আমার মনে হয়, ‘গণতন্ত্র মানেই জনগণের তন্ত্র’ এটা বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি কথা। সম্রাজ্যবাদীরা খুব সহজ পদ্ধতিতে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের এই ধোকার ট্যাবলেট বিশ্বের আমজনতাকে খাওয়াতে সফল হয়েছে।
একটা সময় সম্রাজ্যবাদীরা বিভিন্ন এলাকায় সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে সেই দেশ দখল করতো। কিন্তু এটা বেশ জটিল পদ্ধতি এবং ঐ এলাকার সম্পদ লুণ্ঠনের সময় ঐ এলাকার মানুষজনের সমস্যাগুলোও কাঁধে নিতে হয়। এ কারণে সম্রাজ্যবাদীরা নতুন পলিসি চালু করলো। এ পলিসিতে প্রথমে তারা তাদের দখলে তারা উপনিবেশগুলো ভেঙ্গে দিলো এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর নতুন নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দিলো। এরপর সেই রাষ্ট্রগুলোতে চালু করে দিলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র এমন এক পলিসি, যার মাধ্যমে সম্রাজ্যবাদীদের আর ঐ দেশে সৈন্য বাহিনী পাঠাতে হয় না, বরং ঐ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে গুতাগুতি করতে গিয়ে উপরে সম্রাজ্যবাদীদের কাছে সাহায্য পেতে প্রার্থনা করে। আর তখন সম্রাজ্যবাদীরা বলে, “ঠিক আছে কোন দল আমাকে কত সুবিধা দিবে, আমার কত সিস্টেম নিজ দেশে অ্যাপ্লাই করবে” এই শর্তে ঐ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় আনে। ফলে ঐ দেশ দখল না করেও ঐ দেশের মানুষ দিয়েই নিজের স্বার্থ ও পলিসি বাস্তবায়ন করে সম্রাজ্যবাদীরা।
যাই হোক, কথা বলবো নূর হোসেন সম্পর্কে, যে ১৯৮৭ সালে নিহত হয়েছিলো এরশাদ সরকারের পুলিশের গুলিতে।
আসলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় অনেক মানুষ, কিন্তু নূর হোসেন বেশি স্মরণীয়, কারণ তার বুকে লেখা ছিলো ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, আর পিঠে লেখা ছিলো- ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।
আসলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় অনেক মানুষ, কিন্তু নূর হোসেন বেশি স্মরণীয়, কারণ তার বুকে লেখা ছিলো ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, আর পিঠে লেখা ছিলো- ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।
এরশাদ মারা যাওয়ার পর এক স্ট্যাটাসে আমি বলেছিলাম, এরশাদ যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক আর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সে ভালো-মন্দ যাই করুক, সে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিদেশী ব্লকগুলোর কথা ঠিক মত শুনতেছিলো না। এ কারণে তাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে উঠে পড়ে লেগে যায় সব বিদেশীব্লকগুলো। এবং সে কারণে যারা সারাদিন নিজেদের মধ্যে চুলোচুূিলতে ব্যস্ত থাকে, তারাও গলায় গলায় ধরে নেমে যায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে।
সম্প্রতি নূর হোসেনকে জাতীয় পার্টির নেতা রাঙ্গা মাদকাসক্ত বলায় হঠাৎ করে একটি মহল ক্ষেপে উঠার কারণ- নূর হোসেন ছিলো বিদেশী ব্লকগুলোর ‘চেতনার খুটি’, যেই খুটিকে পূজি করে তারা তাদের অবাধ্য এরশাদকে নামানোর আন্দোলনকে বেগবান করেছিলো। রাঙ্গা সেই খুটি ধরে নাড়া দিয়েছে, তাই বিদেশী ব্লকগুলোর দেশীয় সদস্যদের এত হৈ চৈ।
মূল কথা হলো- গণতন্ত্র মানেই জনগণের শাসন নয়, বরং গণতন্ত্র মানেই বিদেশী ব্লকগুলোর শাসন এবং জনগণের দুধ ভাত বানিয়ে দেয়া।
তাই নূর হোসেনের বুক পিঠে প্রকৃত লেখা হওয়া উচিত – “গণতন্ত্র মুক্তি পাক, জনগণ নিপাত যাক”।