আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিবেচনায়, শেখ হাসিনার এখন কি করা উচিত ? এন.সি- ১১৯

আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিবেচনায়, শেখ হাসিনার এখন কি করা উচিত ?


আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিবেচনায়, শেখ হাসিনার এখন কি করা উচিত ?
এবার আবরার হত্যার পর বাংলাদেশে ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের অবস্থান পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয়।
তারা রিপাবলিকান ব্লকের মোদি বা উগ্রহিন্দুত্ববাদের উত্থ্যানের বিপক্ষে এখন থেকে প্রকাশ্যেই কাজ করবেন বলে মনে হচ্ছে।
এ কারণে এবারই (আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে) প্রথম ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের মিডিয়া বাংলাদেশে উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিপক্ষে বেশ সক্রিয় বোঝা যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে তারা ইসলামিস্টদের পাশে নিতেও দ্বিধা করছে না।
এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যদি রিপাবলিকান ব্লকের মোদি বা উগ্রহিন্দুত্ববাদ অংশের পক্ষে কিছু করেন,
তবে তার বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক ব্লক, চীনপন্থী এবং ইসলামিস্টরা এক হয়ে যাবে,
যা শেখ হাসিনার সামলানো খুব কঠিন হবে বলে মনে হয়।
শেখ হাসিনা এতদিন হিন্দুদের পক্ষে কাজ করেছেন, সেটা ধরে নিতে পারি ‘সংখ্যালঘু’ টার্মটার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু ‘সংখ্যালঘু’ সাবজেক্টটা আসলে ডেমোক্র্যাটদের বিষয়, অপরপক্ষে উগ্রহিন্দুত্ববাদটা রিপাবলিকানদের বিষয়। তাই উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে যদি শেখ হাসিনা কিছু করেন, তবে ডেমোক্র্যাট মিডিয়া সংখ্যালঘু ইস্যুতে শেখ হাসিনাকে ধরবে বলে মনে হয় না। অর্থাৎ এতদিন মিডিয়ার কাছ থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে যে ভয়টা শেখ হাসিনা পাচ্ছিলেন, সেটা আশা করি আর তিনি পাবেন না।
শেখ হাসিনা সরকার রিপাবলিকান তথা উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের অনেক কিছুর পক্ষেই কাজ করেছেন।
এর মধ্যে প্রশাসনে হিন্দু নিয়োগ, বাংলাদেশের প্রত্যেক এলাকায় রাধা কৃষ্ণ (আসলে ইসকন) মন্দিরের জন্য যায়গা বরাদ্দ দেয়া, হিন্দুদের রাষ্ট্রবিরোধী কর্ম দেখেও না দেখার ভান করা এবং বিশেষ করে রিপাবলিকান ব্লকের মোদি সরকারের অনেক অনৈতিক চাওয়া পাওয়া পূরণ করা।
অবশ্য এর মানে এটাই বোঝা যাচ্ছে না,
শেখ হাসিনা কি রিপাবলিকান ব্লকের সদস্য হয়েছেন কি না ?
কারণ খোদ বঙ্গবন্ধুকেও রিপাবলিকান ব্লকের সদস্যরা হত্যা করেছিলো।
শেখ হাসিনার বর্তমান নীতি থেকে দেখা যায়-
সে ‍নিজের দলের মধ্যে ঢুকে থাকা রিপাবলিকান উত্থ্যান বা সম্ভব্য রাজনৈতিক ক্যু ঠেকিয়েছেন যুবলীগের ফ্রিডম পার্টি ও তাদের সহযোগীদের ক্যাসিনো দমনের মাধ্যম দিয়ে।
অথচ পাশের দেশের রিপাবলিকান তথা মোদি সরকার ও এদেশে তাদের হিন্দু প্রতিনিধিদের সব কিছু দেয়ার মাধ্যম দিয়ে।
অর্থাৎ
নিজের ভেতরে রিপাবলিকানদের দমন করেছেন,
আর বাইরের রিপাবলিকানদের সন্তুষ্ট করেছেন।
কিন্তু সমস্যা হলো- তিনি যদি রিপাবলিকানদের পক্ষে আর কিছু করেন,
তবে দেশের ডেমোক্র্যাটিক ব্লক, চীনপন্থী এবং ইসলামিস্টরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক হয়ে যেতে থাকবে,
যা শেখ হাসিনার পক্ষে ঠেকানো কষ্ট হবে এবং এক্ষেত্রে তিনি যদি শক্তি প্রয়োগ করেন তাতে বরং বোকামি করবেন, তখন ১ আঘাতে সেই জোট আরো ১০ গুন বেশি শক্তিশালী হবে নিশ্চিত।
এখন সমস্যা হলো- শেখ হাসিনা সরকার গত ১০ বছরে যে পরিমান রিপাবলিকান ব্লকের উগ্র হিন্দু নিজের মধ্যে ঢুকিয়েছে, তাতে আওয়ামী সরকার, প্রশাসন ও সরকারী চাকুরীজীবীদের মধ্যে ঢুকে থাকা উগ্রহিন্দু বা রিপাবলিকান সদস্যরাও যে কোন ঘটনা ঘটিয়ে ডেমোক্র্যাটিক ব্লক, চীনপন্থী এবং ইসলামিস্টদের হাতে খাবার তুলে দিতে পারে। যেটা আবরার হত্যার ঘটনায় বেশ স্পষ্ট।
এ অবস্থায় শেখ হাসিনা তাহলে কি করবেন ?
১) যুবলীগের রিপাবলিকানদের যেভাবে দমন করা হচ্ছে, ঠিক একইভাবে দেশের হিন্দু রিপাবলিকানদেরও ছাটাই করতে হবে।
২) সরকার টেরোরিজম বা সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বলে নিজেকে প্রকাশ করে। সেটা যে কোন ধর্মীয় টেরোরিজম হতে পারে। এক্ষেত্রে রিপাবলিকানপন্থী উগ্র হিন্দুরা যদি রাষ্ট্রদ্রোহী কিছু করে তবে কাউন্টার টেরোরিজমের মাধ্যমে তাদেরকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
৩) ভারতীয় অযাচিত চূক্তির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা মোদির তিস্তা পলিসিকেই নিতে পারে। শেখ হাসিনার সাথে মোদির এত গলায় গলায় সম্পর্ক, কিন্তু তিস্তার ক্ষেত্র আসলে মোদি দেখায় মমতাকে, আর মমতা দেখায় তার জনগণের আন্দোলন। মোদি যদি শেখ হাসিনা দিয়ে কোন দেশের স্বার্থবিরোধী চূক্তি করাতেই চায়, তখন জনগণের প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের দেখিয়েই সেই চূক্তি আপাতত থামিয়ে রাখতে পারবেন শেখ হাসিনা।