পেয়াজ সঙ্কট নাকি টাকা পাচারের ধান্ধা ! এন.সি- ১৪৪

পেয়াজ সঙ্কট নাকি টাকা পাচারের ধান্ধা !

পেয়াজ সঙ্কট নাকি টাকা পাচারের ধান্ধা !
Related imageআমরা শুনি, প্রতি বছর অনেক দুর্নীতি হয়,
এটাও শুনি, প্রতি বছর দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা পাচার হয়ে যায়।
কিন্তু কি উপায়ে সেই টাকাটা পাচার হয়, সেটা জানি না।
বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের একটি অন্যতম উপলক্ষ হলো- আমদানি ও রফতানি।
আমদানির সময় ১০০ টাকার মাল, বাংলাদেশে প্রবেশের সময় দাম দেখানো হলো ১১০০ টাকা,
পাচার হয়ে গেলো ১০০০ টাকা।
আবার রফতানির সময় ১১০০ টাকার মাল, দাম দেখানো হলো ১০০ টাকা,
পাচার হয়ে গেলো ১০০০ টাকা।
তাই কোন পণ্যের হঠাৎ দাম বেড়ে গেলে, অথবা আমদানির কথা শুনলে, বাংলাদেশীদের প্রথম চিন্তা করা উচিত-
বড় কোন টাকার চালান বিদেশে পাচার হচ্ছে কি না ?
গত মে মাসের খবর-
হঠাৎ করে বেড়ে গেলে চালের দাম।
সব দোষ নন্দঘোষ সিন্ডিকেটের। কিন্তু সিন্ডিকেট এমন এক জিনিস যা দেখাও যায় না, ছোয়াও যায় না।
সরকার বললো- মাকের্ট স্ট্যাবল করার জন্য চাল আমদানি করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।
যদিও তখন দেশে পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে।
তারপরও যখন আতপ চাল আমদানি করা হলো, সাথে সাথে দাম নামতে শুরু করলো।
যদিও ঐ সময় কেউ কেউ কিন্তু বলেছিলো- সরকারী লোকজন চাল আমদানির নাম করে বিদেশে টাকা পাচার করতেছে।
সম্প্রতি ক্যাসিনো ক্যান্ডের পর দেখা গেলো- অনেকের বাড়িতেই বস্তায় বস্তায় টাকা থাকে।
দুর্নীতি হচ্ছে, অনৈতিক কাজ হচ্ছে, বস্তায় বস্তায় টাকা জমতেছে, কিন্তু ট্যাক্স না দেয়ায় সেই টাকা ব্যাঙ্কে রাখা যাচ্ছে না।
জমিয়ে রাখতে হচ্ছে ঘরের মধ্যে। ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বণিক দুদক কর্মকর্তার খবর পেয়ে পাশের বাড়ির ছাদে ৮০ লক্ষ টাকার ব্যাগ ছুড়ে মেরেছিলেন, কিন্তু এটা তো সবাই করতে পারবে না। তাছাড়া ক্যাসিনোকাণ্ডের পর যেভাবে পক্ষ-বিপক্ষ সবার দিকে নজর যাচ্ছে,
তাই হঠাৎ ভুলবশতঃ কাছের রাঘব বোয়ালেরও ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
গতকালকে বাংলাদেশের মিডিয়াতে খবর ছিলো – বাংলাদেশের পিয়াজের কেজি হঠাৎ লাফ দিয়ে ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে।
এর জন্য দায়ী করা হচ্ছিলো- ভারতের পিয়াজ আমদানির নিষিদ্ধের খবরকে।
সাথে কিন্তু আরো দুটি খবর ছিলো-
চীন ও মিশর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ৩ লক্ষ কেজি পেয়াজ,
মায়ানমার থেকে টেকনাফ দিয়ে এসেছে সাড়ে ৬ লক্ষ কেজি পিয়াজ।
কিন্তু বৃদ্ধির খবরে এত তেজ ছিলো, রফতানির খবর অনেকে কিছু মনেই করেনি।
সত্যি বলতে, ভারত পিয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিলে ১ দিনে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে যাবে, এটা আমি মেনে নিতে পারি না।
আমার মনে হয়, আমদানির খবর বৈধকরণে এগুলো ইচ্ছা করেই করা হয়েছে।
ভারতে অনেক দিন ধরেই পেয়াজের দাম চড়তেছিলো, আমদানিও কমেছিলো।
তাই হঠাৎ করে আমদানি বন্ধ করে দিলে এভাবে বাজার লাফ দেয়া স্বাভাবিক নয়।
তবে এটা ঠিক, ভারতের পেয়াজ রফতানি বন্ধের খবরটা ছিলো বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য জন্য ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি’র মত।
আমি আপনাদেরকে অ্যানালাইসিস শেখানোর সময় বলেছিলাম-
যে কোন ব্যক্তি/ঘটনার দুটি ফেস থাকে।
একটা রিয়েল ফেস,
অপরটি আর্টিফিসিয়াল ফেস।
আমি বলেছিলাম, এ্যাক্টররা চায় যে কোন ঘটনাকে রিয়েল ফেস থেকে আর্টিফিশিয়াল ফেসের দিকে নিয়ে যেতে।
এতে আঘাতটা আর্টিফিশিয়াল ফেসে আসে, কিন্তু রিয়েল আড়াল থাকায় অ্যাক্টর নির্ভিঘ্নে কাজ করতে পারে।
আমার কাছে ক্ষমতাসীন দুর্নীতিবাজদের সে রকম মনে হয়।
তারা সব সময় আর্টিফিশিয়াল ফেস হিসেবে বিদেশী সংকট প্রচার করে (ভারতীয় পেয়াজ রফতানি বন্ধ)।
কিন্তু তাদের রিয়েল ফেস থাকে দেশের জনগণের থেকে শোষন।
মানে পাবলিক মেতে আছে- ভারত পেয়াজ আমদানি বন্ধ করছে, এই হা-হুতাশ নিয়ে।
মনে হচ্ছে পিয়াজ যেন জীবনেও বাংলাদেশের উৎপাদিত হয়নি আর সেটা অক্সিজেনের থেকেও বেশি প্রয়োজনীয়।
ভারত যদি বন্ধ করে দেয়, তবে সবাই শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবো।
কিন্তু মুখরোচক ভারতীয় গল্পের আড়ালে ঘটানো হচ্ছে কিন্তু অন্য ঘটনা।