সাবধান ! বাংলাদেশের সুপেয় পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে, বাড়বে খরচ। এন.সি-৫৮

Related imageসাবধান ! বাংলাদেশের সুপেয় পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে, বাড়বে খরচ
বছর খানেক যাবত হঠাৎ দেশে খাবার পানির জন্য বিদেশী ইনভেস্ট বেড়ে গেছে-
১) ১৯টি জেলায় খাবার পানিতে ইনভেস্ট করছে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (https://bit.ly/2OSCNPZ)
২) সায়দাবাদ পানি শোধনাগারে অর্থ দিচ্ছে ডেনমার্ক (https://bit.ly/33erXJc)
৩) গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগারে অর্থ দিচ্ছে এডিবি, ফ্রান্সের এএফডি এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (https://bit.ly/33bwhsp)
৪) পানির নেটওয়ার্কে অর্থ দিচ্ছে এডিবি (https://bit.ly/37rzsQ6)
৫) মেঘনা নদী থেকে সুপেয় পানি সরবরাহে অর্থায়ন করবে জার্মানির কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (https://bit.ly/2XIvLRz)
৬) সুপেয় পানিতে ইনভেস্ট করবে জাপান (https://bit.ly/2QNTyhy)
এই যে হঠাৎ করে খাবার পানিতে বিদেশী ইনভেস্ট বেড়ে গেছে এটা কিন্তু একটা ভয়ের কারণ। গত ৭ই মে, ২০১৯ তারিখে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ কিন্তু এ সম্পর্কে বলেছিলো-
“আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। কোকাকোলা এখন কোক বিক্রির বদলে বাংলাদেশে পানি বিক্রির চিন্তা করছে। এসব কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার পরও ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবেই এগুলো করা হচ্ছে।
(https://bit.ly/2OgEyaw)
১৪ই অক্টোবর, ২০১৪ সালে আনু মুহাম্মদ “পানি বাণিজ্যিকীকরণ ও সর্বজনের বিপদ” শিরোনামে এক কলামে বলে,
“ ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকেই উন্নয়নের নামে জগতের বাকি সবকিছু ব্যক্তিমালিকানা, বাণিজ্য আর মুনাফার কর্তৃত্বে আনার উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়। খনিজ সম্পদ, সড়ক, রেলপথ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ শুধু নয়; ক্রমে পানিও এই আগ্রাসনের অধীনে যাচ্ছে। এই কাজে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পানির বাণিজ্যিকীকরণেও অগ্রণী। ঋণের জালের বিশেষ শর্ত হিসেবে পানি ব্যক্তিমালিকানায় বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে রূপান্তরের চাপ দিনে দিনে বেড়েছে। পানি-বাণিজ্যের উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনায় এই খাতে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগও তাই ক্রমবর্ধমান। এখন বিশ্বের তিনটি বৃহৎ পানি বহুজাতিক কোম্পানি হলো সুয়েজ, ভিওলিয়া ভিভেন্দি এবং আরডব্লিউই। কোক-পেপসি এবং যারা খাওয়ার পানি দখল করে পানীয়-বাণিজ্য করছে, তারাও এখন পানি-বাণিজ্যে প্রবেশ করেছে। জার্মান কয়লা কোম্পানি আরডব্লিউই, যাদের মুনাফা বাড়াতে পানিসম্পদ বিনষ্ট হয়, তারাও এখন পানি-বাণিজ্য শুরু করেছে।.......
বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী বলিভিয়া নব্বইয়ের দশকের শেষেই পানি বাণিজ্যিকীকরণ করার নীতি গ্রহণ করে। সেই মোতাবেক মার্কিন কোম্পানি বেখটেল বলিভিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর কোচাবাম্বার সব পানি সরবরাহব্যবস্থার ওপর কর্তৃত্ব লাভ করে। এমনকি বৃষ্টির পানিও তাদের কর্তৃত্বাধীন করা হয়। পানির দাম পরিশোধে ব্যর্থ হলে নাগরিকদের ঘরবাড়ি বাজেয়াপ্ত করারও অধিকার দেওয়া হয় এই মার্কিন কোম্পানিকে। বলিভিয়ার গ্যাস নিয়েও এ রকম চুক্তি করা হয়। রাস্তায় প্রতিরোধ তৈরি করা ছাড়া তখন বলিভিয়ার জনগণের সামনে আর কোনো পথ ছিল না। তারা তা-ই করেছে। ক্রমে পানি ও গ্যাসসম্পদ রক্ষার আন্দোলন বলিভিয়ায় বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর মধ্য দিয়ে পানির ওপর বলিভিয়ার সব নাগরিকের অধিকার, গ্যাসসম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা এখন স্বীকৃত।
তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবই বলছে, ১৯৯০-এর দশকে যত পানি সরবরাহব্যবস্থা ব্যক্তিমালিকানার বাণিজ্যিক তৎপরতার আওতায় আনা হয়েছিল, তার ৮৪ ভাগ ২০০৭ পর্যন্ত টিকে আছে, ২৪টি দেশ পানিব্যবস্থার আবারও রাষ্ট্রীয়করণ করেছে। বিভিন্ন সমীক্ষার সূত্রে দ্য ওয়াটার বিজনেস গ্রন্থ দেখাচ্ছে যে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পানির ওপর সুয়েজ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের পরই পানিদূষণ বৃদ্ধি পায়। কানাডার অন্টারিওতে পানিদূষণে কমপক্ষে সাতজন মৃত্যুবরণ করে, কেননা তাদের প্ল্যান্ট ও টেস্ট-প্রক্রিয়া তারা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি হিসেবে গোপন রেখেছিল। মরক্কোর মানুষ কাসাব্লাঙ্কায় পানির দাম তিন গুণ বৃদ্ধির মধ্যেই বাণিজ্যিকীকরণের মর্ম বুঝতে পেরেছিল। আর্জেন্টিনার পানির কর্তৃত্বও পেয়েছিল সুয়েজ কোম্পানি। ফলে পানির দাম দ্বিগুণ হয়েছিল, কিন্তু এর গুণগত মানের অবনতি হয়েছিল। মানুষের প্রতিবাদে, বিল পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোয় পরে কোম্পানি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। একই কারণে ব্রিটেনেও পানির দাম বেড়ে যায়। পানির বাণিজ্যিকীকরণের প্রতিবাদে নিউজিল্যান্ডের মানুষকেও রাস্তায় নামতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায়ও পানি বাণিজ্যিকীকরণে সুয়েজ কর্তৃত্ব পেয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই পানি এমন বিষাক্ত হয়েছিল যে কলেরা মহামারি আকার নেওয়ায় পানি-সংযোগ অনেক দিন বিচ্ছিন্ন থাকে। ইরাক ধ্বংসযজ্ঞের পর বেখটেল ও এসব কোম্পানির জন্য সোনায় সোহাগা হয়। এখন আর বিশুদ্ধ পানি পান ইরাকের মানুষের জন্য সহজ নয়। জীবন, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা—সবই এখন আগ্রাসী দখলদারদের কবলে। ঘানা ও উরুগুয়েও এই পথে গিয়েছিল, পরে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে জনবিক্ষোভ তৈরি হয়। ২০০৪ সালে গণভোটের মাধ্যমে এ দুই দেশে পানির ব্যক্তি বাণিজ্যিকীকরণ নিষিদ্ধ হয়। নেদারল্যান্ডসও একই বছর সর্বজনের পানি সরবরাহ ব্যক্তীকরণ নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। (https://bit.ly/2rh4gT7)
কথা অনেক লম্বা, সংক্ষেপে বললে-
সরকার দেশের সুপেয় পানি দেখিয়ে বিদেশীদের টাকা আনছে,
আর তাতেই ফাঁদে আটকা পড়ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সুপেয় পানিকে নিয়ন্ত্রনে নিতে যাচ্ছে বিদেশী কর্পোরেটরা- এটাই আমাদের ভবিষ্যত।
এতে কয়েক ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে-
ক) সুপেয় পানি নিয়ে একটা কৃত্তিম সংকট আসন্ন।
খ) দেশের নিচে গ্যাস আছে। কিন্তু বিদেশী কোম্পানিরা সেই গ্যাস উত্তোলন করে ফের বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করছে। ঠিক তেমনি দেশে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি আছে, কিন্তু জনগণ সেটা ব্যবহার করতে পারবে না, বিদেশীদের কাছ থেকে সেটা কিনে ব্যবহার করতে হবে।
গ) অযাচিত প্রকল্পের নামে বিদেশী ইনভেস্ট আনায় বাজেটে চাপ বাড়বে, জনগণের দৈনন্দিন খরচ বাড়বে।
ঘ) সুপেয় পানির মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাবে।
ঙ) পানির উপর বিদেশীরা বিভিন্ন নিয়ম কানুন আরোপ করায় একদিকে কৃষিতে সমস্যা হবে, অন্যদিকে তা দেশী শিল্পায়নে বাধার সৃষ্টি করবে।