তাহলে প্যাচটা কোথায় ?
খামারিরা তো অজ্ঞ, তারা তো ইচ্ছা করে আর এন্টিবায়োটিক দিচ্ছে না, তাহলে বাড়ছে কেন ?
মূল কারণ হলো, পশু ডাক্তারের অভাব আর সেই সুযোগে ওষুধ কোম্পানিগুলোর দেদারসে ওষুধ ব্যবসা ।
কোন খামারে যখন কোন মুরগি যদি অসুস্থ হয়, তখন দ্রুত ডাক্তার দেখানো জরুরী হয়ে পড়ে, নয়ত খামারের সব মুরগি মারা যায়। কিন্তু সরকারি পশু ডাক্তার পেতে অনেক ধকল পোহাতে হয়। ১০-২০ কিলোমিটার দৌড়ে ডাক্তার পাওয়া যায় না। কিন্তু যদি কোন ওষুধ কোম্পানিকে ফোন করা হয়, তবে অজপাড়া গায়েও তাদের প্রতিনিধি চলে আসে (খামারিদের ভাষায় ডাক্তার) এবং বিনামূল্যে প্রেসক্রিপশন দিয়ে যায় এবং বলে যায় তার কোম্পানির ওমুক ওমুক ওষুধ খেতে হবে। স্বাভাবিক একটা কোম্পানির প্রতিনিধি তো চাইবেই, তার ওষুধ বেশি বিক্রি হোক, কারণ যত বিক্রি তত কমিশন। আর মূলত এ কারণেই খামারে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে। এই প্রবণতা শুধু মুরগির ডাক্তার না, মানুষের ডাক্তারদেরও একই লোভ দেখিয়ে অযথা অনেক ওষধু প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে। তাই সমস্যাটা মুরগির মধ্যে না, অন্য যায়গায়।
আমার কথা হলো, সমস্যার মূল চিহ্নিত করুন, মূল যায়গায় সমাধান করুন। সরকারি পশু ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন, খামারে গিয়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রেসক্রাইব করছে কি না, সেটা মনিটরিং করুন। কিন্তু দেশী উৎপাদন খাত নিয়ে অপপ্রচার করবেন না, গুজব রটাবেন না।
এই পোল্ট্রি মুরগীর কারণে এখনও দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ মাংশের স্বাদ পায়, দেশীয় খামারিদের বন্ধ করে দিলে তাদের নিরামিশভোজি হয়ে থাকতে হবে।
শেষ কথা হলো,
আইসিইউতে যে রোগিরা ভর্তি হয়, তারা আগেই থাকে অর্ধমৃত। সেই অর্ধমৃত (৪০০ জন) রোগির মৃত্যুর দায়ভার যদি পোল্ট্রি শিল্পকে নিতে হয়ে,
তবে প্রথম আলো ও ডেইলিস্টারের ট্র্যান্সকম গ্রুপ তো বাংলাদেশে কেএফসি’র আমদানিকারক। আর কেএফসি’র মুরগিতে রাসায়নিক পদার্থ ‘অ্যাক্রিলামাইড’ পাওয়া গেছে, যেই ‘অ্যাক্রিলামাইড’ ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির জন্য দায়ী।(https://bit.ly/2GDjOWs)। তাই কেএফসি খেয়ে বছরে কত সুস্থ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, সেই জরিপ প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার কাছে প্রকাশের দাবী করছি।