গতকাল আন্তঃজেলা সড়ক ৪ লেন হচ্ছে, এই বিষয়টিকে কর্পোরেটোক্রেসি এবং জনবিরুদ্ধ বলায় কেউ কেউ অবজেকশন দিয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- দুর্ঘটনা হ্রাস এবং স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য ৪ লেনের সড়কের দরকার আছে।
যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের কথা আসলে ফেলে দেবার মত নয়।
সত্যিই আমার-আপনার জন্য এই ৪ লেনের সড়ক দরকার আছে।
কিন্তু কথা হচ্ছে- এই যে উন্নত সড়ক ব্যবস্থা হচ্ছে, এটা কি সত্যিই আমার-আপনার জন্য হচ্ছে ?
নাকি আমার-আপনার পকেটের টাকা দিয়ে অন্য কারো জন্য তৈরী হচ্ছে এই অত্যাধুনিক সড়ক ??
সত্যিই আমার-আপনার জন্য এই ৪ লেনের সড়ক দরকার আছে।
কিন্তু কথা হচ্ছে- এই যে উন্নত সড়ক ব্যবস্থা হচ্ছে, এটা কি সত্যিই আমার-আপনার জন্য হচ্ছে ?
নাকি আমার-আপনার পকেটের টাকা দিয়ে অন্য কারো জন্য তৈরী হচ্ছে এই অত্যাধুনিক সড়ক ??
(১) ঢাকা - মাওয়া - ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে নামক যে অত্যাধুনিক ৪ লেন সড়ক হচ্ছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক বলে ইতিমধ্যে পরিচিত পেয়েছে। এই সড়কের নির্মাণ ব্যয় ইতিমধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। এই অত্যাধুনিক সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক “এশিয়ান হাইওয়ের করিডর-১” এর অংশ হিসেবে। (https://bit.ly/33rmaQz)
(২) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেন করছে, তাতে প্রাথমিক ব্যয় ১৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যদিও নির্মাণ শেষ হতে আরো অনেক বাড়বে। এই সড়কটি মূলত আন্তর্জাতিক এশিয়ান হাইওয়ে ১ ও ২-এর রুটভুক্ত। আবার বিমসটেক রোড করিডোর ৩ ও সাসেক হাইওয়ে করিডোর ৫-এর রুটভুক্তও এ মহাসড়ক। (https://bit.ly/2OTi2Du)
(৩) উত্তরাঞ্চলে যে ৪ লেন (অনেকে ৬ লেন বলে) সড়ক হচ্ছে তার প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা, যা প্রকল্প শেষ হতে আরো অনেক বাড়বে। এই প্রকল্পটি মূলত এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ে করিডর, সাসেক করিডর, এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে উপ আঞ্চলিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে তৈরী হচ্ছে।
(https://bit.ly/37KLQuy)
(https://bit.ly/37KLQuy)
(৪) কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। এই টানেল হচ্ছে মূলত সিবিআই ও বিসিআিইসি করিডর, সেভেন সিস্টারস করিডর এবং ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান করিডর’কে সাপোর্ট দিতেই। (https://bit.ly/2Dl3dEi)
অর্থাৎ এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, এগুলো কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা হচ্ছে না, তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত, চীন, ভুটান, মায়ানমার, নেপালের ব্যবসায়ীরা যে ব্যবসা করবে, তাদের গাড়িগুলো যেন দ্রুত গতিতে এবং নির্ভিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সে সুবিধার্থে।
এখন কথা আসতে পারে,
যদি তাদের জন্য নির্মাণ হয়ও, তবে সমস্যা কি ?
আমরাও তো সেটা ব্যবহার করতে পারবো।
যদি তাদের জন্য নির্মাণ হয়ও, তবে সমস্যা কি ?
আমরাও তো সেটা ব্যবহার করতে পারবো।
সমস্যা আছে।
সমস্যা হলো- এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এগুলোর খরচ তো আকাশ থেকে নামবে না কিংবা সরকার তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়েও আসবে না, জনগণের পকেট থেকেই আসবে। আবার কোন বিদেশী যদি ঋণও দেয়, তবুও সেটা জনগণের পকেট থেকেই সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে।
সমস্যা হলো- এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এগুলোর খরচ তো আকাশ থেকে নামবে না কিংবা সরকার তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়েও আসবে না, জনগণের পকেট থেকেই আসবে। আবার কোন বিদেশী যদি ঋণও দেয়, তবুও সেটা জনগণের পকেট থেকেই সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে।
এখন কথা হইলো- এই যে জনগণ তার তেল, নুন, চাল, ডাল, পেয়াজ, আটার মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫, ১০ বা ১৫ বছর যাবত এই অত্যাধুনিক রাস্তাগুলোর ব্যয় নির্বাহ করবে, এরপর কি তাদের আর সেই রাস্তায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ থাকবে ? নাকি ঐ অত্যাধুনিক রাস্তার ধারে দাড়িয়ে ভিক্ষা করার সামর্থ হবে, এটা বুঝতে হবে।
হ্যা আমরা আমাদের রাস্তাঘাট উন্নত করবো না কেন, অবশ্যই করবো।
কিন্তু কোনটার প্রয়োজন আগে সেটা আগে বুঝতে হবে।
এখন কোনটা বেশি প্রয়োজন,
জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে দেশী উৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে স্ট্যাবলিশ করা?
নাকি বিদেশীরা আসবে বলে তাদের জন্য দেশ সাজাতে গিয়ে জনগণের খরচ বাড়িয়ে কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ তৈরী করা ??
কিন্তু কোনটার প্রয়োজন আগে সেটা আগে বুঝতে হবে।
এখন কোনটা বেশি প্রয়োজন,
জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে দেশী উৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে স্ট্যাবলিশ করা?
নাকি বিদেশীরা আসবে বলে তাদের জন্য দেশ সাজাতে গিয়ে জনগণের খরচ বাড়িয়ে কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ তৈরী করা ??
আসলে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসিটি হলো সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা ব্যবসায়ীদের কৈ এর তেলে কৈ ভাজা পলিসি।
অর্থাৎ জনগনের টাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সেই জনগণের উপর ব্যবসা করা। আবার সেই রাস্তা নির্মাণ খরচ জোগাতে জনগণ দরিদ্র হয়ে গেলে তাদের সস্তায় শ্রমিক রূপে ব্যবহার করা, এটাই তাদের কূটচক্র। অথচ জনগণ সেটা বুঝবে না, একবার বুঝবে উন্নয়ন, আরেকবার বুঝবে বিদেশী ইনভেস্ট, আরেকবার বুঝবে বেকারদের চাকুরী, এর বাইরে বুঝার ক্ষমতা জনগণের নেই।
অর্থাৎ জনগনের টাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সেই জনগণের উপর ব্যবসা করা। আবার সেই রাস্তা নির্মাণ খরচ জোগাতে জনগণ দরিদ্র হয়ে গেলে তাদের সস্তায় শ্রমিক রূপে ব্যবহার করা, এটাই তাদের কূটচক্র। অথচ জনগণ সেটা বুঝবে না, একবার বুঝবে উন্নয়ন, আরেকবার বুঝবে বিদেশী ইনভেস্ট, আরেকবার বুঝবে বেকারদের চাকুরী, এর বাইরে বুঝার ক্ষমতা জনগণের নেই।
তবে এখানে একটা আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে-
এই যে জনগণের সাথে এত বড় একটা ধোকাবাজি হচ্ছে, এটা কেন কেউ ফাঁস করছে না ?
আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন- আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা কিন্তু এইসব প্রকল্প করতে সরকার যে দুর্নীতি করছে তার বিরোধীতা করে, কিন্তু মূল যে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসি তার বিরোধীতা করে না, তারা ।
এর কারণ- এই পলিসির উপরে রয়েছে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক। যারা দুর্নীতিবাজ সরকারের উপর ভর করে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা শুধু চায় সরকারের বিরোধীতা করে রাজনীতি করতে, বিপরীতপক্ষকে দলে ভিড়াতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের কার্যক্রমের বিরোধীতা করতে তারা মোটেও চায় না। হয়ত ভাবে সেটা করলে ভবিষ্যতে হয়ত তারা আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যার কারণে কর্পোরেটোক্রেসি নামক মূল ঘটনাটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যায়, জনগণ আর তা বুঝতে পারে না।
এই যে জনগণের সাথে এত বড় একটা ধোকাবাজি হচ্ছে, এটা কেন কেউ ফাঁস করছে না ?
আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন- আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা কিন্তু এইসব প্রকল্প করতে সরকার যে দুর্নীতি করছে তার বিরোধীতা করে, কিন্তু মূল যে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসি তার বিরোধীতা করে না, তারা ।
এর কারণ- এই পলিসির উপরে রয়েছে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক। যারা দুর্নীতিবাজ সরকারের উপর ভর করে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা শুধু চায় সরকারের বিরোধীতা করে রাজনীতি করতে, বিপরীতপক্ষকে দলে ভিড়াতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের কার্যক্রমের বিরোধীতা করতে তারা মোটেও চায় না। হয়ত ভাবে সেটা করলে ভবিষ্যতে হয়ত তারা আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যার কারণে কর্পোরেটোক্রেসি নামক মূল ঘটনাটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যায়, জনগণ আর তা বুঝতে পারে না।
ছবি: ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ ঢাকা - মাওয়া - ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে।