বাবরি মসজিদের রায় এর পর মুসলমানদের অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে ও করতে হবে। এন.সি- ৭৭

Related imageবাবরি মসজিদের রায় এর পর মুসলমানদের অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে ও করতে হবে।
কারণ আজকে হিন্দুরা বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির করবে, কালকে আদিনা মসজিদের যায়গায় নতুন মন্দির করবে, এভাবে চলতে থাকবে। যদিও দুনিয়াতে যায়গার অভাব নেই, কিন্তু হিন্দুদের দাবী- মুসলমানরা নাকি হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গেই মসজিদগুলো করেছে। এমনকি মুসলমানদের কেন্দ্র কাবা ঘর এক সময় শিব মন্দির ছিলো, এটাও হিন্দুরা প্রকাশ্যে দাবী করে। সুতরাং সুযোগ পেলেই তারা মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণ করবে, এটা তাদের বেসিক কার্যক্রম, যা তারা ইতিমধ্যে শুরু করেছে।
এখন কথা হলো, মসজিদ যেহেতু মুসলমানদের ধর্মীয় কেন্দ্র, সেহেতু মুসলমান পরিচয়ে এ অঞ্চলে ঠিকে থাকার বিষয়টি এখন সংকটে পড়ে গেছে, ফলে মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এখন অবশ্যম্ভাবী। কথা হলো- এখন তাহলে মুসলমানরা কি করবে ?
মুসলমানরা কি করবে, এটা জানার আগে মুসলমানদের জানা উচিত ফিল্ডে এখন কোন কোন প্লেয়ার আছে ? কারণ মুসলমানরা ফিল্ডে নামার আগে যদি নাই জানে, কোন জার্সি পরে কোন দলের প্লেয়ার থাকচে, তবে কাকে সে সহযোগী, আর কাকে সে প্রতিপক্ষ মনে করবে ?
বর্তমানে, এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফিল্ডে দুটি প্লেয়ার সক্রিয়-
১) উগ্রহিন্দুত্ববাদী – এরা মূলত আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ব্লকের সদস্য।
২) সেক্যুলার- এরা আসলে ডেমোক্র্যাট ব্লকের সদস্য। এদের সাথে রিপাবলিকান ব্লকের দ্বন্দ্ব, তবে সেটা শুধুই রাজনৈতিক। কিন্তু তাদের হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি বিরোধীতা দেখে মুসলমানরা বিভ্রান্ত হয় এবং তাদের দলে ভিড়তে আগ্রহী হয়ে উঠে। তারাও চায় মুসলমানদের সাথে নিয়ে রিপাবলিকান ব্লক তথা উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে যেতে। তবে এক্ষেত্রে মুসলমানরা নিজস্ব পরিচয়ে হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধতা করুক এটা তারা চায় না, তারা চায় মুসলমানরা সেক্যুলার ফর্মে এবং তাদের নেতৃত্ব হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধচারণ করুক। এখানে দুটি কথা আসে-
ক) এ অঞ্চলে রিপাবলিকান ব্লকের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট ব্লক আদৌ সফল হবে কি না ? কারণ মোদি উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের পলিসি’র কাছে সেক্যুলারিজম টিকতে পারছে না। যদি পারতো, তবে সেক্যুলার কংগ্রেস কিছু হলেও পারতো। তারাই মোদির উগ্রহিন্দুত্ববাদের কাছে উড়ে গেছে। তাই সেক্যুলার ফর্মে উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লাভ হবার সম্ভবনা ক্ষিন। আর একজন হারু পার্টির নেতৃত্বে মুসলমানরা গিয়ে ফের হারার কোন মানে হয় না।
খ) ধরে নিলাম, মুসলমানরা সেক্যুলার হয়ে ডেমোক্র্যাটদের সাথে যোগ দিয়ে উগ্রহিন্দত্ববাদীদের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্ব করলো। এবং সেখানে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বধীনদের জয় হলো। কথা হলো- সেই জয়লাভের পর মুসলমানদের ভাগ কতটুকু ? নাকি পুরো ভাগ ডেমোক্র্যাটরা নিয়ে যাবে।
কথা হলো- তাহলে মুসলমানরা এখন কি করবে ?
মুসলমানদের প্রাথমিকভাবে দুটি কাজ করতে হবে-
প্রথমত, যেহেতু উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা (রিপাবলিকান ব্লক) মুসলমান ও সেক্যুলার (ডেমোক্র্যাট) উভয়ের শত্রু, সেহেতু মুসলমানরা উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের বিরোধীতা করতে গিয়ে সেক্যুলারদের সাথে নিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেক্যুলারদের নেতা মেনে নেয়া ঠিক হবে না এবং তাদের পলিসিও গ্রহণ করা ঠিক হবে না। শুধু উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধচারণটুকু ঠিক থাকবে, বাকি পলিসি গ্রহণ করা মোটেও ঠিক হবে না।
দ্বিতীয়ত, মুসলমানদের মধ্যে নিজস্ব মতভেদগত বিভেদ ভুলে যেতে হবে। সুন্নী, শিয়া, মাহযাবী, আহলে হাদীস, পীরপন্থী, কওমীসহ যত মতপার্থক্য আছে, আপাতত নিজেদের মধ্যে সব বিভেদ ভুলে এক শত্রুর বিরোধীতায় এক থাকবে হবে। প্রয়োজনে এ গ্রুপগুলোর নেতাদের নিজেদের অনুসারীদের ডেকে বলতে হবে- তারা যেন মুসলমানদের অন্য দলগুলোকে আক্রমণ না করে, বিভেদগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া না করে। আর যদি মুরব্বীরা সে পথে না চলে তবে নতুন তরুণ ও যুবক সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ শ্রেণী যারা অনলাইলনে সংস্পর্ষে থেকে মূল বিষয়টি বুঝতেছে, তারা সকল সদস্যদের ডেকে বলবে- বর্তমানে মুসলমানদের সকল মতপার্থক্য ভুলে আপাতত এক শত্রুর বিপক্ষে এক হতে হবে। মতপার্থক্যের বিষয়গুলো নাড়াচাড়া না করাই এক সবচেয়ে ভালো কাজ।
মনে রাখবেন, এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় চাইবে- মুসলমানদের মধ্যে এসব ধর্মীয় মতপার্থক্যের বিভেদ উস্কে দিতে। এতে ডেমোক্র্যাটদের লাভ- মুসলমানরা দলে দলে ভাগ হয়ে দুর্বল হয়ে ডেমোক্র্যাটদের দলে ভিড়ে, তাদের দল ভারি করবে। অপরদিকে রিপাবলিকানদের লাভ- মুসলমানরা দুর্বল হলে তাদের ধরাশায়ী করা সহজ হবে। আমি গত কয়েকদিনে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান ব্লক সদস্যদের দেখলাম- সেই কাজটি করছে। পড়া পানি, কবিরাজসহ বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিউজ করে, মতপার্থক্য উস্কে দিচ্ছে, উদ্দেশ্য উগ্র হিন্দু ডানপন্থার বিরোধীতা করতে গিয়ে যেন মুসলমান এক না হতে পারে। বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটরা চায়, যদি মুসলমানরা উগ্রহিন্দুদের বিরোধীতা করতেই চায়, তবে সেক্যুলার ডেমোক্র্যাটাদের ছায়াতলে এসে যেন বিরোধীতা করে।
আমি পলিসিগুলো বললাম কারণ- এগুলো বর্তমানে কঠিন সময়ে মুসলমানদের বেসিক পলিসি।
এই পলিসি এড়িয়ে মুসলমানদের এ অঞ্চলে টিকে থাকা মুশকিল।
যেহেতু এ অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই কিছু বেসিক পলিসি ঠিক রাখলে মুসলমানদের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেয়া অনেক সোজা হয়ে যাবে, নিশ্চিত।