আমাকে যদি তেল গ্যাস ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এন.সি-৪৩

Related image
আমাকে যদি তেল গ্যাস ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়
তবে আমি মানুষের দৈনন্দিন খরচ তিন ভাগের এক ভাগ করে দিতে পারবো নিশ্চিত। এই এক দায়িত্বের মাধ্যমেই-
দেশী ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার ঘটাতে পারবো,
দেশী কলকারখানা বিস্তার করে বিদেশে আমাদের পণ্যের মার্কেট ধরে দিতে পারবো। দূর করতে পারবো বেকারত্ব সমস্যা। অধিকাংশ অর্থনৈতিক সমাধান করে দিতে পারবো, কোন সমস্যাই দেখি না।
না ! এরজন্য আমাকে কোন দেশী সম্পদ দেয়ার প্রয়োজন নাই,
সম্পূর্ণ বিদেশ থেকে আমদানি করা সম্পদ দিয়েই পারবো,
(দেশী সম্পদ দিলে আরো বেশি করা সম্ভব)
বর্তমানে আন্তর্জাতিক মার্কেটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ৩০ টাকা লিটার। প্রতি লিটার পরিশোধনে ১ টাকার মত খরচ হলে ৩১ টাকা হয়। এরপর সেখান থেকে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিন, বিটুমিন ইত্যাদি পায়। এরপর সরকার-
অকটেনে কমপক্ষে ৩০ টাকা লাভ করে বিক্রি করে ৮৯ টাকায়
পেট্রল কমপক্ষে ২৫ টাকা লাভ করে বিক্রি করে ৮৬ টাকায়
ডিজেলে কমপক্ষে ২৫ টাকা লাভ করে বিক্রি করে ৬৫ টাকায়
কেরোসিনে কমপক্ষে ২৫ টাকা লাভ করে বিক্রি করে ৬৫ টাকায়
ফার্নেস ওয়েলে কমপক্ষে ১৫ টাকা লাভ করে বিক্রি করে ৪২ টাকায়।
সরকার এত টাকা লাভ করার পরও বলতেছে সে লাভ করতে পারছে না, দাম বাড়াতে চায়।
খুব ভালো কথা। আমি যদি এই দায়িত্ব হাতে পেতাম, তবে প্রথমে এই খাত বেসরকারীকরণ করে দিতাম।
এরপর সব ব্যবসায়ীকে বলতাম এখানে ইনভেস্ট করো। এবং সেখানে কোন বাধ্যবাধকতা রাখতাম না।
দাম (ডিমান্ড) যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ সেখানে ব্যবসায়ীর সাপ্লাই হতো, ফলে দাম কমে যেতো।
আর দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রতিযোগীতা শুরু হলে গুণগত মান বৃদ্ধি পেতো এবং পণ্যের দাম কমতে থাকতো।
শুনলাম- সরকারীভাবে যে জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সেখানে নাকি অপরিশোধিত তেল ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত করে দেয়। এজন্য ইঞ্জিনের অনেক ক্ষতি হয়, কালো ধোয়া বের হয়। আরো অনেক সমস্যা। কিন্তু বেসরকারীকরণ করে দিলে তারা প্রতিযোগীতা করে সর্ব নিন্ম দাম রাখতো আবার গুনগত মান উচ্চ করারও প্রতিযোগীতা করতো।
কেউ উল্টা পাল্টা করলে ডাইরেক্ট লাইসেন্স বাতিল। ফলে উল্টা পাল্টা করার সুযোগ নাই। দেখা যেতো সরকার যেখানে ৩০ টাকা লাভ করতেছে, তারা সেখানে প্রতিযোগীতার কারণে ১ টাকা লাভ করতো। কিন্তু এখন সরকারের কোন প্রতিদ্বন্দ্বি নাই, সে মনোপলি করে একচেটিয়া দাম ধরে পচা মাল গছায় দিতেছে, আর আমাদের যা বলতেছে আমরা তাই বিশ্বাস করতেছি। বলতেছে, সে খরচ চালাতে পারতেছে না আরো দাম বৃদ্ধি করতে হবে, খরচ আরো বাড়ছে অমুক তমুক। কথা হইলো চুরি করলে রাজার ধন ভান্ডার দিয়েও কুলানো সম্ভব না। কিন্তু আপনি যখন বেসরকারীকরণ করে দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রতিযোগীতা লাগায় রাখবেন, তখন তারাই কত কম দামে কত উন্নত জিনিস আপনাকে দিতে পারবে, সেটা তারাই ঠিক করে নিবে, আপনাকে শুধু স্বার্থহীনভাবে তাদের ব্যালেন্স করতে হবে, বাকিটা তারাই ব্যবসায়ীক স্বার্থে করে নেবে।
জ্বালানি তেলের মূল্য এভাবে ৩০ টাকা কমায় দিলে, অটোমেটিক যাতায়াত ভাড়া কমে যাবে। পন্য পরিবহন খরচ কমে যাবে, ফলে খাদ্য দ্রব্যের দাম কমে যাবে। কমে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ। সরকার সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর জন্য তোরজোর করতেছে। এর কোন দরকার নাই। সরকার যদি শুধু নিজে দায়িত্ব ছেড়ে বিদ্যুৎতের দায়িত্ব বেসরকারীকরণ করে দেয়, বলে দিক- যে ইচ্ছা সে বাইরে থেকে ফার্নেস ওয়েল আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে, তবে দেখবেন একধাপে বিদ্যুতের দাম অর্ধেক হয়ে যাবে। সবাইকে (বাসবাড়ি, শিল্প-কলকারখানা) ৬ টাকা ইউনিটে বিদ্যুৎ দেয়া যাবে। এতো গেলো বিদেশী তেল আমদানি করে বিদ্যুৎ বানালে খরচ। আর যদি দেশী গ্যাস পায় তবে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২.২০ টাকা এবং কাপ্তাই জলবিদ্যুতে ১২ পয়সা খরচ হয়। কথা হইলো সরকার যদি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ১২ টাকা নিয়েও বলে লস হচ্ছে, আরো দাম বাড়াতে হতে, তবে সরকারের এ দায়িত্ব রাখার দরকারটা কি ? বিদেশ থেকে আমদানি করা তেল (ট্যাক্সমুক্ত করে দিতে হবে) দিয়ে যদি আমি নিজেই ঘরে বসে বিদ্যুৎ বানাই তবে বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ইউনিট। তাহলে কেন ইচ্ছা করে আমি বিদ্যুদের দাম দ্বিগুন করতে যাবো?
সরকার বিদ্যুতের দায়িত্ব ছেড়ে দিক বেসরকারীখাতে, এবং তাদের সাপ্লাই-ডিমান্ড নিরপেক্ষ ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করুক।
দেখবেন- কত কম দামে বিদ্যুৎ তৈরী করা যায় এবং জনগণকে কত দামে সেটা দেয়া যায় সেটা ব্যবসায়ীরাই খুজে নিবে। আর সেটার গুনগত মানও বাড়বে। বিদ্যুতের দাম কম হলে- বাসাবাড়ির খরচ কমবে, কলকারখানায় উৎপাদন খরচ কমবে, ফলে জিনিসপত্রের দাম কমবে। দেশী পণ্যের উৎপাদন খরচ কম হলে আমরা বিদেশী মার্কেট সহজে ধরতে পারবো। এখন বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, আমাদের পণ্য বিদেশী মার্কেট হারায়। একইভাবে বেড়ে যায় কৃষকের সার উৎপাদন খরচ। অর্ধেক দামে সার পেলে কৃষক আরো কম দামে ফসল ফলাতে পারবে, খাবারের দাম কমবে।
সরকার বাসা বাড়িতে গ্যাসের লাইন দিতে চায় না। বলে গ্যাস নাই।
যদি কাউকে দেয়ও মিটারে খরচ নেয় ইউনিট প্রতি ৯ টাকা ১০ পয়সার মত।
দরকার নাই আমার দেশী গ্যাস। আমি বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করলেও তার খরচ হবে ৭ টাকা ২০ পয়সার মত।
বেসরকারী খাতে গ্যাস ব্যবসার সুযোগ করে, তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে ভালো মত প্রতিযোগীতা করতে দিলে এবং নিরপেক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশী ব্যবসায়ীরাই ৭ টাকা ৩০ পয়সা দিয়ে গ্যাস দিতে পারবে। এ্ দাম দিয়ে বাসাবাড়ি, গ্যাস স্টেশন, কলকারাখানা সব যায়গায় একই কমদামে গ্যাস দেয়া যাবে, কোন সমস্যা নাই। ফলে জনগণের খরচ কমার সাথে সাথে যাতায়াত খরচ ও কলকারখানার উৎপাদন খরচ কমে পণ্য-দ্রব্যের দাম কমে যাবে। পণ্যের দাম কমলে দেশের মানুষ কম দামে জিনিস পাবে, মূল্য কম হওয়ায় বিদেশী মার্কেট ধরা সহজ হবে। হ্যা বাংলাদেশের প্রচুর গ্যাস সম্পদ আছে, এটা ঠিক। সেটা উত্তোলন করলেতো মানুষকে নামমাত্র মূল্যে খাওয়ানো যাবে। কিন্তু সেটা না হলেও বিদেশী গ্যাস আমদানি করেও জনগণের খরচ অর্ধেক নামায় দেয়া সম্ভব, অন্তত হিসেব তাই বলে।
মূল সমস্যা হইলো সরকার তেল, বিদ্যুৎ আর গ্যাসের দাম নিজের কাছে ধরে রাখছে, অন্য কারো কাছে ছাড়ে না।
সরকার নিজেই এখন সিন্ডিকেট, সরকার নিজেই মনোপলি বিজনেসম্যান, তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নাই।
সে যা বলে আমাদের তাই চোখ বন্ধ করে সেটাই বিশ্বাস করতে হয়। যে ৩ গুন দাম নিয়েও যদি বলে আরো দাম বাড়াইতে হবে, নয়ত লাভ হয় না। তখন আমাদের সেটাই বিশ্বাস করতে হয়। এদিকে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের কারণে যে সব কিছুর দাম বেড়ে জনগণের জীবন শুকায় কাঠ হয়ে যাচ্ছে, ব্যবসা-বানিজ্যের পতন হয়ে অর্থনীতিতে ধস নামছে সেটা দেখার তার টাইম নাই।
এখন কথা হইলে তেল গ্যাস বিদ্যুতের দায়িত্ব যদি সরকার নাই পালন করতে পারে,
তবে সেটা ছেড়ে দিক। তাকে কিছু করতে হবে না। বেসরকারী খাতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিক, সেটাতে শক্ত নজরদারি করুক, নিরপেক্ষভাবে সাপ্লাই-ডিমান্ড ঠিক রেখে সবচেয়ে কমমূল্যে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস বের করুক। এছাড়া আমি জনগণের পরিত্রাণ পাওয়ার আর কোন উপায় দেখছি না।