বাংলাদেশের রাজধানী কি ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিতে হতে পারে?এন.সি-৩৫৬

বাংলাদেশের রাজধানী কি ঢাকার বাইরে 
সরিয়ে নিতে হতে পারে?

Image result for সাগর
বাংলাদেশের রাজধানী কি ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিতে হতে পারে?
একটা মহলের মনে কিন্তু এ ধরনের প্রশ্ন উদয় হওয়া শুরু করেছে। শুধু উদয় নয়, ধিরে ধিরে এই চিন্তাটা বাড়তেই থাকবে। কারণ যত দিন যাবে, তত ঢাকা মৃত থেকে মৃততর হতে থাকবে, আর তখনই এ ধরনের চিন্তা বার বার নাড়া দিবে।
কিন্তু একটা কথা তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়াবে-
যদি রাজধানীকে সরিয়েই নিতে হয়, তবে এতদিন বিশাল বিশাল ইনভেস্ট করা হলো কেন?
কেন এতগুলো ফ্লাইওভার বানানো হলো ?
কেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানানো হচ্ছে ?
কেন মাঝ বরাবার মেট্রোরেল বানানো হচ্ছে ?
কেন চক্রাকার মেট্রোরেলের চিন্তাভাবনা চলছে ?
কেন পাতাল সড়ক ও পাতাল রেল বানানোর পরিকল্পনা চলছে ?
কেন ট্রান্সপোর্টেশন হাব নির্মাণ করার পরিকল্পনা চলছে ?
যেই রাজধানীকে সরিয়ে নিতে হতে পারেন, সেখানে কেন এত এত ইনভেস্ট করছেন ?
এই টাকাগুলোর দায় তো ঠিকই জনগণের উপর চাপবে
তাদেরকে সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে
যদি আগেই রাজধানী স্থানান্তর করেন, তবে যানজট হ্রাসের নামে এত এত টাকা খরচ করার কোন মানেই হয় না ।
কথায় বলে, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।”
আমি পেইজ খুলেছি ২০১৬ সালে।
আপনারা লক্ষ্য করবেন, আমি সেই ২০১৬ সাল থেকে বলে আসছি-
যতকিছুই বানান, উপর দিয়ে বানান, আর নিচ দিয়ে বানান
কোন কাজ হবে না, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার একমাত্র উপায় ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ।
কিন্তু কেউ কিন্তু কথা শুনলো না। নেয়া হলো এবং হচ্ছে বড় বড় সব পরিকল্পনা।
কিন্তু কেউ বুঝলো না, বিদেশী টাকা এনে এসব বড় বড় স্থাপনা বানালে জনগণকেই এইসব টাকা ফেরত দিতে হবে। জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল চাহিদার খরচ বেড়ে যাবে। ৩০ টাকার চাল ৬০ টাকা হয়েছে, কয়েকদিন পর ১২০ টাকা হবে। মানুষ না খেতে পেয়ে তখন মারা যাবে।
এই টাকাগুলো ঢাকার মধ্যে ইট-বালি-সিমেন্টের মধ্যে ইনভেস্ট না করে যদি ঢাকার বাইরে কোন প্রডাক্টিভ খাতে ইনভেস্ট করা হতো, তবে দেশটা এতদিনে অনেক এগিয়ে যেতো। পাশাপাশি অটোমেটিক ঢাকার উপর জনগণের চাপ হ্রাস পেতো।
বর্তমানে অর্থনীতিতে ‘প্রবৃদ্ধি’ শব্দটার খুব ব্যবহার লক্ষ্য করবেন।
প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি গ্রথ দিয়ে অর্থনীতি মাপা হয়।
যদিও বর্তমানে তারা যে হিসেবে প্রবৃদ্ধি’র হিসেব-নিকেশ করে, তা আমার কছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, গড়মিল মনে হয়। তবুও ‘প্রবৃদ্ধি’ টার্মটার প্রকৃত হিসেব নিয়ে একটু গবেষণা করি-
দেখবেন- প্রবৃদ্ধি তালিকায় উপরের দিকে সব সময় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থাকবে। এবং নিচের দিকে অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়া উন্নত দেশগুলো থাকবে। যেমন উপরের দিকে আছে ইথোপিয়া, রুয়ান্ডা, বাংলাদেশ, ভুটান। অপরদিকে নিচের দিকে আছে- অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি।
(https://bit.ly/2VlynTthttps://bit.ly/2vdS16o)
এর কারণ কি ?
এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। মূল কারণ তারা যেটা বুঝাতে চায়, অনুন্নত এলাকায় ইনভেস্ট করলে অর্থনৈতিক উন্নতি হয় দ্রুত, যেটাকে তারা প্রবৃদ্ধি বলে দাবী করছে।
যেমন- একটা ধনী পরিবার ও একটি দরিদ্র পরিবার। আপনি যদি উভয়কে ১০০০ টাকা করে দেন, তবে দুটো পরিবারের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি লক্ষ্য করুন। দেখবেন- যে ধনী পরিবার, তার কাছে যখন ১ হাজার টাকা আসবে, সে হয়ত সেটা পাত্তাও দিবে না। এর দ্বারা তার পরিবারে নতুন কোন অর্থনৈতিক লেনদেন বৃদ্ধিও পাবে না। অপরদিকে দরিদ্র পরিবারকে যদি আপনি ১০০০ টাকা দেন, তবে হয়ত সে ভালোকিছু বাজার করবে, অথবা সে হয়ত নতুন কিছু কেনাটাকা করবে, অর্থাৎ টাকা পেয়ে সে নতুন কোন অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেবে। দুই পরিবারের তুলনা করলে দরিদ্র পরিবারটির প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে।
ইসলাম ধর্মের অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলো কিন্তু বেশ শক্তিশালী, সেই তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করলে শেখার অনেক কিছু আছে। যেমন- ইসলামে বলা আছে জাকাত দেয়ার জন্য। জাকাত শব্দের অনেকগুলো অর্থ আছে, তার মধ্যে একটি অর্থ হলো ‘বৃদ্ধি’।
জাকাত দিতে হয়, ৮ প্রকার ব্যক্তিকে-
ফকির, মিসকীন, জাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই), নওমুসলিমদের মন জয় করার জন্য, দাস মুক্তির উদ্দেশ্যে, ঋণগ্রস্ত, যুদ্ধরত, মুসাফির। (bn.wikipedia.org/wiki/যাকাত)
ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, এই ৮ শ্রেণীর তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক চাহিদা বিদ্যমান। সুতরাং এদের অর্থ দিলে অপেক্ষাকৃত দ্রুত অর্থনৈতিক লেনদেন বৃদ্ধি পাবে, যাকে ইসলামের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘বৃদ্ধি’ আর বর্তমানে অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে ‘প্রবৃদ্ধি’।
এবার আসুন, এই সূত্রটি আমরা দেশের বিভিন্ন বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়ে আসি।
আমাদের দেশে এখন বেশিরভাগ ইনভেস্ট হচ্ছে রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক।
এক্ষেত্রে যে পরিমাণ লাভবান দেশ হচ্ছে,
ইনভেস্ট যদি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে হতো, তবে লাভের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতো, কারণ ঐ জেলাগুলো অপেক্ষাকৃত কম উন্নত।
কিন্তু এখন যেটা দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় যেখানে ১টা রাস্তা আছে, তার মাথার উপর আরো ৩টা রাস্তা বানাচ্ছে। যেহেতু “ইনভেস্ট যেখানে হবে, লোক সেখানে আসবে”, তাই ঢাকা শহরে দিনে দিনে লোক বাড়তেই থাকবে, কমবে না। কিন্ত ইনভেস্টটা যদি ঢাকার বাইরে হতো, তবে একদিকে যেমন প্রবৃদ্ধি বহুগুন বেশি হতো, অন্যদিকে ঢাকার জনসংখ্যার চাপও কমতো।
সত্যি বলতে-
বাংলাদেশের এত টাকা নেই যে, ইচ্ছামত হাজার কোটি টাকা অপচয় করবে।
কোন যায়গায় ইনভেস্ট করলে সর্বোচ্চ আউটপুট পাওয়া যায়, সেটা চিন্তা করেই ইনভেস্ট করা উচিত।
শুনেছি, মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার বানানো হয়েছিলো গাড়ির বাম হাতে স্টিয়ারিং’র কথা মাথায় রেখে। যদিও বাংলাদেশে গাড়ির স্টিয়ারিং থাকে ডান দিকে। (https://bit.ly/2GYvVfT)
তারমানে যারা এত হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথা চিন্তা করতেছে, তারা জানেই না- বাংলাদেশের গাড়ির স্টিয়ারিং ডান দিকে না বামদিকে থাকে।
সেদিক বিবেচনা করলে- পুরো অর্থনীতি হিসেব করে কোন দিকে ইনভেস্ট করলে দেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে, সেটা বিবেচনা করার মত চিন্তা শক্তি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের আদৌ আছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে জনগণ যদি বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা শুরু করতো, তবে হয়ত একটা সময় নীতি নির্ধারকরাও বিষয়টা বুঝতে পারতো। তাই জনগণের বুঝার অপেক্ষায়…..।
Image may contain: text