উন্নয়নের ফলাফল মূল্যস্ফীতি

উন্নয়নের ফলাফল মূল্যস্ফীতি

Image result for নদী
উন্নয়নের ফলাফল মূল্যস্ফীতি
গত ৫ই মার্চ, বিভিন্ন মিডিয়ার খবর, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। (https://tinyurl.com/y2ahlklm )
আমি জানি, যারা ফেসবুক ব্যবহার করে, তাদের কাছে এইসব খবরের কোন মূল্য নেই, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে এই খবরটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর। কারণ আজকাল বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে, তার চালের দাম, ডালের দাম, তেলের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, আগে ২০০ টাকা দিয়ে যে বাজার করা যেতো, এখন ১০০০ টাকা দিয়ে সে বাজার পাওয়া যায় না। এটাকেই বলে মূল্যস্ফীতি। সেই মূল্যস্ফীতি গতি আরো বৃদ্ধির খবর আসছে মিডিয়াতে।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, ভাই এটা জেনে আমার লাভ কি ? আমি জানলে কি মূল্যস্ফীতি কমাতে পারবো ?
আমার ধারণা, সকল সমস্যার মূলে রয়েছে অজ্ঞতা, যেখানে জনগণের অজ্ঞতা আছে, শাসক শ্রেণী সেই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই স্থানেই দুর্নীতি ও অপকর্ম করে জনগণকে কষ্ট দেয়। জনগণ যদি সব বুঝতো, তবে তাকে এত কষ্ট করতে হতো না। সারা দিন পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতো। জনগণের সেই অজ্ঞতা দূর করার জন্য আমার এই স্ট্যাটাস।
মূল্যস্ফীতি বা পণ্যের দাম কেনো বেড়ে যায় ?
মূল্যস্ফীতির অনেক কারণ থাকতে পারে, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো মুদ্রাস্ফীতি। আমি আবার বলছি, মূল্যস্ফীতি’র অন্যতম কারণ মুদ্রাস্ফীতি (বানান দুটো খেয়াল করুন)।
তাহলে মুদ্রাস্ফীতি কেন হয় ?
বাজারে যখন অযাচিত মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায় তখন মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। আরো সহজ ভাষায় যদি বলি, বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ইচ্ছামত টাকা ছাপায় তখন মুদ্রাস্ফীতি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক কেন ইচ্ছামত টাকা ছাপায় ?
সোজা উত্তর, যখন বেশি টাকার দরকার হয়, কিন্তু টাকা না থাকে, তখন ছাপায়।
কেন বেশি টাকার দরকার হয় ?
উত্তর : দেশের আর্থিক সামর্থ আছে ১০০ টাকা, কিন্তু সরকার প্রজেক্ট নিছে ১০০০ টাকার। বাকি ৯০০ টাকা ম্যানেজ করবে কিভাবে ? সেই ম্যানেজ করার জন্য ৯শ’ টাকা অতিরিক্ত ছাপায়, এটাকে বলে মুদ্রাস্ফীতি। আর এই অতিরিক্ত টাকাগুলো যখন বাজারে ছড়ায়, তখন আগের টাকার দাম কমে যায়। আগে ১ টাকা দিয়ে যে চকলেট পাওয়া যাইতো, তখন কিনতে ৫ টাকা লাগে। আগে ২০ টাকা দিয়ে যে চাল কেনা যাইতো সেটা কিনতে ৬০ টাকা লাগে। এইটা হইলো মূল্যস্ফীতি।
একটা দেশে কর্পোরেটোক্রেসি যত দ্রুত হবে, তার মুল্যস্ফীতি তত বেশি হবে। জিম্বাবুয়েতে মূল্যস্ফীতি চরমে। কয়েকদিন আগে জিম্বাবুয়ে ছাপিয়েছিলো ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের নোট (https://tinyurl.com/y2pt2ex9), মানে ১ এর পর ১৪টি শূণ্য। জিম্বাবয়েতে ১টা রুটি কিনতে এক ঝুড়ি টাকা লাগতো। (https://tinyurl.com/y2vsmokz)
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মূল কারণ কি ?
সরকার অনেক উন্নয়ন দেখাবে, অনেক মেট্রোরেল দেখাবে, অনেক ফ্লাইওভার দেখাবে, অনেক সেতু দেখাবে, অনেক রাস্তাঘাট দেখাবে, অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখাবে, অনেক পর্যটন কেন্দ্রও দেখাবে। কিন্তু সেগুলো বানানো জন্য ডাইরেক্ট আপনার থেকে টাকা নিবে না, বলবে বিদেশী বিনিয়োগ দিয়ে বানাচ্ছি, সরকারের টাকা দিয়ে বানাচ্ছি। আপনিও খুশি থাকবেন , বলবেন, আহারে সরকার কত ভালো, নিজের টাকা দিয়ে কত উন্নতি করতেছে। এত এত ফ্লাইওভার-রাস্তা-সেতু-মেট্রোরেল বানাচ্ছে, কত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, সরকারের কোন টাকা নেই, সব জনগণের টাকা, আর বিদেশী বিনিয়োগ বলে কিছু নেই, সব হলো সুদে ঋণ, যা আপনাকেই শোধ করতে হবে। হয়ত আপনার থেকে ডাইরেক্ট টাকা নিবে না, কিন্তু নেবে আপনার চালের দামের ভেতর থেকে, আপনার ডালের দামের ভেতর থেকে কিংবা আপনার তেলের দামের ভেতর থেকে। কিন্তু আপনি কিছুই টের পাচ্ছেন না, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য মোবাইল কোর্ট করতেছে, আর আপনি খুশি থাকতেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
তাহলে কি দেশে মেট্রোরেল, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার সেতু হবে না ?
অবশ্যই হবে। অবশ্যই দেশকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু সেটা ঋণের টাকায় নয়। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের টাকায়। একজন বাবা যখন সংসারে নতুন ফার্নিচার বানাতে চায়, তখন কি সে বাইরে থেকে লোন করে বানায় ? নাকি আগে ঘরে ইনকাম বাড়িয়ে তারপর সেই টাকা দিয়ে বানায় ? যেমন ধরুন, বাংলাদেশে একটি বড় উৎপাদন জোন হচ্ছে পুরান ঢাকা। সরকার যদি পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও কারিগরদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে এই উৎপাদন জোনটাকে আরো বড় করতে পারে, তাদেরকে তাদের পণ্যগুলো বাংলাদেশের মার্কেট ছাড়িয়ে বিদেশী বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রির সুযোগ করে দিতো, তবে তাদের মাধ্যমে দেশের ইনকাম বাড়তো। সেই ইনকামের টাকা দিয়ে দেশে হাজারো ফ্লাইওভার, সেতু, মেট্রোরেল করুক, সমস্যা নেই।
সরকার কেন নিজ দেশের টাকা রেখে বিদেশের টাকার দিকে হাত বাড়ায় ?
সরকার যদি বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীকে বিদেশের মাটিতে ব্যবসা করার সুবিধা করে দেয়, শর্ত হিসেবে ঐ ব্যবসায়ীকে বলে তোমার লাভের ২৫% আমাকে দিবে। তবে ঐ ব্যবসায়ী কিন্তু এক পায়ে খাড়া থাকতো। ঠিক একইভাবে কোন বিদেশী ব্যবসায়ী যদি বাংলাদেশ সরকারকে বলে, তোমার দেশে আমাকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দাও, তার বদলে আমার লাভের ২৫% তোমাকে কমিশন হিসেবে দিবো, তখন সরকার কিন্তু এক পায়ে খাড়া থাকবে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর থেকে টাকা বৃদ্ধি করাটা দেশের উন্নতি, কিন্তু সময় সাপেক্ষ। কিন্তু বিদেশের ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেয়াটা অনেক সোজা ও দ্রুত বিরাট কমিশন পাওয়ার সুযোগ। আর এই কমিশন বিজনেস করলে খুব সুবিধা। দেশে দুর্নীতি করলে প্রমাণ থাকে, কিন্তু বিদেশীদের সাথে কমিশন বিজনেস করলে কোন প্রমাণ থাকে না। ঐ টাকা নিয়ে বিদেশের মাটিতে দ্বীপ কিনে রাখে, নতুবা সুইস ব্যাংকের মত কোন স্থানে জমা রেখে দেয় শাসক শ্রেণী।
গত কয়েকদিন আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলো, “বিএনপি আমলের চেয়ে বাজেট বেড়েছে সাতগুণ” (https://tinyurl.com/y397e3kp)
আমার মনে হয়, তখন বিএনপির বলা উচিত ছিলো, বিএনপির আমলের থেকে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৪ গুন । বিএনপির আমল শেষে ছিলো ১৬ হাজার টাকার মত, এখন হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। (https://tinyurl.com/y5xnx9jphttps://tinyurl.com/y5zy9sg4 ), বিষয়টা হলো ঋণ করে ঘরের ফার্নিচার কেনার মত উন্নয়ন হয়েছে। যদিও বিএনপি বিষয়টি বলেনি।
আমার মনে হয়, সবাই সবার লাভ বুঝে। সরকারও বুঝে, বিদেশীরাও বুঝে। বুঝে না শুধু জনগণ। এই যে পুরান ঢাকার ব্যবসাগুলো কেমিক্যাল ট্যাগ গিয়ে ধ্বংস করতে সাধারণ জনগনই উস্কানি দিচ্ছে, তারা কি জানে, এই দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হলে তার দৈনন্দিন সব খরচ বেড়ে যাবে, ১ টাকার মাল ৫ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। যদি বুঝতো, তবে বেকুবের মত ফেসবুকে পুরান ঢাকার দেশীয় শিল্প ধ্বংস করতে চিল্লাপাল্লা করতো না।