ন ডরাই : ‘সি সার্ফ সেক্স’ টুরিজম।এন.সি-৪৫

ন ডরাই : ‘সি সার্ফ সেক্স’ টুরিজম
Related imageএকটা সিনেমা নাকি মুক্তি পেয়েছে, নাম – ন ডরাই।
কেউ কেউ বললো সিনেমাটি নাকি নারীবাদী সিনেমা। বললো- নারীদের মুক্তি দেবে এই সিনেমা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- কি থেকে মুক্তি দেবে?
সে বললো- পরিবারের বাধন থেকে, সামাজিক শৃঙ্খলা থেকে।
আমি বললাম- পরিবারের বাধন আর সামাজিক শৃঙ্খলা থেকে বের হয়ে তারপর নারী কোথায় যাবে ?
উত্তরে সে বললো- পানিতে ।
আমি বললাম- পানিতে তো মাছ থাকে, মানুষ না। মানুষ সামাজিক জীব, সে পরিবার আর সমাজ ছাড়া থাকতে পারবে না। নাকি পরিবার আর সামাজিক বাধন থেকে বের করে নারীকে অন্য কোন স্বার্থে ব্যবহার করা হবে ?
মুখে বলবে- নারী স্বাধীনতা, কিন্তু করবে নারী দিয়ে ব্যবসা।
আর সেটা প্রচার করার জন্যই এ সিনেমা।
সত্যি বলতে নারীবাদ বা নারী স্বাধীনতা বলে কিছু নাই,
সব হলো নারীকে দিয়ে ব্যবসা করার ধান্ধা।
মুখে ফেনা তুলবে- নারী স্বাধীনতা, নারী মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন বলে
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাবে, নারীকে ঘর থেকে বের করে তার থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে শ্রম নিচ্ছে,
নারীর শরীর দেখিয়ে পণ্যের বিজ্ঞাপন করছে, পুরুষ কাস্টমার আকৃষ্ট করছে
কিংবা নারীকে চাকুরীজীবী বানিয়ে তার মাধ্যমে অন্য পুরুষ কলিগদের মনোরঞ্জন বা ফিট রাখছে।
এর বাইরে নারীবাদের আর কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য আছে বলে আমার মনে হয় না।
ন ডরাই’ নামক যে মুভিটা বের হইলে, এটার ট্রেইলার দেখে আমার মনে হইছে,
জাস্ট ‘সি সার্ফ সেক্স’ টুরিজমকে মাথায় রেখে এটা করা হইছে।
প্রথম অবস্থায় এর মুভির মাধ্যমে নারীদের মাঝে সার্ফিং জনপ্রিয় করে নারীদের গণহারে নামানো হবে। এরপর দুই-এক জন সাধারণ পোষাক পরে সার্ফিং করতে গিয়ে ডুবে মারা যাওয়ার পর মিডিয়ায় গণহারে শুরু হবে পোষাকের দোষ দেয়া। প্রচার হবে- সুইমসুট বা বিকিনি পড়লে অনেক নিরাপদে সার্ফিং করা যায়। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে বিকিনি আর সুইম সুট মেনে নিন। আর একবার বিকিনি-সুইমসুট শুরু করতে পারলেই পুরুষ পর্যটক আর ঠেকায় কে ?
মুখে বলবে অ্যাডভেঞ্জার সার্ফিং করতে আসছি, কিন্তু আসছে তো দর্শণ দিয়ে ধর্ষণ করতে।
এসময় গাইড হিসেবে জনপ্রিয়তা পাবে নারী এসকর্টরা, যারা এক ঢিলে দুই সুবিধা দিতে পারবে, সার্ফিংও শেখাবে, আবার বিছানায়ও সার্ভ করবে। তবে এ কাজটির জন্য প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় মেয়েদের, অন্য এলাকার মেয়েরা সী-বীচে গিয়ে কাজটা করতে পারবে না। এজন্য মুভিটা স্থানীয় মেয়েদের টার্গেট করে তাদের ভাষায় করা হইছে, যেন তাদের উপর আগে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে এখনও বিকিনি বা সুইমসুট পরিহিতা নারীদের দেখা যায় না।
কিন্তু পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে তাদের আনতে হবে।
কিন্তু কোন অজুহাতে সেটা আসবে ?
সেটা শুরু করা সহজ হবে এই সার্ফিংর নাম দিয়ে।
অনেকের হয়ত জানা আছে বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র তৈরীর কাজ চলছে।
অনেকে বিদেশী ইনভেস্টেও আসতেছে। থাইল্যান্ডের একটা কোম্পানি টেকনাফে একটা বড় পর্যটন পার্ক করতে ৪ হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছে। এছাড়া সাবরাংয়ে তৈরি হচ্ছে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১১শ’ একর এলাকাজুড়ে ‘বিশেষ এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন’।
সরকারও তাই কক্সবাজারে পর্যটকদের আসার সুবিধার জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর বানানোর কাজ করছে।
তবে সত্যিই বলতে কি, শুধু সমুদ্র সৈকত দেখে পর্যটকরা কখনই আকৃষ্ট হবে না।
তাদের নারী মাংশের স্বাদ দিতে হবে। বিকিনি বীচ, নূড বীচ এগুলোর কথা শুনাতে হবে,
তাদের ‘সার্ফিং গার্লস উইথ সেক্সি বুটি’র ছবি দেখাতে হবে, তখন তারা আসবে, এর আগে না।
২০১০ সালে ইন্দোনেশিয়াতে একটা বড় সুনামি হইছিলো। ঐ সুনামিতে অনেক লোক মারা গেছিলো।
সুনামির বড় আঘাত ছিলো মেনতাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। মেনতাওয়াই হলো সার্ফিং টুরিজমের জন্য খ্যাত।
মেনতাওয়াই সম্পর্কে স্থানীয়দের বক্তব্য হলো- ঐ এলাকায় পর্যটকদের আগমন হওয়ায় স্থানীয়দের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের থেকে হয়ত ভালো হয়েছে, কিন্তু সমস্যা হলো- তাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে যত্রতত্র বিকিনি পরিহিতা নারীদের ঘোরাঘুরির কারণে তারা আর আগের অবস্থা নাই। একই কথা ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্র সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপ লম্বকের কুটা (কোয়েটা) শহরে। ঐ শহরে ১০০০ মসজিদ আছে, কিন্তু ঐ মসজিদগুলো থেকে যখন আজানের ধ্বনি ভেসে আসে, তখন ঐ শহরে বিকিনি পরিহিতা সার্ফিং নারীরাও ঘুরে বেড়ায়, এতে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ন ডরাই’ মুভিটা বাংলাদেশে সে রকম একটা কর্পোরেট প্ল্যান নিয়েই করা হইছে। তাই এখানে আলাদা নারী চেতনার গন্ধ পাওয়ার কোন কারণ দেখি না।