বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছে ভারত। এন.সি- ১০৪

বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছে ভারত।


বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছে ভারত
এটা বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার কথা। এই সাহায্য অনেকভাবে হতে পারে। তবে সরাসরি আর্থিক সহায়তাও করছে ভারতের বিজেপি সরকার। যার উদাহরণ ভারতীয় অর্থায়নে সাভার ও সিলেটে নির্মাণ হচ্ছে ইসকনের দুটি বড় আবাসিক ছাত্রাবাস। (https://bit.ly/2W3GHs4)
কথা আসতে পারে, ভারত কি এমনি এমনি ইসকনকে সাহায্য করছে ?
নাকি পরষ্পরের মধ্যে এজেন্ডার বিনিময় আছে ?
ভারতের সাহায্যের প্রতিদান স্বরূপ ইসকন যদি ভারতকে সহযোগীতা করে, তবে কি সাহায্য করতে পারে ?
অনেকেই বলে, ইসকন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তাদের কাজ শুধু কীর্তন করা। তারা নিরামিষভোজী ও নিরীহ।
হতে পারে, তারা জাতীয় ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক।
কিন্তু জাতীয়ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক হলেই যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক হবে, এমন কোন কথা নেই।
আর তাছাড়া সংগঠনটি তো জাতীয় কোন সংগঠন নয়, এটা একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন।
তাই তাদের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকা অস্বাভাবিক নয়।
পাশপাশি, তাদের কাজ শুধু কীর্তন করা, তারা নিরামিষভোজী ও নিরীহ, এতটুকু তো তারা সাধারণ মানুষকে দেখায়।
হতে পারে কীর্তন, নিরামিষভোজ ও নিরীহ প্রদর্শন তাদের আর্টিফিশিয়াল ফেস, কিন্তু তাদের রিয়েল ফেস অন্যটা, যা সাধারণ মানুষের জানা নাই।
কারণ, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম এক সাথে আছে বহু আগে থেকে। কিন্তু পরষ্পরিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা খুব একটা দেখা যায় না।
কিন্তু গত ৫-৭ বছরে বাংলাদেশে যে হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা দেখা যায়, তার পেছনে ইসকনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যেমন-
১) ২০১৪ সালে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে ইসকন মন্দিরের পাশে মসজিদে তারাবীর নামাজে বাধা দেয়া।
২) ২০১৬ সালে সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে মুসল্লীদের উপর গুলি বর্ষণ। সেই গুলি বর্ষণের ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। তখন অর্নব ভট্টাচার্য নামক এক সিলেটি স্ট্যাটাস দেয়, ইসকন মন্দিরগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রাখা হয়।
(https://bit.ly/2pEqXzW)
শুধু ইসকন-মুসলিম নয়, সনাতন-ইসকনের মধ্যেও মারামারি-খুনোখুনির ঘটনা ঘটে।
১) ২০০৯ সালে ঠাকুরগাও সদরে ইসকন-সনাতন সংঘর্ষে একজন সনাতন নিহত হয়।
২) ২০১৯ সালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে মন্দিরের অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সনাতন-ইসকন দ্বন্দ্বে ১৫ জন আহত হয়।
এছাড়া বাংলাদেশে চাকুরী সেক্টরে নিজেদের লোক ঢুকাতে প্রেসার দিয়ে থাকে ইসকন, যা সাউথ এশিয়ান মনিটরের কাছে স্বীকার করে স্বামীবাগ আশ্রমের ব্রহ্মচারী ঈশ্বর গৌরহরিদাস। (https://bit.ly/35YnrBc)
তাদের যদি শুধু রাজনৈতিক এজেন্ডাই থাকবে, তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের লোক প্রবেশে লবিং করার মানেটা কি ??
এ খবরগুলো দ্বারা এটা অনুধাবন করা যায়, এতদিন ধরে চলে আসা সনাতন বলতে আমরা যে কমিউনিটিকে চিনতাম সেখানে একটা পরিবর্তন আসছে। ইসকন সেই পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করছে এবং সেটা করতে গিয়ে তাদের সনাতন হিন্দুদের সাথেও সংঘর্ষণ হচ্ছে। আর মুসলমানদের সাথে যে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা তো সবাই দেখতেই পাচ্ছে।
ইতিহাস বলছে, মুঘল আমলে হিন্দু জনগোষ্ঠী দৃশ্যত্ব নিরীহ-ই ছিলো। কিন্তু ব্রিটিশদের সংস্পর্ষে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুনত্ব আসে। আর সেই নতুনত্বটা কে গুরুত্ব না দেয়ার ফল আমরা ভোগ করেছি ২০০ বছর ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা হারিয়ে। তাই আন্তর্জাতিক কোন কমিউনিটির যোগসাজসে কোন কমিউনিটির মধ্যে যখন পরিবর্তন আসে, তখন দেশের স্বার্থেই তা গুরুত্ব দেয়া উচিত।
উল্লেখ্য, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ইসকন কার্যক্রম বেশি। ভারতে ইসকনের মোট মন্দির সংখ্যা মাত্র ৬৪টি। অপরদিকে বাংলাদেশে ইসকন মন্দিরের সংখ্যা ৯৫টি। ভারত-বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম কম বেশি হওয়ার কারণ, ভারতে আসলে রামভক্ত বেশি। কিন্তু ইসকন কাজ করে কৃষ্ণ ভক্তদের নিয়ে। বাংলাদেশে কৃষ্ণের প্রচার করে হিন্দুদের সুসংগঠিত করেছে ইসকন, আর সংগঠিত হিন্দুদের হাতে নেয়ার সেই সুযোগটা নিতে চাইছে ভারত, যার কারণে তারা ইনভেস্ট করছে ইসকনে এবং তারাও সেটা গ্রহণ করছে।
আমরা অনুমান করতে পারি-
ইসকন ও ভারতের আরএসএস’র মধ্যে একটি কোয়ালিশন হয়েছে বাংলাদেশকে নিয়ে। এক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশে ইসকনের ধর্মীয় কার্যক্রম বিস্তারে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে তারা আওয়ামীলীগের উপর প্রভাব খাটিয়ে ইসকনকে সুযোগ করে দিবে। যার উদহারন হচ্ছে, ইসকন সৃষ্টির ৪০ বছরে বাংলাদেশে ইসকনের মন্দির সংখ্যা ছিলো ৩০টির মত। কিন্তু শেখ হাসিনার শেষ ১০ বছর শাসন আমলে সেই মন্দির সংখ্যা ৩ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫ হয়েছে। (http://iskcondhaka.org/temple-list/)
অপরদিকে বিনিময় হিসেবে ইসকন বাংলাদেশে আরএসএস’র শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। আরএসএস যেমন অরাজনৈতিক সংগঠন, তাদের কাজ শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া। কিন্তু তাদের ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বড় বড় উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক সংগঠন তৈরী হয়।
ঠিক তেমনি ইসকনও অরাজনৈতিক সংগঠন হয়ে শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে যাবে, কিন্তু তার মাধ্যমে বাংলাদেশে উগ্রহিন্দুত্ববাদী পরিবেশ তৈরী হবে, বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রস্তুত হবে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে। তবে ইসকন শুধু একা নয়, যেহেতু হিন্দুদের মধ্যে ধর্ম পালনে অনেক ভাগ আছে, তাই আরএসএস তাদের মতবাদ ছড়াতে বাংলাদেশে এরকম অনেক হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন, মঠ, মন্দির বা ধর্মগুরুর উপর ভর করতে পারে। হিন্দু মহাজোট, হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান্ ঐক্য পরিষদ, জাগো হিন্দু (ছাত্র উইং), সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ (ছাত্র উইং), ভাগবত সংঘ- ডিএমপি।(পুলিশ উইং)।
এখন কথা হচ্ছে-
হিন্দুদের ধর্মীয় এজেন্ডা যে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা তা তো আপনি অস্বীকার করতে পারেন না।
আবার ভারতীয় হিন্দুরা যে মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশ দখলের হুমকি দেয় এবং
বাংলাদেশের হিন্দুরাও যে অনলাইন-ফেসবুকে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার কথা বলে না, সেটাও তো আপনারা অস্বীকার করতে পারেন না।
কিন্তু সে কথাটা যখন আপনি মুখে উচ্চারণ করতে যান, তখন কেন সমস্যা হয়ে যায় ?
তখন কেন আপনাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী, দাঙ্গাবাজ, হ্যাকার, কুচক্রী, জঙ্গী ইত্যাদি উপাধিগুলো পেতে হয় ?
অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে বললে তো যারা অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের গায়ে লাগার কথা।
আপনার গায়ে কেন লাগে ? কেন আমাকে জঙ্গী তবকা পেতে হয়? কেন গুলী করা হয়?
তবে কি আপনি আপনিও অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার পক্ষে ? অথবা তাদের দ্বারা ব্রেন ওয়াশড ??
আগে নিজেকে পরীক্ষা করুন।