কেন ‘চলমান উন্নয়ন’ জনগণের প্রকৃত উন্নয়নের পথে বাধা। এন.সি-৬৯

কেন ‘চলমান উন্নয়ন’ জনগণের প্রকৃত উন্নয়নের পথে বাধা
Related imageঅনেকে বলে, দাদা আপনি মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেন, আপনি তো উন্নয়ন বিরোধী।
আমি তাদের উত্তরে বলতে চাই- হ্যা চলমান উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে, আমি তার বিরোধী, কিন্তু জনগণের প্রকৃত উন্নয়নের বিরোধী নই, বরং জনগনের প্রকৃত উন্নয়নটাই আসলে আমি চাই। আমার কথা হলো- বর্তমানে উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে, তাই আসলে জনগনের প্রকৃত উন্নয়নের পথে বাধা। একটু আলোচনা করলে বুঝতে পারবেন।
প্রথম কথা হলো- জনগণের উন্নয়ন বলতে আমরা কি বুঝি ?
যদি বলেন- জনগণের উন্নয়ন বলতে বুঝি- ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল-সেতু-রাস্তা।
তবে আমি আপনার সাথে আমি কথা বাড়াতে চাই না।
আমার মতে- আপামর জনগণ এখন যে সমস্যা ফেস করছে, তার সমস্যা সমাধানই হলো জনগণের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন।
এখন কথা হলো- জনগণ কি সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছে ?
আপনি যদি দেশের আপামর জনগণের সাথে কথা বলেন এবং সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করেন, তবে আমি নিশ্চিত অঞ্চলভেদে জনগণের মূল দুইটা সমস্যা খুজে পাবেন-
১) রাজধানী বা শহরাঞ্চলে জনগণের মূল সমস্যা উচ্চ জীবনযাত্রা ব্যয়।
২) গ্রাম অঞ্চলে জনগণের মূল সমস্যা অর্থনৈতিক স্থবিরতা, লেনদেনের অভাব, কাজের অভাব।
রাজধানীতে জনগনের মূল সমস্যা উচ্চ জীবনযাত্রা ব্যয়। আর এই উচ্চ জীবনযাত্রা ব্যয়ের মূলে রয়েছে বাড়িভাড়া। এক হিসেবে দেখা গেছে একজনের মূল ইনকামের ৬০% চলে যাচ্ছে বাড়িভাড়ায়। এখন যদি রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হতো, তবে জনসংখ্যার চাপ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে বাড়িভাড়াও হ্রাস পেতো। দেখা যেতো তখন বাড়িভাড়া ৬০% থেকে ১৫% এ নামিয়ে আনা সম্ভব, ফলে ৪৫% পর্যন্ত সেভ করা সম্ভব, যা দ্বারা ঐ ব্যক্তি ও তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থান অনেকাংশে উন্নতি হতো।
আবার অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে, গ্রাম বা মফস্বলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেতো, এতে লেনদেন বাড়তো, মানুষ কাজ পেতো, কাটতো অর্থনৈতিক স্থবিরতা। এর ফলে গ্রাম বা মফস্বল অঞ্চলে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হতো।
তারমানে বোঝা যাচ্ছে, এক রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ দিয়ে শহর ও গ্রাম উভয় অংশের জনগণের প্রকৃত উন্নয়ন করা সম্ভব।
এখন কথা হচ্ছে, ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল কেন জনগণের প্রকৃত উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে ?
এই কথাটা বুঝতে হলে, আপনাকে, হানিফ ফ্লাইওভারের ঢাকা মেডিকেল অংশের দিকে যেতে হবে। সেখানে গেলে দেখবেন, দুই দিকে রাস্তা সরু করে ইচ্ছা করে এমন রাস্তা করা হয়েছে, যেন ইচ্ছা-অনিচ্ছায় গাড়িগুলো ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য হয়, কারণ ফ্লাইওভারে উঠলেই ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষকে টোল দিতে হবে। একইকারণে অধিকাংশ সময় ফ্লাইওভারের ওঠার দুইপাশের রাস্তাও মেরামত করা হয় না, ভাঙ্গা থাকে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আসছে-
অতি সম্প্রতি যে ফ্লা্ইওভার, এলিভেটেড এক্ষপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এগুলোতে কিন্তু টোল লাগবে। আবার মেট্রোরেলেও ভাড়া দিতে হবে। এখন কথা হলো, যারা এসব নির্মাণ করছে, তারা তো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এগুলো বানাচ্ছে, তাদের তো এই টাকাগুলো পাবলিক থেকে উঠাতে হবে।
আর পাবলিক যখন এগুলোতে উঠবে, তখন টাকা দিবে, এর আগে তো দিবে না। এখন যারা ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল নির্মাণ করলো, তারা সব সময় চাইবে ঢাকা শহরে যেন অনেক জনবহুল থাকে, তাহলে তাদের কাস্টমার থাককে। কিন্তু বিকেন্দ্রীকরণ করে জনগণ কমে গেলে তো তাদের কাস্টমার থাকবে না। ফলে এত টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল বানালে তার খরচ উঠবে না। ফলে তারাই (হানিফ ফ্লাইওভার ভারতীয় কোম্পানি, মেট্রোরেল জাপানি কোম্পানি) সরকারকে বাধা দিবে বিকেন্দ্রীকরণ না করতে, তারা চাইবে তাদের কাস্টমার জনগণ যেন ভরপুর থাকে। না হলে তাদের খরচ উঠবে কিভাবে ?
আর তাদের এ বাধার কারণে ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণও হবে না,
আর এতে ঢাকায় বসবাস করা জনগনের বাসাভাড়া ৪৫% কমবে না, অপরদিকে ঢাকার বাইরের জনগণের অর্থনৈতিক স্থবিরতাও দূর হবে না। ফলে জনগণের প্রকৃত উন্নয়নও কখন হবে না।
এ কারণেই আমি বলি- চলমান উন্নয়ন হলো জনগণের প্রকৃত উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা।