অনেকে বলছে, আচ্ছা আবরার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে সরকার, পুলিশ, বুয়েট কর্তৃপক্ষ কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে, যা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।এন.সি- ১২৪

অনেকে বলছে, আচ্ছা আবরার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে সরকার, পুলিশ, বুয়েট কর্তৃপক্ষ কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে, যা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।


October 10, 2019
Related image
অনেকে বলছে, আচ্ছা আবরার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে সরকার, পুলিশ, বুয়েট কর্তৃপক্ষ কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে, যা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যেমন-
১) আবরারের হত্যার পর ভিসি, প্রভোস্ট ও ছাত্র কল্যান স্যারের অস্বাভাবিক আচরণ,
২) ইসকনের ক্ষত্রিয় রাজা কৃষ্ণ পদ রায়ের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে তালবাহানা করা,
৩) মামলায় প্রথমে অমিত সাহার নাম অন্তর্ভূক্ত না করা, পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়ার পরও তাকে গ্রেফতার করতে তালবাহানা করা (অবশেষে প্রতিবাদের মুখে গ্রেফতার)।
৪) ঘটনার পরদিন পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (সম্ভবত, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশানার, নামের সাথে বাতেন আছে) ঐ রুমে তিন জন থাকতো বলে মিডিয়ার কাছে বলা, মিডিয়ার কাছে ঐ রুমে অমিত সাহা থাকতো তা এড়িয়ে যাওয়া।
৫) আববারের পরিববার ও আত্মীয়দের সাথে পুলিশের রূঢ় আচরণ করা,
৬) বুয়েটে ছাত্র নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে ওয়েবসাইটে উঠে আসা তথ্য আইএসপি থেকে ব্লক করা।
৭) আবরারের যে সব বন্ধু ঘটনার গোমর ফাঁস করছিলো, তাদের হেনস্তা করা।
এই যে অস্বাভাবিক আচরণ, তা শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমি বলেছিলাম, এ ধরনের অস্বাভাবিক আচরণের মূল কারণ হতে পারে ভারতীয় দূতাবাস থেকে ফোন করা হয়েছে।
অনেকে বলেছে, ভাই আপনি কিভাবে বুঝলেন, ভারতীয় দূতাবাস থেকে ফোন করা হয়েছে, আপনার কাছে দলিল আছে ?
আসলে ভাই, সব ঘটনার সব সময় দলিল পাওয়া যায় না।
আমি একজন এ্যানালিস্ট।
আমি বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে এ্যানালাইসিস করে গ্রাফ তৈরী করি।
সেই গ্রাফের পূর্ববর্তী বিন্দুর থেকে টেনে আনা দাগ থেকে বলি কি ঘটছে বা কি ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে আমি ২টি ঘটনার উদহরণ টানছি, একটু খেয়াল করুন-
১) ২০১৬ সালের শেষ দিকে বি-বাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননা করে। এটা নিয়ে হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরী হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কোন দ্বন্দ্বে একটি মন্দিরে কিছু ভাংচুর হয়। এই ঘটনার পর সরকার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। সরকার পুলিশ দিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। ৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে বাড়ি বাড়ি হামলা করেছিলো, ঠিক সেখাবে মুসলমানদের বাড়িঘরগুলো রাতের আধারে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে মুসলমানদের ধরে নিয়ে যায়। মামলা দেয়া হয় আড়াই হাজার মুসলমানের নামে। প্রায় হাজার হাজার মুসলমান বাড়িঘর ছেড়ে ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয় পুলিশি নির্যাতন থেকে বাচতে। (https://bit.ly/2MFW9Xt)
সেই সময় সরকার হঠাৎ করে কেন মুসলমানদের উপর দমন নিপীড়ন শুরু করলো সেটা আমার মাথায় আসছিলো না, পুরো বিষয়টি অস্বাভাবিক ঠেকছিলো। সে সময় ভারতীয় মিডিয়ায় একটা খবর পেয়ে আমি নিশ্চিত হই হঠাৎ সরকারের এ ধরনের মুসলিম বিরোধী হঠাৎ দমন নিপীড়ন করার কারণটা কি। খবরে প্রকাশ- “ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করে, 'ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে বলেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানাতে।” (https://bit.ly/2nzAGa3)
অর্থাৎ হঠাৎ মুসলিম নিপীড়নের গোপন রহস্য সুষমা স্বরাজের টুইট।
২) ২০১৭ সালের ঘটনা। রংপুরে টিটু রায় নামক এক হিন্দু ইসলাম ধর্মের অবমাননা করে। এই ঘটনায় মুসলমানদের ক্ষোভ তৈরী হয়। ক্ষোভ তৈরী হওয়ার কারণ আছে, কারণ বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পরও সরকার টিটু রায়কে গ্রেফতার করছিলো না। এক পর্যায়ে মুসলমানরা এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি ছুড়ে। এতে সরকারী হিসেবে ১ জন এবং এলাকাবাসীর হিসেবে ৬ জন মুসলমান মারা যায়। আহত হয় প্রায় ১০০। (https://youtu.be/aJ_9tgWX5Gg)
কিন্তু যখন মুসলিম-পুলিশ সংঘর্ষ চলছিলো, ঠিক ঐ সময় কয়েক কিলোমিটার দূরে কিছু হিন্দুবাড়িতে কে বা করা আগুন দেয়। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধ শত মুসলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা দেো সহস্রাধিকের নামে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয় ২০ গ্রামের মুসলিম পুরুষ (https://bit.ly/33mXjgT)।
কিন্তু কয়েকদিন পরে হঠাৎ একটি ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুসলমানদের আসার আগেই হিন্দুরা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দেয় (https://youtu.be/r_vG8uazMK4)।
কিন্তু তারপরও সরকার, পুলিশ, প্রশাসন, ও রাজনীতিবিদরা তোয়াজ করতে থাকে হিন্দুদের। তাদের নতুন বাড়ি বানিয়ে দেয়, তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়। (https://bit.ly/2IBD5bi)
এই ঘটনার সময়ও আমার মনে হয়েছে সরকারের আচরণ অস্বাভাবিক, তারা যেন কিছুই শুনতে চাইছে না। আমি এর কারণ অনুসন্ধান করতে থাকলাম। কিছুদিন ঠিকই খবর প্রকাশিত হলো। খবরে প্রকাশ-
“ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট বার্তায় বলেছে, বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ ঢাকায় তাদের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে জানিয়েছেন, নাসিরনগর হামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বাড়িঘর পুননির্মাণে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তিনি জানান, হিন্দুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছ থেকে তারা বিস্তারিত প্রতিবেদন পেয়েছেন।” (https://bbc.in/3246SRL)
একই বিষয়ে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় সংসদে দাড়িয়ে সুষমা স্বরাজ বলে-
“‘বাংলাদেশ সরকার এটা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বা হামলার ঘটনায় সেদেশের সরকার কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে’।...... বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ‘৬৭ জন মানুষকে ওই ঘটনায় আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিচারপর্ব শুরু হয়েছে এবং অপরাধীরা প্রত্যেকেই কারাগারে রয়েছে। সেভাবেই রংপুরেও একটি ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। (https://bit.ly/30XkHQE)
আসলে ভারতীয় দূতাবাসের ফোন পেলে বাংলাদেশ সরকার যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক আচরণ করে ও বিজেপি সরকারের মতই মুষলমানদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায় এটা অনেকবারই দেখা যায়। হয়ত বিষয়টি বি-বাড়িয়ার নাসিরনগর বা রংপুরের অজপাড়াগ্রামে ঘটেছে দেখে অনেকে এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু এখন যখন দেশের কেন্দ্র বুয়েটে করছে, তখন বিষয়টি সবার নজরে পড়েছে। তবে আমার অভিজ্ঞতা হলো- ভারতীয় দূতাবাসের বিশেষ ফোন পেলেই এ ধরনের অস্বাভাবিক আচরন করতে দেখা যায় সরকারকে। আর আববারের ঘটনাতো আরো বেশি ভারত সংশ্লিষ্ট, কারণ আবরারকে যে কারণে হত্যা করা হয়েছে, সেটা ছিলো ভারতের সাথে চূক্তির বিষয়ে। আর যে অমিত সাহাকে নিয়ে এত গণ্ডগোল সে ইসকন সদস্য এবং তার বাবা-মা এখন ভারতের আছে (মিডিয়ায় ছাত্রলীগের এক নেতার দেয়া তথ্য)। তাই ভারতীয় দূতাবাসের ফোনের কারণে সরকার-প্রশাসন অস্বাভাবিক আচরণ করছে, এটা চিন্তা করা মোটেই অযৌক্তিক হওয়ার কথা নয়।